চতুর্থ সেটে জয়সূচক পয়েন্টটি পাওয়ার পর দুই হাতে মুখ ঢেকে বেসলাইনে শুয়ে পড়লেন রাফায়েল নাদাল। ১৩তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের আনন্দে ভেসে যেতে যেতে একটু স্বস্তির অনুভূতিও কি আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল তাঁকে! মনে পড়ছিল গত বছরের সেই দুঃসহ স্মৃতি! বাড়িতে বসে টেলিভিশনে দেখেছিলেন জোকোভিচকে হারিয়ে অ্যান্ডি মারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের উচ্ছ্বাস। হাঁটুর চোটের কারণে নাদালের ক্যারিয়ার নিয়েই তখন সংশয়।
সাত মাস বাইরে থাকার পর নাদাল যখন ফিরলেন, তখনো বড় প্রশ্ন—সেই নাদালই কি ফিরলেন? কী দারুণভাবেই না এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন এই স্প্যানিয়ার্ড! এ বছর হার্ডকোর্টে টানা ২২ ম্যাচ জিতেছেন, সব কোর্ট মিলিয়ে বছরে তাঁর রেকর্ড অবিশ্বাস্য ৬০-৩। শিরোপা জিতেছেন ১০টি, যার মধ্যে আছে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও এটিপি মাস্টার্স, সর্বশেষ গত পরশু ইউএস ওপেন।
ফাইনালে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর নোভাক জোকোভিচকে উড়িয়ে দিলেন ৬-২, ৩-৬, ৬-৪, ৬-১ গেমে। নাদাল যে বলছেন, ‘এই মৌসুমই সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আবেগময় অভিজ্ঞতা’, এতে আর আশ্চর্য কী!
গ্র্যান্ড স্লাম জয়ে ছাড়িয়ে গেলেন রয় এমারসনকে, সামনে শুধু পিট সাম্প্রাস (১৪) ও রজার ফেদেরার (১৭)। যেভাবে খেলছেন, তাতে হাঁটুটা বেগড়বাই না করলে এই দুজনকেও পেছনে ফেলতে খুব বেশি দিন লাগার কথা নয়। জোকোভিচও প্রকারান্তরে সেই কথাটিই বললেন, ‘২৭ বছর বয়সী কারও জন্য ১৩টি গ্র্যান্ড স্লাম অবিশ্বাস্য। আমি আগেও বলেছি, এই খেলাটির সেরা খেলোয়াড়দের একজন ও।
এই মুহূর্তে তার অর্জন ও বয়সের কথা মাথায় রেখে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, ও আরও অনেক বছর খেলবে। ’
হাঁটুর ওই চোটের কারণে ২০১২ সালের শেষ অর্ধেকটা কোর্টে নামতে পারেননি নাদাল, খেলতে পারেননি ২০১৩ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও। এতে একটা সুবিধাও হয়েছে। টেনিসের র্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে আগের বছর অর্জিত র্যাঙ্কিং পয়েন্ট ধরে রাখতে হয়। নাদালের সেই দায় নেই।
এর সঙ্গে এ বছরের দুর্দান্ত ফর্ম মিলে এক নম্বর হিসেবে বছর শেষ করা প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলেছেন তিনি। জোকোভিচও একরকম মেনেই নিয়েছেন তা, ‘আমি কীই-বা বলতে পারি! এ বছর ও এত জিতেছে! আমি এখনো এক নম্বর, কিন্তু বছর ধরে চিন্তা করলে ও আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। এক নম্বর হিসেবে শেষ করার সুযোগটাও ওরই বেশি। ’
ফাইনালটি ছিল নাদাল-জোকোভিচের ৩৭তম দ্বৈরথ, উন্মুক্ত যুগে যেটি রেকর্ড। ৩০ ম্যাচ শেষে নাদাল এগিয়ে ছিলেন সামান্য ব্যবধানে (১৬-১৪)।
সর্বশেষ সাত ম্যাচের ছয়টি জিতে সেই হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনেকটাই একতরফা (২২-১৫) বানিয়ে ফেলেছেন নাদাল। এই দুজনের মহাকাব্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস মনে রাখলে ফাইনালটিকেও তো একতরফাই বলতে হয়। দ্বিতীয় সেটটি জিতেছেন, ফাইনালে জোকোভিচের মনে রাখার মতো আর কীই-বা আছে! ও হ্যাঁ, ওই দ্বিতীয় সেটেই একবার জয়ীর ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে উল্লাস করার মুহূর্তটাও হয়তো মনে রাখবেন। ৫৪ শটের অবিশ্বাস্য এক র্যালি জেতার পর দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দেওয়ার সময় জোকোভিচও হয়তো কল্পনাও করেননি, তাঁর এমন অসহায় আত্মসমর্পণে শেষ হবে এই ম্যাচ! তথ্যসূত্র: এএফপি ও রয়টার্স।
নাদালের ১৩টি একক গ্র্যান্ড স্লাম
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ১ ২০০৯
ফ্রেঞ্চ ওপেন ৮ ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮,
২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩
উইম্বলডন ২ ২০০৮, ২০১০
ইউএস ওপেন ২ ২০১০, ২০১৩।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।