সুখের দিনে তোমার কথা ভাবি....দুখের সাথে একলা রয়ে যাই....
চায়ের দোকান সেই ছেলে টা
আমার কাছে আসে,
পৌঁছে দিয়ে কাপটা চায়ের
ফোকলা দাঁতে হাসে।
একট নয় দুটো ছেলে। ওদের ডিউটি হল পুরো বিল্ডিং এর প্রত্যেক টা সেলে চা পৌঁছে দেওয়া। কত আর বয়েস, একজন ১০, একজন ১২। কাপটা টেবিলে রেখে বলে, চা খায়া নেন।
আমি বলি, তুই যা আমি খেয়ে নিচ্ছি। রাজী হয়না, আপনের ঘর থেইকা খালি কাপ হারায় আর আমি মাইর খাই।
চায়ের দোকান সেই ছেলেটা
আমার দেখে কাজ
কাপ হারানোর কানমলাটা
সে খেয়েছে আজ।
এই তুই চা খাস? চোখে শয়তানির ঝিলিক খেলে যায় বলে, মাঝে মাঝে লুকায়ে লুকায়ে খাই। তাহলে এই চা টা খেয়ে নে।
না স্যর খাব না আপনে খান আরাম পাইবেন, কত কাজ করেন। ইয়ার্কি করি, তাহলে সিগারেট খা। আপনে একটা পাগল। আমার টিফিনের প্যাকেট টা গেঞ্জির ভেতর লুকিয়ে নিয়ে চলে যায়।
চায়ের দোকান সেই ছেলেটার
বয়স নাকি দশ,
চায়ের দোকান সেই ছেলেটা
পেটের ক্ষিদের বশ।
তুই স্কুলে যাস না কেন? যাইতাম তো! বাবা ছাড়ায় দিছে। আমার খালি ক্ষিদা পায় যে। আমরা ৫ ভাইবোন। তোর বাবা কি করে রে? বাবা জন খাটে (দিন মজুরী)। মা কি করে? বাসন মাজে।
আমরা গরীব, অল্প খাওয়া রান্না হয় তাই মা এইখানে দিয়ে গেছে। স্কুলে যাবি? না, স্কুলে গেলে বাড়িতে টাকা দিব কি করে!
..........................................................
সারা পৃথিবীজুড়ে শিশু শ্রমিকের সমস্যা প্রবল আকার ধারন করেছে। আফ্রিকার মতো এশিয়ার দেশ গুলোতেও এই সমস্যা রয়েছে। ভারতবর্ষে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪ কোটি। বাংলাদেশেও রয়েছে এই সমস্যা।
প্রতিদিন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নিস্পাপ শৈশব।
শিশু শ্রমিক জন্মের কিছু কারন:
১। শিশুদের দিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটিয়ে নিয়েও তার জন্য মূল্য দিতে হয় বড়দের চাইতে কম। এই কারণে মালিক পক্ষ শিশু শ্রমিক পছন্দ করেন।
২।
দারিদ্র একটি অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ কারণ। শিশুর জন্য অন্ন সংস্থান না করতে পেরে মা বাবা তাদের কাজে লাগাতে বাধ্য হন। শিশুর আয়ও পরিবারে রসদ যোগাতে সাহায্য করে।
৩। কোন কোন পরিবারে সন্তানের সংখ্যা অধিক হওয়ায় দেখা যায় দুএক জনের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ যোগাতে দুএক জনকে আত্মত্যাগ করতে হয়।
৪। বড়সড় পাচার চক্র এই ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে আছে। এরা নান জায়গা থেকে শিশু পাচার করে "কন্ট্রাক্ট ফার্মিং" এ নিযুক্ত করছে। অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিও এতে জড়িত।
শিশু শ্রমিকের ক্ষেত্র:
কৃষিকাজ থেকে শুরু করে ভিক্ষা করানো পর্যন্ত সব জায়গাতেই শিশু শ্রমিক রয়েছে।
ভারতের গুজরাট, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশে তুলো চাষে প্রচুর শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। সমীক্ষা বলে ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিশু গ্রামাঞ্চলে কৃষির সাথে যুক্ত। এছাড়াও রয়েছে নানা রকম কারখানা, ইঁটভাটা, মানুষের বাড়ি, ক্ষুদ্র অসংগঠিত ক্ষেত্র, চায়ের দোকান ইত্যাদি। বাংলাদেশেও নিশ্চই একইরকম, যেমন এখানেও রয়েছে "টোকাই" অন্য নামে।
সরকারের ভূমিকা: ভারতে শিশু শ্রমিক শোষন থেকে শিশুদের মুক্ত করতে সরকার ১৯৮৬ সালে 'শিশু শ্রমিক নিবারন ও নিয়ন্ত্রন' আইন প্রনয়ন করে।
এই আইনকে কঠোর ভাবে কার্যকর করতে ২০০৭ সালে শিশু শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতের সাথে সাথে বাংলাদেশেও শিশুদের জন্য স্কুলে 'মিড ডে মিল' চালু করা হয়েছে যাতে অন্তত একবেলা তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যায়। তবে শক্তিশালী সংগঠিত ক্ষেত্র থাকার ফলে ভারতে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হলেও বাংলাদেশে "শিক্ষার বদলে খাদ্য" কর্মসূচি চরম ভাবে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে শিশুদের স্কুলে ধরে রাখতে এবং পুষ্টি যোগাতে "পুষ্টি বিস্কুট" প্রকল্প চলেছে ২ টা ২টা করে ৪ টি উপজেলায় । আশাব্যঞ্জক হলেও খরচ , মানরক্ষা এবং লোকাল প্রডাকশন - ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো স্টাডি হচ্ছে।
কর্পোরেট সোসাল রেস্পন্সিবিলিটি নিয়ে বেশ কিছু সংস্থা কাজ করার চেষ্টা করছে । এর ভিতর শিশু শ্রমিকদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্কুলের খরচ দিয়ে পড়ালেখায় নিয়োজিত রাখার কাজ চলছে ।
এত সত্বেও শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয় নি। এর কিছু বাস্তব প্রতি বন্ধকতা রয়েছে। দেখা গেছে শিশু শ্রমিক একেবারে নিষিদ্ধ হলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
যা খাওয়া জুটত তাও জোটেনা। সরকার চেষ্টা করছেন যাতে শিশু শ্রমিক পুরোপুরি বন্ধ না করে তাদের জন্য কিছু করা যায়। খোলা হয়েছে শিশু শ্রমিকদের জন্য স্কুল। কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অনেক এন জি ও এদের নিয়ে কাজ করছে।
এর বাইরে কি ভূমিকা নেওয়া যেতে পারে: বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো তাদের উৎপাদিত বিলাসদ্রব্য গুলির দামের সাথে ১ টা বা ২ টাকা যোগ করে সেটা কাজে লাগাতে পারে এই শিশুদের উন্নয়নে। আপনি আপনার বাড়ির কাজের ছেলে বা মেয়েটিকে (যদি থাকে) নিয়ম করে স্কুলে পাঠাতে পারেন যাতে ভবিষ্যতে সে নিজের ভবিষ্যত খুঁজে নিতে পারে। স্থানীয় ক্লাব গুলো এলাকা থেকে ন্যুনতম মাসিক চাঁদা তুলে এদের সাহায্য করতে পারে। এতে আপনারও ভূমিকা রয়েছে। দেখবেন যাতে ব্যবসা না হয়ে যায়।
এর বাইরে আপনার আইডিয়া এখানে কমেন্ট আকারে পেশ করতে পারেন।
সবশেষে আপনার সচেতনতা গড়তে পারে একটি শিশুর ভবিষ্যত, দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম। আসুন প্রতিজ্ঞা করি "শৈশব যেন বিক্রি না হয়"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।