আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজনামচা: চাপের মুখে কাজ

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

আমার ক্লাস সিক্সের অংক পরীক্ষার আগের দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে। এমনি নিজের আত্মবিশ্বাস ছিল ছাত্রী খুব খারাপ না। কিন্তু পরীক্ষার দিন সকাল বেলা আগের বছরের প্রশ্ন করতে বসে কিছুতেই পারি না। হঠাৎ করে যেন মাথা খালি হয়ে গিয়েছে।

তারপরে, ভাইয়ার ঘরে এসে ফ্যাচ ফ্যাচা কি কান্না। 'আমি ফেইল করবো, আমি কিচ্ছু বুঝি না'। ভাইয়া দিল ধমক। মুখ ধুয়ে আসতে বললো। তারপরে, দুই ঘন্টা পড়ালো আমাকে, একেবারে ঠান্ডা মাথায়।

কি করে যেন সুন্দর সময় ভাগ করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিভিশন দিয়ে দেয়ালো। পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় মনে হলো খুব খারাপ করবো না। শেষ মেষ পেয়েছিলাম ৯৬। তখন থেকেই একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল--আমি চাপের মুখে কাজ করতে পারি না, ডেডলাইন যত আগায়, আমি তত ভেঙে পড়ি। অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে যাই।

হাত কাঁপা কাঁপি শুরু করে, শুরু হয় 'ফিজেটিং'। প্রোডাক্টিভিটি মাত্রাতিরিক্ত কমে যায়। একটা সাধারন সমস্যা মাথায় ঢুকতে দশ মিনিট লাগে। মাথায় খালি হু হু চিন্তা--এত অল্প সময়, কি করে হবে, পারব তো? সারা শরীর শক্ত, পিঠ সোজা, হাত ঠান্ডা। দুরু দুরু বুক।

নিজের এই জিনিসটা খুব, খুবই বিরক্ত লাগে। আজকে আরও বেশি বিরক্ত লাগছে। শুধু কাজের গতি কমলে হতো, একেবারেই যে থেমে যায়! যখন দেখি আর পারছি না, তখন একটা উদ্ভট কাজ করি। সব কাজ বন্ধ করে বসে থাকি। অজুহাতের পর অজুহাত দাঁড়া করাই কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য।

খুঁজে খুঁজে পুরানো বন্ধুদের সাথে কথা বলি। ম্যাসেঞ্জারগুলোতে লগড ইন থাকি সারা দিন। যাকে মিস করার কথা না, মিস করা উচিত না, তাকে মিস করি। অনেক। আর ঘুম বেড়ে যায় বাড়াবাড়ি রকমের।

সাত ঘন্টা ঘুমিয়েও চোখের পাতা ঢুলু ঢুলু (তাসিনের মতে ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের সাত ঘন্টা ঘুম রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ)। সমস্যা হচ্ছে, যতক্ষন ঘুমাই শুধু স্বপ্ন দেখতে তাকি কাজটা নিয়ে--কাজ শেষ মেষ শেষ করতে পারি নি, পরীক্ষার হলে গিয়ে কিচ্ছু পারছি না। খবরের কাগজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি, নিতান্ত বোরিং খবরগুলোও--মাইনকা চিপার হাওয়ার্ড কিংবা এন্ড্রু জনের ড্রাগ কনফেশন সব নখদপর্ণে। কখনও বাস কিংবা ট্রেইনে অনির্দিষ্ট যাত্রায় চলে যাই। মাথা থেকে সব চিন্তা দূরে ঠেলে।

মনে হয়, একটু 'ফ্রেশ' হয়ে নেই, তারপরে বসবো। সমস্যা হচ্ছে, যত সময় যায়, আমার কাজ শেষ করার ইচ্ছা ততো কমতে থাকে। কারণ তখন 'কাজ শেষ করতে না পারার' সম্ভবনাও অনেক বেড়ে যায়। এনাটমিতে ডিস্টিংশন পেলাম। অথচ সারা সেমিস্টারে যেভাবে পড়েছিলাম, হাই ডিস্টিংশন/ফুল মার্কস পাওয়া ব্যাপার ছিল না।

পাই নি, এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি নার্ভাসনেসের চোটে। ঘুমিয়েছি, পেপার পড়েছি, মিস করেছি আর সমরেশ পড়েছি। এই কাজ গুলো না করলে, যা রিভিশন দিয়েছি, যেভাবে পড়া গুছিয়েছি, তার দশ গুণ বেশি করতে পারতাম খুব সহজেই। এই যুগের খুব দ্রুত চলতে থাকা পৃথিবীতে এই গুণ নিয়ে চলাটা অসম্ভব। জানি, কিছু করতে পারি না।

কোন উপায়ে যদি মস্তিষ্কের বা পাশ থেকে আধিপত্যের চাবি নিয়ে ডান পাশকে দিয়ে দিতে পারতাম! বাঁ পাশের ডমিনেন্টদের অনেক জ্বালা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।