দ্যা ব্লগার অলসো.....
মুখবন্ধ: ইহা একটি আধুনকি রূপকথা। বাস্তবরে সাথে এর মিল না খুঁজিয়া গল্পটি পড়িয়া হাসিবার চেষ্টা করুন। কারন, হাস্য মানবজীবনের উত্তম সম্পদ।
দুই মাতাল একটু একটু করে একবারে কোমায় চলে গেল। তখন তাদের আলাপের বিষয় হল সাহিত্য।
‘আচ্ছা ব্রাদার, তুমি কি রবীন্দ্রনাথ এর ওই উপন্যাসটা পড়েছ?’ প্রথমজনের প্রশ্ন।
‘কোনটা?’
'ট্রিনিট্রি রাশিমালা(!)। ’
‘ও, পড়েছি মানে, অসাধারণ প্রেমের উপন্যাস ছিল ওটা’। দ্বিতীয়জনের মন্তব্য। ‘আপনার কি জীবনানন্দের কথা মনে আছে?’
‘কি বলছো ভায়া, তার কথা কি করে ভুলি, বিশেষ করে তার সায়েন্স ফিকশনগুলো(!), বেচেঁ থাকলে আইজাক আসিমভও হার মানতেন তার কাছে।
’ প্রথমজন বলল। একটু থেমে আবার বলল ‘তো ব্রাদার, মাথায় এলো কিছু ?’
‘বুঝতে পারছিনা, মনে হচ্ছে তৈলাক্ত কিছু। ’
‘মানে?’ অবাক গলা প্রথমজনের।
‘মানে এসেও আবার চলে যেতে চাইছে। পিছলা ধরনের আর কি।
’
‘ঠিক আছে, তাহলে হয়ে যাক আর এক রাউন্ড। এবার আমার তরফ থেকে’
বলল প্রথমজন। ‘এইযে ভাই, আর দুই বোতল’। '
এভাবে সাহিত্যের গায়ে কালি লাগানোর ‘মহান(?)’ কাজ হয়তো আরো অনেকক্ষন চলতো, কিন্তু বাধ সাধল মওলা।
সে ধৈর্য হারাচ্ছে।
সিদ্ধান্ত নিল এবার সরাসরি এদের যেতে বলবে।
টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়াঁল সে, বলল-‘মহোদয়গণের প্রস্থান করিতে মর্জি হউক। ’
‘এ শালা ভাঙা রেকর্ডের মতো একটা বাক্যই খালি আউরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে শালার এক ঘুষিতে দু পাটি দাঁত তুলে নিয়ে মিউজিয়ামে দিয়ে দিই। ’ দ্বিতীয়জনের রাগান্বিত গলা।
‘বাদ দাও ব্রাদার, এতো রাতে মিউজিয়াম বোধহয় খোলা থাকবেনা। তারচেয়ে চল আজ উঠা যাক, দেরি হয়ে গেছে, এতোক্ষনে হয়তো খান্ডারনি আমার জন্য ঝাড়ু নিয়ে রেডি। ’ বলল প্রথমজন।
‘বলছেন কি ব্রাদার, ঝাড়ু!’
‘আকাশ থেকে পড়লেন মনে হচ্ছে? আরে এ তো সামান্য, ওর কীর্তির কথা শুনলে না জানি আপনার কি অবস্থা হয়। একদিন হয়েছিলো কি; বাথরুমে সামান্য দেরি করেছিলাম, সেই অপরাধে আমাকে পুরো পাঁচ ঘন্টা সেই বাথরুমেই আটকে রেখেছিলো সে।
’
‘মাই গড! এ তো সাক্ষাৎ হাবিয়া দোজখের সাথে বসবাস! মাইরি বলছি, আপনার জন্য আমার করুণা হচ্ছে, ঠিক আছে, ব্রাদার, চলুন। ’ সায় দিল দ্বিতীয়জন।
যাবার জন্য পা বাড়াল দুজনে, কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়তে হলো পরক্ষণেই। ‘মহোদয়গণের বিল পরিশোধ করিতে মর্জি হউক’ মওলার বিনীত অথচ কঠিন উচ্চারণ।
‘ও, তাইতো, বিল তো দেওয়া হয়নি’ বলে পকেটে হাত দিল প্রথমজন।
এবং হাত দিয়েই জমে গেল বরফের মতো। আঁতিপাঁতি করে খুঁজল সে সবগুলো পকেট। তারপর মুখ কালো করে বলল-‘মানিব্যাগ বাসায় ফেলে এসেছি’।
‘কোন ব্যাপার না, আমিই দিয়ে দিচ্ছি’ বলল দ্বিতীয়জন। তারপর পকেটে হাত দিল সে এবং প্রথমজনের মতো সেও একই ভঙ্গিতে বলল-‘পার্সটা কোথায় জানি পড়ে গেছে।
’
‘কোন অসুবিধা নেই, কাল সকালে এসে দিয়ে যাব’ বলল প্রথমজন।
‘হ্যাঁ, যখন হারিয়েই গেছে তখন কি আর করা’ সায় দিল দ্বিতীয়জন।
মওলা নির্বিকার, যেন পণ করেছে ধৈর্য হারাবেনা। ‘দেখুন, আমি উচ্চ বংশীয় লোক, কারো ইজ্জতে হাত দেবার মতো গর্হিত কাজ করিবার মর্জি আমার নাই’ গম্ভীর মুখটাকে আরো গম্ভীর করে বলল সে।
‘ঠিক কথা, তাহলে ওই কথাই রইল,’ বলল প্রথমজন ‘আমরা কাল এসে বিল দিয়ে যাব।
কি বলো ব্রাদার?’ যেন সম্মতি চাইলো দ্বিতীয়জনের।
‘অবশ্যই ব্রাদার। মানী লোকের মান রাখা নিয়ে কথা। চলেন ব্রাদার। ’
‘দাঁড়ান!’ বলল মওলা, ওর কন্ঠে এমন কিছু ছিল যেন সামনে ভূত দেখেছে এইভাবে দাড়িয়ে গেল ওরা।
একটু থেমে আবার শুরু করল মওলা ‘বোধহয় আমার ভাষা আপনাদের বোধগম্য হইতেছেনা। কিন্তু এইবার আমি যে ভাষা বলিব, আমি নিশ্চিত, মহোদয়গণ নিশ্চয় তাহা বুঝিতে পারিবেন’।
সেটা আবার কি রকম?’ অবাক গলা প্রথমজনের।
‘বলিতেছি,’ একটু থামল মওলা, তারপর আবার শুরু করল ‘পরনে যা কিছু আছে সব খুলে ফেল্। ’
‘বলে কি!’ একযোগে আঁতকে উঠকে উঠল দুজনে।
‘এই, তুমি আমাদের তুই করে বলছো কোন সাহসে?’ জড়ানো গলায় ধমক ছাড়ল প্রথমজন।
‘যা বলছি তা কর, নইলে পিটিয়ে গায়ের চামড়া তুলে নিব তারপর সেখানে পাঁচ কেজি লবন মাখাব। ’
মওলার চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেল ওরা। ‘দেখুন ভাই....’
‘চুপ হারামজাদা! ‘দ্বিতীয়জনের কথা কেড়ে নিয়ে গর্জে উঠল মওলা ‘যা বলছি তাই কর, নইলে কোটর থেকে চোখ খুলে নিয়ে কাক দিয়ে খাওয়াব। ’
এবার আর দেরি করলনা ওরা, কারণ ওদের মনে হল মওলার হুমকির গ্রাফ যেভাবে উর্ধ্বমুখী হচ্ছে, একটু পরে হয়তো জানে মেরে ফেলার কথা বলবে, এবং খোদা না করুন হয়তো তা করেই ফেলবে।
জুতো, শার্ট, ঘড়ি খুলার পর ফিসফিস করে বলল দ্বিতীয়জন ‘ব্রাদার, প্যান্ট তো নিশ্চয়ই খুলতে হবেনা?’
‘এই কুত্তার লেজ, কি বলছিস?’ হুংকার ছাড়ল মওলা।
গালিটা হিন্দি থেকে কপি করা, মনে মনে ভাবল দ্বিতীয়জন। মাদারি বাংলা ভাষায় এতো ‘মধুর(?)’ সব গালি থাকতে অন্য ভাষার গালি কপি করছে কেন? মুখে বলল-‘না, মানে বলছিলাম, প্যান্ট খুলতে হবে কিনা?’
‘কেন?’ মওলার প্রশ্ন।
‘মানে, একটা সমস্যা’ মিনমিনে সুরে বলল দ্বিতীয়জন, ‘আমি আজ আন্ডারপ্যান্ট পরতে ভুলে গেছি কিনা, এজন্য....’
‘আজ এই শাস্তির পরে জীবনে আর কোন কিছু ভুলে যাবিনা, নে খোল। ’
দুই মাতালকে ‘আদিম যুগের’ পোষাক পরাল মওলা মওলা।
তারপর বলল-‘বেরো এবার। ’
বাইরে ঝরছে আষাঢ় মাসের হুল ফোটানো বৃষ্টি। দ্বিতীয়জন বলল ‘ভাই, বাইরে খুব বৃষ্টি, আমরা একটু পরে যাই?’ দু হাত দিয়ে কোনরকমে নিজের ইজ্জত ঢেকে রেখেছে সে।
ওর অনুরোধে কান দিলনা মওলা, বলল-‘বেরো হারামজাদারা। ’
ছুট লাগাল দুই মাতাল।
তিন
বৃষ্টির বেগ বাড়ছে আর তার মধ্যে হাঁটছে দুজন। ‘আচ্ছা ব্রাদার, আমাদের পরনে তো কিছুই নেই, লোকজন আমাদের দেখে কি ভাবছে?’ দ্বিতীয়জনের প্রশ্ন।
‘ভালো কিছু যে ভাবছেনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। ’
‘পাগল-টাগল ভাবছেনাতো?’
‘সেটা ভাবাই তো স্বাভাবিক। ’
‘তাহলেতো মুশকিল।
’
‘কেন?’
‘যদি ঢিল ছোঁড়া শুরু করে?’
‘ভয় নেই, এই বৃষ্টির মধ্যে ঢিল ছোঁড়ার মতো কেউ নেই। ’
‘ তবে যাই বলুন ব্রাদার, এভাবে এই বৃষ্টিতে ভেজা, আমার কিন্তু খুব এক্সাইটিং লাগছে। ’
খানিক নীরবতা। প্রথমজন ভাবছে এই পোষাকে সে বাসায় যাবে কিভাবে, বউকে বলবে কি। নেশা ছুটে গেছে অনেক আগেই।
চিন্তায় চিন্তায় তার মাথা গরম হয়ে গেল, ঠিক এই সময় দ্বিতীয়জন বলল-‘ইউরেকা! পেয়ে গেছি ব্রাদার! পেয়ে গেছি!। ’
‘কী?’
‘কবিতা, অসাধারন কিছু চরণ মাথায় চলে এসেছে। ’
একে তো এই বেইজ্জতি, তার উপর হুল ফোটানো বৃষ্টি, বউকে জবাবদিহি করবার চিন্তা, সবকিছু মিলিয়ে প্রথমজনের মাথা এমনিতেই খারাপ, তার উপর ওর কবিতার কথা শুনে মেজাজ একেবারে খিঁচড়ে গেল ওর।
‘শুনবেন ব্রাদার, শোনাই?’ দারুণ আগ্রহ নিয়ে বলল দ্বিতীয়জন।
‘আর একটা কথা বলবিতো তোর কবিতা তোর পাছা দিয়ে ঢুকিয়ে দেব।
’ বলল প্রথমজন।
ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল দ্বিতীয়জন। এতো সুন্দর একটা কবিতা কিন্তু শুনবার মতো কেউ নেই, এটা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল ওর।
বৃষ্টির বেগ আরো বেড়েছে। রাতের নিকষ কালো আঁধারে দুজন উলঙ্গ লোক হেঁটে চলেছে।
দুরে কোথাও ক্যাসেট প্লেয়ারে একটা গান বাজছে:
‘আভি জিন্দা হুঁ তো জি লেনেদো, জি লেনেদো,
ভরি বরসাত মে পি লেনেদো !’
শেষ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।