সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রামে। জামালপুরে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। আর মানিকগঞ্জ ও গাইবান্ধায় কমে এসেছে নদ-নদীর পানি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :সিরাজগঞ্জ : জেলায় যমুনার পানি না বাড়লেও থেমে থাকেনি করতোয়া, বড়াল, গুমানী, ইছামতি ও ফুলজোড় নদীর পানি বৃদ্ধি।
ফলে চলনবিলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এদিকে গতকাল সকালে যমুনার পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। জেলায় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল।
পেঁৗছায়নি সরকারি কোনো সহায়তা। যমুনার প্রবল ঘূর্ণাবর্তে কাজীপুর ও চৌহালীতে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘর, চৌহালী উপজেলা অডিটরিয়ামসহ কয়েকটি স্থাপনা।
বগুড়া : পানি বেড়েছে জেলার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে। পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল।
ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল। সারিয়াকান্দির ৮ ইউনিয়নের ২০ গ্রামের আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার চরবেষ্টিত ইউনিয়ন চালুয়াবাড়ী, কাজলা, রোহাইল, কর্নিবাড়ী সম্পূর্ণ এবং চন্দনবাইশা, কামালপুর, কুতুবপুর, হাটশেরপুর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ১২৫ কৃষকের পরিবার।
ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় ফসল তলিয়ে গেছে। লোকজন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
ফরিদপুর : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সদর ও চরভদ্রাসনের পাশাপাশি গতকাল সদরপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে নতুন করে। মানবেতর দিন কাটছে দিয়ারা নারকেলবাড়িয়া, চরনাসিরপুর, চরমানাইড়, ঢেউখালী, আকটেরচর ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবারের।
প্লাবিত এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ দিন কাটাচ্ছে পানিবন্দী অবস্থায়। পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদরপুরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
জামালপুর : যমুনার পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে জেলায়। দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, চর্মসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। গেল ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ সেন্টিমিটার কমলেও গতকাল সকালে তা প্রবাহিত হয় বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গো-খাদ্যের চরম অভাব। চরম দুর্ভোগে বন্যার্তরা। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুড়িগ্রাম : জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে ধরলা নদীর ভাঙনে কুলাঘাট খেয়াঘাটের পশ্চিম মাথা যোতীন্দ্রনারায়ণ গ্রাম থেকে ফুলবাড়ী-লালমনিরহাট সংযোগ পাকা সড়কের প্রায় ৬০০ ফুট বিলীন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে চর যোতীন্দ্রনারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর যোতীন্দ্রনারায়ণ আদর্শ গ্রাম। এ ছাড়া শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ৫, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ : আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার কমলেও প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
এতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। তলিয়ে আছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ও খেত। এর আগে যমুনার সঙ্গে ইছামতী, কালিগঙ্গা, ধলেশ্বরীতে পানি বাড়ে। এতে দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী, বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, জিয়নপুর ও খলসী ইউনিয়নের ইসলামপুর, বাসাইল, মুন্সিকান্দি, জোতকাশি, বেপারীপাড়া, ফকিরপাড়া, রাহাতপুর, চুয়াডাঙ্গা, হাজিপাড়া, কাচারীপাড়া, উত্তরখণ্ড, অহেল আলীর পাড়া, গোবিন্দপুর, নকের আলী মাদবরপাড়া, বাঘপাড়া, মণ্ডলপাড়া, বড়টিয়া, আমতলী, কাটাখালি ও বৈন্যা এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে পানি কমলেও নদীতীরবর্তী ওই এলাকাসমূহে অব্যাহত রয়েছে ভাঙন।
গাইবান্ধা : জেলায় কমতে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তার পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে এখনো বইছে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর ১২ সেমি কমলেও বিপদসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঘাঘট নদীর পানি। তবে করতোয়া ও তিস্তায় যথাক্রমে ৯ ও ৪ সেমি কমে বইছে বিপদসীমার নিচ দিয়ে। তবে এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধে জায়গা করে নেওয়া মানুষ।
রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। প্রশাসন কিছু ত্রাণ সহায়তা দিলেও তা অপ্রতুল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।