আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মান্ধতা: পাগলা কুকুরের জলাতঙ্ক কামড়?

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

আমাদের আশরাফ সাহেব তার আতরাফী দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে ধর্মনিপেক্ষদের বিরুদ্ধে তার গরল উদগীরণ করে ব্লগ উজার করছেন প্রতিদিন। পান্তাভাতে ঘি আর আমদুধে পঁচা কাচালঙ্কার আরক মিশিয়ে সেই সাথে তারই মতো কিছু উন্মাদের, অর্ধোন্মাদের রেফারেন্স সংগ্রহ করে যা করছেন তিনি, তাতে বিবমিষা ছাড়া আর কিছু সৃষ্ট হতে পারে না। সে বিবমিষা কাটিয়ে উঠতে প্রানান্তকর, তারপরও কোনক্রমে কাটিয়ে লিখতে বসেছি। তার রেফারেন্স সম্পর্কে আমার একটাই কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে আমি যদি হিটলারের “মাইন কাম্ফ”এর রেফারেন্স টানি, আর সে রেফারেন্সে যদি আমার নুন্যতম বিশ্বাস থাকে, তাহলে মানবতার, সভ্যতার শেষ চিহ্নটুকো ত্যাগ করে আমাকেও হিটলার তথা হিটলারের অনুসারীদের মতো বর্বর হয়ে যেতে হয়। আশরাফ সাহেব তার পোষ্টে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যখ্যা দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।

ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, যদি হতো, তাহলে আলাদা ব্যাপ্তি, আলাদা আক্ষরিক অর্থ নিয়ে জন্ম হতো না এ শব্দটির । আশরাফ সাহেবকে আতরাফ সাহেব বললে তিনি পছন্দ না করার অধিকার রাখেন, অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হতে পারেন। আমি নিজেও তার এই অপব্যখ্যার প্রতিবাদ করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন নীতিবোধ ও তার সামগ্রিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফারাক থাকে। ওনি ধর্মনিরপেক্ষতা ও তার প্রয়োগের ফারাকটুকু তার সুবিধাসন্মত কয়েকটি উদাহরণে দেখিয়ে ও নিজের পছন্দমতো আরো ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে কাহিনী ফেঁদে বসেছেন।

তার ভেতরে সততার চেয়ে অসততাই বেশী, সুবিধাবাদী চিন্তার নগ্ন প্রয়াস। ওনি যা দেখিয়েছেন, এটা ধর্মনিরপেক্ষতা নয় ররং ধার্মিকদের প্রতি এক কল্পিত নিপীড়ন, যা আশরাফ সাহেব একটি ইসলামী রাষ্ট্রে এ জাতীয় নিপীড়ন অন্যাধর্মাবলম্বীদের উপর চালাতে পারলে পরিতৃপ্ত বোধ করতেন। একই শ্রেনীর নিপীড়ন, দমননীতি অন্যের উপর চাপিয়ে তিনি ইসলামের জয়গান গাইতেন। তার মড়াকান্না অন্যধর্মের হাতে ইসলামকে লাঞ্চিত দেখেই। কিন্তু ইসলাম যদি লাণ্ছিত হয়ে থাকে, তা ধর্মনিরপেক্ষদের হাতে নয়, বরং অন্যধর্মের অবলম্বী তারই মতো চরমপন্থীদের হাতে।

ধর্মের লান্ছনা স্বধর্মের হাতেও যে ঘটে থাকে, তার প্রমান এখন প্যলেষ্টাইনে আল ফাত্তাহ্ আর হামাজের যুদ্ধ, আয়াল্যান্ডে প্রটেষ্টান্ট, ক্যথলিকের যুদ্ধ। আমি ইওরোপীয়ান দেশগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ বলবো না, যদিও তারা এ পথে আমাদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। আমেরিকাও ধর্মনিরপেক্ষ নয়। বুশের 'শয়তানের বিরুদ্ধে অভিযান' কোন ধর্মনিরপেক্ষ বোধ থেকে আসেনি। এসেছে একই ধর্মীয় উন্মাদনা ও আগ্রাসী বোধ থেকে, যে উস্মাদনা আমাদের আশরাফ সাহেবরাও তাদের নিজস্ব ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে লালন পালন ও প্রকাশে প্রয়াসী।

ইউরোপের অনেক দেশ কাগজে কলমে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও, পুরোপুরি নিরপেক্ষ নয়। জার্মানীতে বাভারিয়া ধর্মের প্রশ্নে রক্ষনশীল। অন্যান্য প্রদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি সন্মান দেখানোর জন্যে স্কুল গুলোতে ত্রুশ খুলে ফেলা হলেও এখানে তা পারা যায়নি। হিজাব পড়ে কোন শিক্ষয়ীত্রির স্কুলে আসার প্রতিও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলা যেতে পারে না।

আমার নিজের ধর্মনিরপেক্ষ বোধ তাতে সায় দিতে পারে না। হিজাব পড়ার জন্যে কাউকে বাধ্য করার অধিকার যেমন রাষ্ট্রের নেই, তেমনি হিজাব নিষিদ্ধ করার অধিকারও কারো থাকতে পারে না। তারপরও ইওরোপের দেশগুলোর শাসনতান্ত্রিক কাঠামোতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে শক্ত ভাবেই বসানো হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তার প্রভাবও টের পাওয়া যায়। বিচারের ক্ষেতে আইন আদালত এর সপক্ষেই থাকে।

ধর্মনিরপেক্ষতার যথাযোগ্য যুক্তিগ্রাহ্য সংজ্ঞা কি? ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে এমনি এক শক্তি, এক পথ, দিগন্ত প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী, যার প্রয়োগে একটি চার্চ, মসজিদ বা মন্দির তার অনুসারীদের উপর যে প্রভাব বিস্তার করে থাকে বা করতে পারে, সমাজের উপর সে প্রভাব খাটাতে পারে না। আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার এটাই আসল রূপ, যেখানে প্রতিটি মানুষের ধর্ম পালন ও না পালনের সমান অধিকার। রাষ্ট্র তাতে সহযোগীতা করবে, পরিমন্ডল তৈরী করবে কিন্তু প্রভাব বিস্তার করবে না। এটা এক ধরণের মহান নীতিবোধ, যার প্রয়োগ কিছু কিছু পশু শ্রেনীর মানুষের কারনেই কখনো যথার্থ হয়ে উঠতে পারে নি। যারা সত্যিকারের মানুষ, তারা তাদের লক্ষতে উঁচুতে রেখে পা রাখেন পথে।

ধীরে ধীরে এগিয়ে যান সে পথে। পথের শেষ না হলেও কাছাকাছি আসতে পেরেও পরিতৃপ্ত হন। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূলনীতি হচ্ছে, সে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধর্মানুসারীদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি অটুটু রাখার প্রশ্নে সহযোগী হওয়া। কোথাও যদি সে মুলনীতি ব্যহত হয়, তা সে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞায় নয়। উদাহরণ, আমি আশরাফ সাহেবের চরমপস্থী ও প্রতিক্রীয়াশীল ধর্মানুভুতিকে ঘৃণা করি কিন্তু ধর্মকে ঘৃনা করি না।

কিন্তু আশরাফ সাহেবরা, এ দুটো পার্থক্য মগজে ধারণ করার ক্ষমতা রাখেন না, কারণ ধর্মেন্মাদনা তাদের মগজের প্রতিটি কোষ যে ভাবে দখল করে রেখেছে, সুচিন্তা, বিষদ বিশ্লেষনের ক্ষমতা লোপ পেয়েছে সেখানেই। এ ধরণের পাগলা কুকুর প্রতিটি দেশে দেশেই প্রতিটি ধর্মের ভেতরেই যে বিবেকবোধ রয়েছে, তাকে বর্জন করে উলম্ফন নৃত্যে ধর্মব্যাবসার জাল ফেঁদে মানবিকতাকে বিপন্ন করছে। এরা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবী করে, আমার ঘৃণা হয়! একটি ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মালম্বীরা, যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষরা কি প্রথম শ্রেনীর নাগরিক? না তারা তা নন। ইসলামী রাষ্ট্রে এসব নাগরিক 'দিম্মা'র ছত্রছায়ায় থাকেন। রাষ্ট্রীয় আইনের শাসনে তাদেরকে রক্ষা করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে থাকলেও, মর্যাদাগত দিক থেকে তাদেরকে নীচু শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে গন্য করা হয়।

তাদের অধিকার সীমিত হওয়ার কারণে তাদের সবাইকে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ১) তাদের ঘাড়ে আলাদা ট্যক্সের বোঝা চাপানো হয় ২) তাদের পোষাকের ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়। ৩) সরকারী দ্বায়িত্বপূর্ণ পদে তাদেরকে বহাল করা হয় না। একই জাতীয় সমস্যা একটি রাষ্ট্রে থাকতে পারে,যার রাষ্ট্রধর্ম খ্রীষ্টান। এখানে এলাকার কোনায় কোনায় চার্চ রয়েছে, কিন্তু কথাও একটি মসজিদ বানাতে গেলে সরকারী সমর্থন থাকলেও অধিবাসীদের আপত্তির মুখে পিছিয়ে যেতে হয়।

আপত্তি আসে আশরাফ সাহেব জাতীয় মুসলিম ধর্মান্ধর মতো মতো খ্রীষ্টান ধর্মান্ধদের ধর্মান্ধদের কাছ থেকে। এই আশরাফ সাহেবরাই এদেশ থেকে কাদিয়ানীদের বিতাড়নে জঙ্গী হন, হিন্দু নিধনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। এই ধর্মান্ধদের ধর্ম আলাদা হলেও চরিত্রেগত দিক থেকে একই রকম বর্বর। আশরাফ সাহেব তার নেতিবাচক প্রমানের জন্যে কিছু ধর্মনিরপেক্ষ দেশের উদাহরণ দিয়েছেন। সেখানে নানা ধরণের অত্যাচার, অবিচারের সত্য মিথ্যা কাহিনী ফেঁদেছেন।

সেখানে কোন রেফারেন্সের ধার ধারেন নি। কিন্তু ইতিবাচক প্রমানের জন্যে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নাম তিনি উল্লেখ করেন নি বা করতে পারেন নি। তার মতে ইসলামী রাষ্ট্র কোনটি? সৌদী আরব, আমীরদের কোন দেশ, ইরান? সৌদী রাজতন্ত্রের শোষনের কোন সীমাপরিসীমা আছে কি? এ মাঝে এরাই হচ্ছে আমেরিকানদের সবচে’ প্রভুভক্ত পা-চাটা কুকুর। নিজ দেশে ইসলামভক্ত সৌদীদের প্রকৃত চেহারা ইওরোপের পানশালা আর পতিতালয়গুলোতেই দেখা যায়। ইরানের কথা বলবেন? সেখানে প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকারকে পায়ে দলা হয় প্রতিনিয়ত! ধর্ষিতা বালিকাকে মৃত্যুদন্ড আর ধর্ষককে কয়েক ঘা বেত মেরেই আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হয়! এটা ধর্মীয় কোন পথ নয়, এটা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে ব্যবহার করে নিজস্ব বর্বরতার প্রকাশ, যা কাদিয়ানী বিতাড়নের উন্মাদনার মতোই উলঙ্গ আর বর্বর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.