আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখের মধ্যে শোক !!!

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

বাংলাদেশের বৃহত্তম একমাত্র প্রাকৃতিক সুন্দর্যের লীলাভূমি মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। বৃহত্তর সিলেটের এই পাহাড়ী চির সবুজ বনাঞ্চল যেমনি জীববৈচিত্র বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর তেমনি প্রাকৃতিক বনজ সম্পদের অমূল্য ভান্ডার। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকাটির বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণীর শোভিত নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর এই বনভূমি দেশি-বিদেশী বিভিন্ন পর্যটকদের নিকট পিকনিক স্পট হিসাবেই পরিচিত। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বিখ্যাত পাথারিয়া রিজার্ভ ফরেষ্টের পশ্চিম পাদদেশে এই জল প্রপাতের অবস্থান। বাংলাদেশ সরকার ২০০০-২০০১ সালের অর্থ বছরে ৬২৬·৬৫ একর জায়গা জুড়ে ৩ কোটি ৪৭ ল ৬৬ হাজার টাকা ব্যায়ে ইকোপার্ক স্থাপন কাজ শুরু করে।

২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে শেষ হয় এর কাজ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ৮০ ফুট উচ্চতার একটি পর্যবেণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেষ্টের বিভিন্ন ছড়ার জল এসে একটি ছড়ার মাধ্যমে পাহাড় হতে প্রায় ৮০ ফুট নিচে পড়ে জল প্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই জল প্রপাতকে ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে ইকোপার্ক। প্রতি বছর প্রায় লাধিক মানুষ প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে ছুটে আসেন।

দেশ বিদেশের প্রকৃতি প্রেমিক ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও স্ড়্গুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আসেন সুুউচ্চ পাহাড় শৃঙ্গ থেকে অবিরাম গড়িয়ে পড়া শুভ্র জলরাশি দেখর জন্য। কিন্তু গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এই জল প্রপাতে নেমে। সুবিশাল পর্বতগিরি শ্যামল সবুজ বনরাজি বেষ্টিত ইকোপার্ক প্রবীণ-নবীন, নারী-পুরুষের উচ্ছাস আনন্দ আর পাহাড়ী ঝরনায় প্রবাহিত জলরাশির কল কল শব্দের মধ্যে হঠাৎই যেন ডাক আসে মৃত্যুর এ যেন সুখের মধ্যে শোক। সর্বশেষ গত ২৫ শে মে ঢাকা সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমান (২৩) মৃত্যু বরণ করেন এই জলপ্রপাতে। জলপ্রপাতের আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ছাত্রদের বিষাদ মনে ফিরতে হচ্ছে সহপাঠির লাশ নিয়ে।

এ কোন খেলা প্রকৃতির! কেন এত নিষ্ঠুরতা? কেন এত মৃত্যু? স্থানীয় আদিবাসী খাসিয়া চার্লস মুখীম বলেন, আমাদেরকেও অবাক করে তোলে প্রতিটি মৃত্যু। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন হাটু সমান পানিতে নেমে কিভাবে একটি মানুষের মৃত্যু হয়? রহস্যবৃত্ত মনে বলেন আপনারা ল্যক্ষ করে দেখবেন প্রতিটি মৃত্যুর পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ ফুট দূরে। জলপ্রপাতের মুল ঝরনার মধ্যে। এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা সারাদিন তল্লাশি করেও লাশের সন্ধান পাচ্ছেন না। কিন্তু পরের দিন ঠিকই জল প্রপাতে ভেসে উঠছে মৃত ব্যক্তির লাশ।

গত ২৫ শে মে আনিসুর রহমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। ২৫শে মে হারিয়ে যাবার পর ২৬ শে মে সকালে জলপ্রপাতে ভেসে উঠার পর আনিসের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। তিনি বলেন, আজ হতে হাজার বছর আগে মাধবেশ্বর নামে এক সিদ্ধ সাধক থাকতেন এখানে। তাকে ঘিরে প্রতিদিন আগমন ঘটত পুণ্যার্থীদের। সেই থেকে আজোও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিকট এটি তীর্থ স্থান হিসেবেই পরিচিত।

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আগে যে জল প্রপাতের পানি পান করে মুক্তি পাওয়া যেত অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে, আজ সেই জল প্রপাতে নেমে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তিনি অকপটে এই জল প্রপাতের অপবিত্রতাকেই দায়ী করবেন। জার্নেট খাসিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা বিজ্ঞানের যুগে বসবাস করলেও ধর্মীয় আচার আচরণও মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, এখনও ভগবান মাধবেশ্বরের আশীর্বাদ নিতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর চৈত্র মাসে এখানে আসেন। পাপ থেকে মুক্তি পেতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে বারোনী স্নান করেন এখানে।

তাই এখানে আসা প্রত্যেকেই এই জায়গার পবিত্রতা রা করে চলা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকের অভিমত যাই হোক না কেন জলপ্রপাত এলাকা ঘুরে মনে হচ্ছে ‘জলপ্রপাতের পানিতে নামা নিষেধ’, ‘পাহাড়ে উঠা নিষেধ’ কতৃêপরে এ জাতীয় লিখা সাইনবোর্ডগুলো মেনে চলাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। শখের বসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিপদ সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে আসা প্রত্যেকেই অতি উৎসাহী না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। মাধবকুন্ড এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কতৃপক্ষকেও জলপ্রপাতের নিরাপত্তামুলক দিকগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত কার্যকর পদপে নেওয়া প্রয়োজন।

পরিবার পরিজন ও সহপাঠীদের মতো আমাদেরও ব্যতিত করে প্রতিটি মৃত্যু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।