জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
'সন্ধ্যা আপু, তোমাকে মাঝে মাঝে খু-উ-ব মিস করি। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই মিস করি না। হে হে হে! হোপ য়ু আর ফাইন এন্ড হ্যাপি'।
পিচ্চিটার কাছ থেকে ম্যাসেজ পেলাম অ-নে-ক দিন পরে।
নাম্বার বদলিয়েছে, কিন্তু সুর শুনে চিনে ফেললাম। ওকে ভীষণ ভালবাসি আমি। ওদের প্রজন্মে চিন্তাশীল আর ব্রিলিয়ান্ট মানুষ বাংলাদেশে কম দেখেছি তাই। ম্যাথস অলিম্পিয়াড এবং অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে অংশগ্রহন করে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। বয়সে ছোট হলেও ওকে নিজের চেয়েও অনেক বড় মানুষ মনে হয়।
দেশের মাটিতে বড় হচ্ছে, আকাশটা বিশাল। অনেক দিন পরে ম্যাসেজটা পেয়ে কি যে ভাল লাগল। সেদিন মন প্রচন্ড খারাপ ছিল। অনেক অনেক দিন পরে সিরিয়াস মাথা ব্যথা করছিল। ম্যাসেজ পেয়ে মন ভাল হয়ে গেল অনেকটা।
জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছে। এইচ এস সি দিচ্ছে এবার, পরীক্ষা কেমন হচ্ছে। জবাব আসল এরকম--
'আমার কাল ফিজিক্স একজাম। একজাম ভালই হচ্ছে... শুধু মাঝে মাঝে আমি সাইন কার্ভের উপর নিচে ওঠানামা করি... ব্যাপারটা খুব কষ্টকর। আর আমি আমার য়ুটোপিয়ান স্বপ্নগুলো থেকে ছুটি নিয়েছি।
। আমি সব কিছু বদলাতে পারব না-- এই সত্যটা আমাকে মেনে নিতে হবে। জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায় এভাবে ভাবল। ( দ্যাটস পেইনফুল। এন্ড আই টুক অ্যা ভ্যাকেশন ফ্রম মাই ওল্ড য়ুটোপিয়ান ড্রিমস ।
আই ক্যান নট চেইনজ এভরিথিং এন্ড আই হ্যাভ টু এডমিট দিস ফ্যাক্ট। লাইফটা অনেক সিম্পল হয়ে যায় দিস ওয়ে। )'
ম্যাসেজটা পড়ে চুপ করে বসে ছিলাম অনেক্ষন। জবাব দেই নি এখনও। তুই কি জানিস কত বড় কথা বলেছিস পাগলা? এই কথাটা আমার মনে হয় ইদানিং, মাঝে মাঝে নিজেকে মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়।
সব কিছু আমি পারব না, অনেক কিছু আমি পারব না। আজকে ক্লাসে পলিশ ইহুদি মেয়েটা আর জার্মান ক্যাথলিক মেয়েটার সাথে কথা বলছিলাম। কি যে ভাল লাগছিল! আমাদের তিনজনের পরিবারের মা-ই শক্ত মহিলা। সব কিছু একা হাতে নিয়ন্ত্রন করেন। ওরা বলছিল, ওদের ঘরে ছেলে বন্ধুদের ঢুকতে দেয় না ওদের মায়েরা।
ঘরে ছেলে বন্ধু ঢুকলেও কিছুতেই দরজা বন্ধ করতে দিবে না। শুনে আমি হাসছিলাম খুব। খেয়াল করলাম মানুষগুলোর সাথে আমার অমিলের চেয়ে মিলই বেশি। সেদিন শিয়া সুন্নী দু'জন বলছিল আর পনের বছর আগে শিয়া সুন্নীদের কোন সমস্যা ছিল না। মানুষ জানত ঠিক কে শিয়া কে সুন্নী, কিন্তু শ্রদ্ধা ছিল, ভালবাসা ছিল।
'মুসলিম ব্রাদার সিস্টার' এই বোধটা ছিল। আর আজ? সেক্টেরিয়ান ভায়োলেন্সে মাঝে পূর্ব পশ্চিম বার্লিনের মত দেয়াল তুলে দেয়ার কথা হচ্ছে। আমি চুপ চাপ দেখি আর অসহায় রক্ত ক্ষরনে ভুগি। দেশের খবর একটা একটা পড়ি আর চোখ বন্ধ করে ফেলি। একি শুরু হল আমাদের নিয়ে? এ তো স্রেফ প্ল্যান্ড গেইম।
পর্দার আড়ালের সূতা লাড়ালাড়ি। হাত সূতায় বাঁধা জানার পরেও কি হাতগুলো নিজের ইচ্ছায় নাড়ানো যায়?
কত কিছু, কত কিছু আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে?
মেনে নিতে ইচ্ছা করে। ভ্রু কুঁচকে থাকে, মনে রক্তক্ষরন হতে থাকে। আমি চুপ থাকি। সূতা হাতের মানুষদের লম্ফ ঝম্প দেখি ইউনিতে, দেশে, বিশ্বে, ব্লগে--সব জায়গায়।
নিজের সীমাবদ্ধতা আসলে আমি আজও চিনে, মেনে নিতে পারলাম না...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।