সযতনে খেয়ালী!
কইনিগসভিন্টার, উড়োজাহাজসমউচ্চতা থেকে ভূমি দেখার মতো আনন্দের জায়গা। কষ্ট করে হাইকিং করা লাগবে আরকি! ৬০ ডিগ্রী স্লোপের রাস্তা ধরে শুরু করে উঠতে থাকলে সেটা ৪৫ ডিগ্রী হয়ে একসময় ৩০ এ গিয়ে ঠেকে। রাস্তার কৌণিক দূরত্ব মাপতে মাপতে একসময় পাহাড়ের চূড়ায়!
খুব অল্পপরিমান জায়গা, বেশ ভালো করে সিমেন্ট-লোহা দিয়ে রেলিং ঘেরা। যেন কেউ ইচ্ছে করলেই "গুডবাই পৃথিবী" বলে ঝম্ফ দিয়ে না ফেলতে পারে। তবে কানে কানে বলি, কেউ ওরকম কিছু করতে চাইলে আমাকে আগে একটু আওয়াজ দিয়েন, আমি দেখে রেখেছি এরকম কিছু জায়গা!
বছর খানেক আগের কথা।
সাউথ ইণ্ডিয়ান ভেটরীর সাথে হঠাতই পরিচয় হলো। কালিফোর্ণিয়া থেকে এসেছে। এসেই প্রথমে যে সমস্যায় পড়লো, সেটা ভাষা। কমন একটা জিনিষকে কেন্দ্র করে আমাদের বন্ধুত্ব বেশ ভালোই জমে গেলো। একদিন বললো, চলো কোথাও বেড়াই।
শিল্পোন্নত দেশেতো আর সদ্য কেটে ফেলা ধানের ক্ষেত মিলবে না যেখানে আলের ধারে বসে অন্তত সূর্যাস্তটা দেখতে পাওয়া যায়। দিনের শেষের সাথে সারাদিনের ভার করে থাকা মনের অনুভূতিটুকু ঢেলে দেয়া যায় ঢলে পড়া সূর্য্যের সাথে। বাধ্য হয়েই বললাম, "কইনিগসভিন্টার"!
অচেনা পথ, ঘুরানো রাস্তা- পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো। প্যাঁচানো রাস্তা ঘুরে গাড়ি নিয়ে একেবারে টপে, যেখানে গাড়ি এলাউড না, সেই অবধি। সূর্যাস্ত আর দেখা হয় নি, কিন্তু যা দেখা হলো সেটা হয়তো সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে না আমার, প্রমাণ! আজকে।
ওপরের ছবির জায়গাটা থেকে খানিকটা বাম দিকে শুধুই নীল পাহাড়, বিভিন্ন উচ্চতায়। আকাশটাকে মনে হয় অনেক কাছে। কাছের আকাশে, পাহাড়ের উপত্যকা বরাবর দেখতে পেলাম চাঁদটা ইয়া বড় আকারে ধূসর হলুদ রঙ ছড়াচ্ছে। দৃশ্যটা মোটেও অপ্রত্যাশিত না জানি, কিন্তু যেভাবে দেখলাম সেই দেখাটা একটু হলেও অপ্রত্যাশিত ছিলো আমার কাছে। চাঁদটাকে মনে হয়েছিলো আকাশ থেকে ঝুলে আছে, এবং চাঁদের পেছনে পাহাড়ের উপস্থিতি এমন একটা ইল্যুশন তৈরী করেছিলো যে মনে হয়েছিলো চাঁদটা কেউ যেন একটা ব্যাকগ্রাউন্ডে কৃত্রিমভাবে এঁকে দিয়েছে।
শুষ্ক একটা সন্ধ্যায়, বিটবুর্গারে গাঢ় চুমুক দিয়ে অপার্থিব সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার আশায় আজকেও গিয়েছিলাম সেখানে। বিটবুর্গারের জায়গা নিয়েছে কোকাকোলা-জিরো, বৃষ্টিস্নাত একটা দিন, আর ভেটরির জায়গায় ভেনেসা!
ফেরার পথে কইনিগসভিন্টারের শহরতলীর পুরানো দিনের আদলে ইট বিছানো রাস্তায় হাঁটার সময় সে-ই বলেছিলো, "একটা পারফেক্ট ফায়ারটাগ ছিলো আজ"!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।