টানা হরতাল-অবরোধে সারা দেশে সার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নাব্য না থাকায় নৌপথেও পরিবহন করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে আমদানি করা সার গন্তব্যে পেঁৗছানো যাবে না। আর সারের অভাবে বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, দেশের উত্তরাঞ্চলে ইউরিয়া সার পাঠানোর লক্ষ্যে নদীর নাব্য বজায় রাখার জন্য বিআইডবি্লউটিএকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে শিল্প সচিব বরাবর চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সচিব আবদুস সালাম খান। ২৫ নভেম্বর লেখা এক চিঠিতে বলা হয়, সার পরিবহনের সহজলভ্যতা বিবেচনা করে সাধারণত নৌপথেই ঠিকাদাররা সর্বাধিক পরিমাণ ইউরিয়া সার পরিবহন করেন। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও নদীর কাঙ্ক্ষিত নাব্য বজায় রাখার জন্য ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
বৃহত্তর সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আবাদ হচ্ছে বোরো মৌসুম। বোরো ধান ঘরে তোলার পর হাওরাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে পড়ে যায় আনন্দের সাড়া। তবে সারের অভাবে তাদের ওই আনন্দ এবার ফিকে হয়ে যায় কি না, তা নিয়েই এখন উদ্বেগ বেশি। হরতাল-অবরোধের কারণে এরই মধ্যে সারের সংকট দেখা দিয়েছে এলাকায়। কিছু দোকানে সার পাওয়া গেলেও পরিবহন খরচের অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন।
উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার বলে খ্যাত সিরাজগঞ্জ ও চলনবিলেও পুরোদমে বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সার নিয়ে। সময়মতো সার পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে বেশির ভাগ কৃষকের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বোরো আবাদে তিন কিস্তিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। সময়মতো সার না পেলে ধানের ফলন ভালো হবে না।
বিসিআইসি জানায়, বোরো মৌসুমের জন্য ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা প্রায় ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন সার উত্তরাঞ্চলে বাফার গুদামে পাঠানো হবে। সংস্থার নিজস্ব ঠিকাদাররা এ সার পরিবহন করবেন। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে পাটুরিয়া, আরিচা, কাজির, পেঁচাখোলা, নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌ চ্যানেলে নাব্যের অভাবে কার্গো চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। আর এ জন্য সময়মতো ড্রেজিং করা না হলে নৌপথে সার পেঁৗছানো কঠিন হয়ে পড়বে। সংস্থাটি আরও জানায়, এখনো নদীগুলোয় নাব্য থাকায় সার পাঠানো যাচ্ছে। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পানি কমে গেলে সমস্যা আরও বাড়বে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে যে চ্যানেলগুলো দিয়ে কার্গো চলাচল করে শুষ্ক মৌসুমে তার অনেক জায়গায় নদীর নাব্য কমে ৪ থেকে ৫ ফুটে চলে আসে। কিন্তু সারভর্তি কার্গো পরিবহনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ফুট নাব্য দরকার। কর্মকর্তারা জানান, আগে নৌপথে উত্তরাঞ্চলে সার পরিবহনের পরও দেশের অন্যান্য এলাকায় (যেখানে নৌপথ নেই) রেল ও সড়কপথে সার পরিবহন করা হয়েছে। কিন্তু রেলপথও এখন আর নিরাপদ নয়। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বোরো মৌসুমের জন্য প্রয়োজনীয় সার কৃষকের হাতে পেঁৗছানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বোরো আবাদ থেকেই দেশের সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়। তাই খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ আবাদকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩৪৯ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বোরো আবাদ থেকেই পাওয়া গেছে প্রায় ১৮৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য। পরের বছরেও প্রায় সমপরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে ইউরিয়া সার ব্যবহৃত প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন। যেখানে মোট সার লেগেছে প্রায় ৪১ লাখ মেট্রিক টন। পরের বছরও প্রায় সমপরিমাণ সার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এবার কি সেই পরিমাণ সার কৃষকের হাতে পেঁৗছাবে? বিআইডিএসের মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে বোরো মৌসুম থেকে। তাই খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ আবাদ গুরুত্বপূর্ণ। আবার বোরো আবাদের বৈশিষ্ট্য হলো সঠিক সময় সেচ ও সার দিতে হয়। তা না হলে উৎপাদন কমে যায়। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কৃষকরা যদি সময়মতো তাদের ক্ষেতে সার দিতে না পারেন, তবে নিশ্চিতভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।