অতিশয়োক্তিতে বাঙালি পিছিয়ে নেই মোটেও। বরং তাদের উৎসাহ বেশী তাই সঠিক ইতিহাস চর্চার জন্য একক ব্যাক্তির শরনাপন্ন হওয়া দুস্কর। মুজিবের মৃতু্যর 30 বছর পরও একটা পূর্নাঙ্গ জীবনি আসে নাই, এক পক্ষের মানুষের কাছে দেবতার আসন পাওয়া মানুষটা অন্য পক্ষের কাছে ভীষন রকম অপরাধী একজন। একটা বস্তুনিষ্ট নিরপেক্ষ জীবনি রচিত হলে অন্তত সবার সামনেই একটা নিদর্শন থাকতো বিচার করার জন্য।
ব্যাক্তি হিসেবে মুজিবকে মুল্যায়ন করা, তার রাজনীতিকে মুল্যায়ন করা, সব কিছুর জন্যই একটা জীবনিগ্রন্থের প্রয়োজন ছিলো।
15ই আগষ্ট নিয়ে উলম্ফন চললেও এই জায়গাতে মানুষজন একেবারে স্থবির।
1953 সালে আওয়ামী মুসলীম লীগের সাধারন সম্পাদকের পদ পাওয়া, এবং যুক্তফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের মন্ত্রিত্বের পদ পাওয়া , এভাবেই ছাত্র রাজনীতি থেকে প্রাদেশিক রাজনীতির নেতা হিসেবে মুজিবের উত্থান। 1955 থেকে 1958 পর্যন্ত সংসদে বিভিন্ন সময়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বার প্রাপ্য সম্মানের দাবি জানিয়ে বক্তৃতা রাখা মুজিব এক সংসদিয় বক্তৃতায় পূর্ব পাকিস্তানের বদলে পূর্ব বাংলা বলে অভিহিত করার অনুরোধ জানান, তার ভাষ্য মতে পূর্ব বাংলা বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারন করা একটা সম্বোধন, এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্ব ীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানানো, এবং এই প্রশ্নে গনভোটের অনুরোধ জানিয়ে রাখা মুজিবের ভবিষ্যত বাংলার সাথে জুড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক ছিলো।
58তে আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের পর সংসদকে বাতিল ঘোষনা করা হলো। সংবিধান যা তৈরি হওয়ার পর্যায়ে ছিলো তাকেও বাতিল ঘোষনা করা হলো, মুজিব স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ তৈরি করলেন,
1963তে সোহওয়ার্দির মৃতু্যর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভার পেলো মুজিব।
এত দিন বিভিন্ন ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনা করে মুজিবের ভেতরেও সমাজতন্ত্রের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয়, এবং পার্টির নেতৃত্ব গ্রহনের পরপরই আওয়ামী মুসলীম লীগের মুসলমানিত্ব ছেটে ফেলে মুজিব একটা অসামপ্রদায়িক প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেললেন।
মুজিব 1964 র নির্বাচনে ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত , নির্বাচনের 2 সপ্তাহ আগে 1 বছরের কারাদন্ডের নির্দেশ, এবং বাঙালি নিষ্পেষন সব মিলিয়ে 66 র 6 দফার ঘোষনা, এটা তৈরি হচ্ছিল আসলে অনেক দিন ধরেই, বাঙালির টাকায় পশ্চিম পাকিস্তানের বিত্তবৈভব বেড়ে উঠা, এবং সব জায়গায় সমান সুযোগ না পাওয়া বাঙালিরা 6 দফার পক্ষে সমর্থন জানায়।
[লিংক=যঃঃঢ়://িি.িংড়সবযিবৎবরহনষড়ম.হবঃ/শশশ/ঢ়ড়ংঃ/12215][/লিংক]
এই 6 দফার আন্দোলন দানা বাধতেই আর্মি মুজিবকে গ্রেফতার করে, এবং এর 2 বছর পর তার বিরুদ্ধে দেশ ভাগের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তার বিচারের ব্যাবস্থা করা হয়। অবশ্য তা সমল হয় নি, ছাত্ররা 11 দফা দাবি নিয়ে সামনে এলো, এবং এই আন্দোলন তুঙ্গে উঠার পর আইয়ুব খানের পদত্যাগ, মুজিবের মুক্তিলাভের ঘটনা, সব মিলিয়ে বাঙালির ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলে।
অভিযুক্তদের তালিকা দেওয়া আছে
[লিংক=যঃঃঢ়://বহ.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম/রিশর/অমধৎঃধষধথপড়হংঢ়রৎধপুথপধংব][/লিংক]
ডিসেম্বরের 5 তারিখ 1969এ মুজিবের ঘোষনা হলো, এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তনকে বাংলাদেশ বলা হবে।
70 এর নির্বাচন সহ বাকি বিষয়গুলো পাওয়া যাবে অমি রহমান পিয়ালের ধারাবাহিক ইতিহাসের পাতায়, তবে 26শে মার্চ পাকিস্তানের আর্মির দ্্বারা বন্দি হয়ে পাকিস্তানের জেলে চলে যাওয়া মুজিব দেশে ফেরত আসেন, জানুয়ারির 10 তারিখে, 1972এ।
মুজিব নগরসরকারের প্রধান ছিলেন স্যৈদ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রি ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, শেখ মুজিব প্রত্যাবর্তনের পর 12ই জানুয়ারি তাজউদ্দিনকে সরিয়ে দিয়ে মুজিব প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহন করেন। যদিও মুজিব প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তার অবর্তমানে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর পরও এই অবিবেচক সিদ্ধান্তের পেছনে ধারনা করা হয় খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং তাজউদ্দিনের ভেতরের দ্্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল ছিলো।
খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিছুটা ডান ঘেঁষা, মুসলিম লীগের চেতনধারন করতো এবং তাজউদ্দিন আহমেদ মূলত বাম ঘেঁষা রাজনৈতিক, এই প্রথম সংঘর্ষে খন্দকার মোশতাকের বিজয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থিদের অগ্রগতির অশুভসূচনা।
মুক্তিবাহীনি বিলোপের একটা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিলো, শেখ মুজিবের ধারনা ছিলো বাংলাদেশ রাজনৈতিক আদর্শে সুইজারল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ দেশ হবে।
যদিও পরাশক্তিদের মধ্যে রাশিয়াই বাংলাদেশকে প্রথম সমর্থন জানিয়েছে, পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ কুটনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন দেশগুলো বাংলাদেশকে স্ব ীকৃতি দেয় নি, তবুও বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।
তবে শেখ মুজিবের এই নিরপেক্ষ এবং জোটবিহীন দেশ গড়ার স্বপ্নে প্রথম বাধা আসে কতিপয় মুক্তিবাহীনির সদস্যদের ভেতর থেকে, পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর যেসব যোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছইলো এবং অনিমিত যোদ্ধাদের ভেতরে যারা বিভিন্ন সেক্টরে সক্রিয় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছইলো তাদের কিছু অংশ নিয়মিত সৈন্যবাহিনী বিলোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে। সুতরাং বাংলাদেশে নিয়মিত সৈন্যবাহিনী থাকার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো এবং ভারত 17ই মার্চ এই নিয়মিত সৈন্যবাহিনীর হাতে দেশের নিরাপত্তার ভার প্রদান করে বাংলাদেশের ভূখন্ড ছেড়ে যায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতিয়তাবাদ, গনতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র এই চারটি মূল নীতি গৃহীত বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি হিসেবে, মুজিব সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত করার পরিকল্পনা গ্রহন করলেন, পাকিস্তানি ব্যাবসায়ীরা যেসব কারখানা ও প্রতিষ্ঠান রেখে গিয়েছিলো তাদের কতৃত্বগ্রহনের পর তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তিও রাষ্ট্র অধিগ্রহন করে, রাষ্ট্রের দরিদ্্র কৃষক ও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানউন্নয়নের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। 1973 সালে সংবিধানমোতাবেক নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহন করলো স্বাধীন বাংলাদেশে, এবং পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনা গৃহীত হলো।
তবে এইসময়টাতে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও মুজিব ক্রমাগত ডানপন্থি হয়ে উঠছেন, তার ভাষনসমুহে পরিচিত জয় বাংলা শ্লোগানের বদলে ইসলামি শ্লোগান উঠে আসছে, এবং ভাষনের সমাপ্তিতে জয় বাংলা না বলে খোদা হাফেজ বলার রীতি শুরু হচ্ছে,
1972 সালে নিষিদ্ধঘোষিত ধর্ম ীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে আবার খুলে দেওয়া হলো, মদ এবং জুয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো, এবং এই ধারাবাহিক পালাবদলের এখটা পর্যায়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হলো।
রাষ্ট্রায়ত প্রতিষ্ঠানসমুহের পন্যবিক্রয়ের মুনাফা ছিলো না, এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির গের টানছিলো সরকার, শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য কখনও কখনও রাষ্ট্রের তহবিল থেকে ভাতা দেওয়া শুরু হলো, এবং একটা দুর্ভিক্ষ মাথা চাড়া দিচ্ছে, 74এর মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ, দেশব্যাপি ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর উত্থান, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রানিত দলগুলোর সাংগঠনিক ক্ষমতাবৃদ্ধি, একটা পর্যায়ে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারনের ব্যার্থতা, এবং আইন শৃংখলার অবনতি, গুপ্তহত্যা, অশান্ত পরিস্থিতিতে দেশে বাকশাল গঠিত হলো এবং মুজিব নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
দিনটা জানুয়ারির 25 তারিখ, 1975 সাল,এর পরও আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, বাংলাদেশের সৈন্যবাহিনীর ভেতরের অন্তঃকলহ এবং ট্রেইন ড এবং নন ট্রেইনড অংশের ভেতরের সংঘাত, এবং একদল বিদ্্রোহী সৈন্যের হাতে মুজিবের নির্মম হত্যাকান্ড, অবশেষে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহন। বাংলাদেশে মুজিবের শাসনকাল ছিলো 40 মাসের মতো সময়।
এই সময়ের গৃহীত সিদ্ধান্ত সমুহ এবং করে যাওয়া ভুল সমুহের জের টানছে এখনও বাংলাদেশ, এই সময়ের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সমুহের উপর এবং জাতিয়তাবাদ ঘোষনার ফলে বিভিন্ন উপজাতিয় জাতিসত্তার ভেতরের সংঘাতের বিষয় নিয়ে পরবর্তিতে পূর্নাঙ্গ লেখা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।