facebook/humayun.torab
সুশ্মিতা সাদিয়ার ডাইরি থেকে.............
পৃষ্ঠা ১৩০
বুধবার
বাহিরে ঝিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে ।
আমার পড়ার টেবিলটা ঠিক জানালার পাশে,তাই খুব সহজেই বৃষ্টি ছুতে পারি ।
হাত বাড়ালেই বৃষ্টির পানি আমার হাতে এসে পড়ে।
গত বছরের শুরুর দিকের কথা,আমি তখন আমি ক্লাস টেনের ছাত্রি,ঢাকা শহরের মেয়েদের সবচেয়ে ভাল ও নামকরা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী হিসেবে পরিবারে আমার শুনামের অভাব নেই,ভালো ছাত্রী শুনামে ভালই যাচ্ছিলো জীবন।
হটাত করেই "রবি" নামের এক মুঠোফোন কোম্পানি একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম খুলে circle ।
আমি তখন একটা আইডি খুলি sHuShmitTa নামে ।
খুলে ভালই চলছিল ,
নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছিল ।
ফেবুতে অপরিচিতদের সাথে কথা না বলার কারনে অপরিচিত সবসময়ই অপরিচিত রয়ে গিয়েছিল । মানুষকে জানার একটা ভালো মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় এটি ।
আমার বহু ছেলে এবং মেয়ের সাথে পরিচয় হয় ।
নানা মানুষের নানা রুপ দেখে আমি অভিভুত হয়ে পড়ি ।
একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয় ।
circle এ Rajprodip নামে লিখত ।
তার পাঠানো প্রথম poke এর কথা আমার আজও মনে আছে ।
"Bristy hosse,khichuri kheyeso?"
আস্তে আস্তে ছেলেটার সাথে আমার কথা হয়,
নাম জানতে পারি,
চলে পোক এর পর পোক ।
ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলতে এতটাই পছন্দ করে ফেলি যে ফেবু পড়ালিখা সব বাদ দিয়ে তার সাথে পোকাপুকি করতাম ।
ছেলেটা আমার ফোন নাম্বার নেয়,
ওহ,লিখতে ভুলে গেছি ছেলেটার নাম "পলাশ " ।
রবি ফ্রি circle সুবিধা বাতিল করে দিলে আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি,রবি সিম পালটিয়ে বাংলালিংক ব্যবহার শুরু করি,৫ টাকাতে ৫০০ এস এম এস কিনে মেসেজিং শুরু হয়,কত রাত, কত সময়, কত নিরঘুম কাল কেটেছে কে জানে ??
বন্ধু থেকে তাই ভালবাসার মানুষ হতে বেশী সময় লাগে নি,
ওর সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই ফেবু ওফ করে দেয়,
পলাশ নিষেধ করেছিল,আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে কিছুই গায়ে লাগেনি,
পরিচয়ের পর প্রায় ৬ মাস পর আমি পলাশের সাথে দেখা করি গুলশানে,
এক সাথে খাই ওয়েস্টিনে,
ভালবাসার মানুষের হাতের প্রথম স্পর্শ আমার আজও মনে আছে,
আমার গায়ের প্রতিটি লোম দাড়িয়ে গিয়েছিল,
পলাশের আলতো স্পর্শ আমার জীবনে যে ঘূর্ণিঝড় তুলেছিল তার প্রলয়লীলা আজও রয়েছে আমার শরীরে ।
তারপর আমরা বার বার দেখা করি,
নভেম্বর মাসে ৩ বার,
ডিসেম্বরে ৫ বার ।
এবার আমরা দেখা করি উত্তারাতে,
আব্দুল্লাহপুর থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুইচ গেত,তারপর আরও ৩০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে পলাশের বন্ধুর বাসা ।
আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে কিছুই গায়ে লাগেনি,নিজেকে বিছানায় সপে দিতে তাই দ্বিতীয়বার ভাবিনি,
আমি তখন ভাবতাম আমিতো আমার স্বামীর জন্যেয়,
তার সম্পদ তাকেই তো তুলে দিচ্ছি ।
আমি নিজে থেকেই কখনো তার কথাতে বারবার গিয়েছি নাম না জানা পলাশের বন্ধুর বাড়ি ।
এর মধ্যে আমার এস এস সি এক্সাম শুরু হয়,
এক্সাম শেষে আমি দেখা করি আবারও ।
আমাদের সব শেষ দেখা হয় মার্চ মাসের ১৬ তারিখে,
উত্তরায়,
সাদা রঙের বিছানার চাদরের উপরে।
ভাগ্যের পরিহাস বোঝা বড় দায় ।
মেডিসিন নেবার পরেও আমার menses ওফ হয়ে যায় ।
দোষ আমার ভাগ্যের না ওষুধের ছিল আমি জানিনা।
নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রায় ১৫ দিন আমি menses এর অপেক্ষা করি ,
তারপর আমি পলাশকে কথাটা বলি ।
"আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখসি"
কথাটি বলে পলাশের ফোন অফ হয়ে যায়,
৪টি সিম সব গুলো ওফ ।
তখন আমি বুঝতে পারি আমি পলাশ সম্পর্কে কিছুই জানিনা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র,
থাকে সাভারের একটি মেসে ।
আর ৪টি ফোন নাম্বার ।
আর কিছুই না ।
আর ভালবাসার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ছিল বলে হয়তো কিছুই গায়ে লাগেনি ।
তারপর দিন যেতে থাকে,
আমি নিজেকে গুটাতে থাকি আর নাম্বার গুলতে ফোন দিতে চেষ্টা করি,
ফোন আর কখনো ধুকেনি ।
মাঝে মাঝে ভাবতাম আবির সামিয়ে নামের আমাদের ২টি ছেলে মেয়ের নাম কেন ঠিক করেছিল পলাশ ???
সব শেষে আমি আমার এক খালাত ভাই এর বন্ধু "রিশাদের" যে ঢাকা মেডিকেলের কলেজের ছাত্র, তার কাছে সব কিছু খুলে বলি,
তার সাহায্য চাই,
আমার কথা শুনে তিনি আমাকে বলেছিলেন
-তোমার সব সমস্যার সমাধ্যান আমি করে দিব ,
বিনিময়ে আমি কি পাব ??
তার চোখের দিকে আমি তাকিয়েছিলাম,
ছেলেটির চোখের ভাষা ছিলো আমার পরিচিত ।
কত বার আমি দেখেছি এ ভাষা পলাশের চোখে ।
শেষ বার চাদরের রঙ ছিল সাদা,
সে দিনের চাদরে ছিল হাল্কা হলুদের মাঝে লাল লাল কিছু ছোপ ।
নাহ,আমি রাগ করিনি,
৫০০০ টাকা সে আমার পিছে খরচ করেছে,
আমি তো মাত্র ৫ মিনিট।
আমি আসলেই রাগ করিনি "রিশাদের" উপরে।
উপকারের বিনিময়ে কিছু নেয়া কি দোষের ??
৯ তারিখ আমার রেজাল্ট দিয়েছিল,আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি,
আমি এখন বুঝি আমার শরীরে যে জীবন ছিল সে আর নেই,
আমি তাকে খুন করেছি,
নিজের প্রতি ঘ্রিনা আর ধিক্কার নিয়ে বেচে আছি গত ১মাস থেকে,
মাঝে মাঝে মনে চাই গায়ের চাম্রা গুলো ছিড়ে ফেলতে,
বুক হতে সারা শরিরের চামরা ছিলে ফেলতে ।
জীবনে বেচে থাকতে হলে নিজের প্রতি ভালবাসা থাকতে হয়,
আর নিজের শরীরকে এবং জীবনকে ঘ্রিনা করে বাচা যায় না ।
আমি আমার পরিনিতির দিকে এগুচ্ছি,
আমার মৃত সন্তানের কাছে ।
পৃষ্ঠা ১৩৮
ডাইরি এখানেই শেষ ।
মুখবন্ধ -
আমি সাহিত্তের দাস,ইতিহাসের নহে।
কয়েক দিন আগে আমার এক পরিচিত মানুষের জিএফ প্রেগ্নেন্ট হয়ে পড়লে হাজার খানেক টাকা খরচ করে পেট পরিষ্কার করেছে মেয়েটা আর ছেলেটা মিলে,
সত্যি বলছি খুব কস্ট পেয়েছি,
এত সহজে মানুষ খুন করা যায়।
আমি ছেলেটির সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি,
এ ধরনের ছেলেরা বেশ্যা *** পারে,কিন্তু বাপ হতে লজ্জা পাই,
বাপ মায়ের বেজন্মা সন্তান ।
আমার এক চাচা আমাকে বলেছিল,
সন্তান কখনো অসুস্থ হয় না,
অসুস্থ হয় তার বাপ-মা ।
আসুন আমরা জাগি,
নতুবা আগামিকাল আপনার মেয়ে অথবা আপনার বোন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।