আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্লিপ্ত ক্ষারীয় দ্রবণ, পর্ব 3

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

রিকশা থেকে এপর্যন্ত আমরা চুপচাপই ছিলাম। দুপুরে শুধু আইসক্রীম খাওয়ায় আমার বেশ েিদ পেয়েছিল, মনে হচ্ছিল সন্ধ্যায় লিসা চলে যাবার আগেই কিছু খাওয়া দরকার। আমিও ঠিক জানিনা লিসা দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়েছিল কিনা।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা পার্কের গেটের কাছে চলে এসেছিলাম। দেখি আমাদের ঠিক সামনেই বার তের বছরের একটি ছেলে আমড়া বিক্রি করছে। ভ্যানগাড়ীতে করে ডাব আর লটকন বিক্রেতাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতণ নিশ্চুপ থাকার পর লিসা আমার দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করল, আমড়া খাবেন? আমি কিছু না বলে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম। লিসা বলে উঠল আপনি খেতে না চাইলে নাও খেতে পারেন।

কোন সমস্যা নেই। আমাকে মুখ ফুটে বলতেই হল যে আমড়া খেতে আমার কোন অসুবিধা নেই। আমার মৌখিক সম্মতি পেয়ে লিসা প্রবল উৎসাহে ছেলেটিকে আমড়া বানানোর নির্দেশ দেয়া শুরু করল। লিসা একমনে বলে চলল কি পরিমাণে কাসুন্দি দিতে হবে, লবন আর গুড়া মরিচের অনুপাত কি হবে। ও আবার একটু কাসুন্দি জিহ্বায় নিয়ে প্রশ্ন করল সেটা কতদিনের পুরানো ইত্যাদি ইত্যাদি।

নির্দেশ দেবার ফাঁকে ফাঁকে লিসা আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি কি দেখছি সেটা বোঝার চেষ্টা করছিল। আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালাম। আমার চোখে তখনো শিশুটির উজ্জ্বল হাসি ভাসছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল।

ল্য করলাম ছুটে চলা গাড়ীগুলো থেকে কয়েকটা এসে পার্কের পার্কিং লটে এসে জড় হতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে সেখানে গাড়ীর ভীর জমে গেল। পার্কিং এর জন্য ক্রমাগত হর্ণের শব্দে জায়গাটা হঠাৎ করে একটা ব্যাস্ত কোলাহলে পরিণত হল। দেখলাম, জগিংয়ের পোশাক পড়া সুঠাম দেহের কয়েকজন মধ্য বয়ষ্ক পুরুষ গাড়ী থেকে নেমেই পার্কের ভেতরের রাস্তায় ছোটা শুরু করলেন। অন্যান্য গাড়ীগুলো থেকে দুজন বেঢপ আকারের মহিলাও নামলেন।

নেমেই একটু দম নিয়ে পার্কের ভেতরে ঢুকে গেলেন। লিসা আমার এই পর্যবেণ ল্য করছিল। আমড়াও ততণে প্রস্তুত। অপসৃয়মান সুঠাম পুরুষগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে আমার কাছে দুপ্লেটে করে আমড়া নিয়ে আসতে আসতে দুষ্টু হাসি দিয়ে ও বলল, আপনারও খানিকটা ওয়েট কমানো দরকার। প্লেট হাতে নিতে নিতে নিজের শরীরের কথা আমার মনে হল।

থলথলে বেঢপ মহিলাগুলোর সাথে নিজের যেন একটা মিল খুজে পেলাম। অত:পর নিজের অজান্তেই বাড়ন্ত ভুরিটাকে পাকস্থলীটার দিকে খানিকটা টেনে নিলাম। লিসা হয়ত আমার এই ব্যাপারটা খেয়াল করছিল। ও মুচকী হাসতে হাসতে আমাকে জিগ্গেস করল আমড়া কেমন হয়েছে। আমি সবে এক টুকরো মুখে দিয়েছি, বললাম ভালো হয়েছে।

যদিও ুধার কারণে আমার পেটে তখন ারীয় নি:সরণ হতে শুরু করেছে, চারপাশের সবকিছুই কেমন যেন তেতো লাগতে শুরু করেছে, এমন কি লিসাকেও। দোতালা বাসে করে বাসায় ফিরছি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাসটা দ্রুত গতিতে ছুটছে। যদিও এই গতিটা আমার জন্য সহায়ক হয়ে উঠছে না। পেটের যন্ত্রণায় দেহের সামনের অংশ এমনিতেই ঝুঁকে আছে আর বাসের গতিজড়তা আমাকে কিছুণ পরপর একটু একটু করে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

তবে এই ঝুকে থাকা অবস্থাতেই আমি ল্য করলাম সামনে ডানদিকের সিটের দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক খানিক বিরতিতে আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকাচ্ছেন। চোখে সুরমা দেবার কারণে ভদ্রলোকের বয়স অনেক কম মনে হচ্ছে। কোলের উপর কিছু একটা ধরে রেখে বাসের গতির সাথে নিজের শরীরের ভারসাম্য রাখার চেষ্টার কারণে লোকটার মুখোভঙ্গিতে ভঙ্গিতে একটা হাস্যকর ছেলেমানুষির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; সেই সাথে যুক্ত হয়েছে চোখের সুরমা। এদিকে পেটের যন্ত্রণাকে উপো করার জন্য আমি নতুন কোন চিন্তা দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। লিসাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে না।

বিদায়টা খুব মধুর না হওয়ার কারণেই হয়ত। সন্ধ্যা পূর্ণ হবার আগেই হঠাৎ করে আমার চলে যাবার ব্যাস্ততায় ও সুখী হতে পারেনি। তবে এত মানুষজনের ভীরে আমারও সেখানে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করেনি। চারপাশের থলথলে মানুষগুলোকে দেখে আমার মধ্যে একধরণের বিবমীষা তৈরী হচ্ছিল। আমি চাইনি লিসাও এই বিবমীষার অংশ হয়ে উঠুক অথবা লিসা আমাকেও এই বিদ্যমান বিবমিষার অংশ ভাবুক।

চোখে সুরমা দেয়া লোকটা আবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। সন্দেহ আর কৌতুহল প্রায়শই একসাথে হাঁটে;ভদ্রলোককেও একই দলের বলে মনে হল। নিজের সন্দেহকে তিনি যেমন লুকিয়ে রাখতে পারছেন না, আবার একইসাথে কৌতুহলও বোধ করছেন। বারবার তাকানোর ফলে খানিকটা বিরক্ত হয়ে আমি মাথা উঁচিয়ে তার দিকে সরাসরি তাকাতেই তিনি চকিতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন আর তখনই একটা লম্বা ঝাকুনি দিয়ে বাসটা থেমে গেল। দুহাতে তাল সামলাতে গিয়ে ভদ্রলোকের কোলে ধরে রাখা প্যাকেটটা বাসের মেঝেতে পড়ে গিয়ে ফেটে গেল।

এরপরই আমি কেবল বুঝতে পারলাম যে প্যাকেটটা নানা রংয়ের ফলে ভর্তি ছিল। ফলগুলো মেঝেতে পড়তেই হঠাৎ খুলে দেয়া নলের পানির মত চারদিকে ছিটকে পড়ে গড়াতে থাকল। ছুটন্ত দোতালা বাসগুলোর মজা হল চলতে চলতে হঠাৎ ব্রেক করলে; থেমে পড়তে পড়তে এগুলি নৌকার মত সামনে পিছনে দুলতে থাকে। থেমে যেতে থাকার ক্রমাগত দুলুনিতে আমার মনে হল যেন এক বিশালাকার প্রাণী অনেকণ ছুটে চলার পর বিশ্রামের জন্য একটুখানি থামল। তবে আরিক অর্থে থেমে গেলেও তার দেহের সজীব স্পন্দন আমি তখনো অনুভব করছিলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।