আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্লিপ্ত ারীয় দ্রবণ, পর্ব 2

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

হঠাৎ লিসা সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, জানেন আজকের দিনটা আমার, শুধুই আমার চোখ সরিয়ে থাই কাঁচের বাইরের রাস্তার দিকে চোখ রেখে আমি বললাম কেন? লিসা ওর স্বাভাবিক উৎসাহে বলল কারণ আজকের দিনটা মেঘলা, দেখছেন না আজকে সকাল থেকে রোদের কোন আনাগোনা নেই। - এরকম দিন আমার খুব পছন্দ, যখন কলেজে পড়তাম তখন এরকম দিন পেলেই আমরা বন্ধুরা মিলে একসাথে বেড়িয়ে পড়তাম, ঘন্টা হিসেবে রিঙ্া ঠিক করে সারাদিন ঘুরতাম। একটু থেমে আমার দিকে তাকিয়ে আরো ঘনিষ্ট স্বরে লিসা বলল, যতণ আমরা একসাথে আছি ততণ দিনটা এরকমই থাকবে।

বিব্রত হয়ে, একটু হেসে আমি সহজভাবে বললাম এরকম দিন আমার ঠিক পছন্দ না, কেমন যেন অলস, নিভুনিভু লিসার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, আমার পছন্দ সূর্য্য, জ্বলজ্বলে সূর্য্য ওঠা দিন। জ্বলন্ত সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে আমার খুব ভালো লাগে, মনে হয় যেন চোখ দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে সারা শরীর স্বচ্ছ করে দিচ্ছে, ভেতরে একটা ওম ছড়িয়ে পড়ছে। আমার কথায় লিসা হেসে উঠল, আর একইসাথে বাইরের ব্যস্ত সড়কে বিকেলের রোদ দারুনভাবে ঝলমল করে উঠল। আমি ভেতরে ভেতরে কিছুটা সুখী হয়ে উঠলাম, আর লিসার সাথে দুষ্টুমী করে বললাম দেখলে তো আজকের দিনটা আসলে আমার। লিসা কপট রাগে হেসে উঠল।

ওর হাসিটা আমার মধ্যে সুর্য্যের চেয়েও তীব্র কোন আলো যেন সঞ্চারিত করল। মনেমনে ভাবলাম এই হাসিটাকেই আমি এতদিন অপছন্দ করে এসেছি? গত দু-বছর ধরে এই হাসিটাকেই আমার নাটুকে বলে মনে হয়েছে? নিজেকে আমার খানিকটা অপরাধী বলে মনে হল। যেভাবেই হোক আমার চিন্তা স্্েরাতের একটি অংশ লিসা যেন বুঝতে পেরেছিল, অভূতপূর্ব মমতা আর লাজুক আত্মপ্রেম নিয়ে ও বলল, জানেন ছোটবেলায় আমার হাসি দেখে নাচের স্কুলের শিক কি বলত? বলত, তোমার নাম লিসা না হয়ে আসলে সি্নগ্ধ হওয়া উচিৎ ছিল লিসার কিছুটা আত্মগর্বী যদিও সরল স্বীকারোক্তিটা আমার ভাল লাগল তবু আমি নিশ্চুপ থাকলাম আমার মনে হল লিসার হাসিটা ছোটবেলায় যেমন ছিল এখন আর ঠিক তেমনটি নেই অনেকটাই পাল্টে গেছে, সেটাই স্বাভাবিক আমি একদম ছোটবেলায় ওর হাসিটা কেমন ছিল তা ধারনা করার চেষ্টা করলাম আমার কাছে খুব স্পষ্ট হলনা আমি লিসার দিকে আরো মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম হঠাৎ করে আমাকে চমকে দিয়ে লিসা জিগ্গেস করল, কি দেখছেন? আমি তাৎনিক কোন উত্তর দিতে পারলাম না। লিসার হাসির মতই নিজের চোখ নিয়ে আমার মধ্যে যে আত্মগর্বী বোধ জেগে উঠতে শুরু করেছিল, চমকে ওঠায় সেটি নিয়ে আমি আর কিছু বললাম না। বরং আরেকটু দুষ্টুমি করার ইচ্ছাতে বললাম, নাচের শিকেরা যে এত হাঁদা হয় তাতো জানতাম না।

লিসা কিছুটা অসন্তোষ নিয়ে হেসে উঠল। হঠাৎ করেই ওর চোখে ঝিলিক দিল প্রায় অস্পষ্ট নাগরিক গণিত। যদিও পর মুহূর্তেই তা মিলিয়ে গেল এবং ভেসে উঠল সরল দুষ্টুমি। আমরা আরো কিছুণ নিশ্চুপ থাকলাম। যখন ভাবছি খাবারের বিল দিতে উঠব, তখন লিসা বলল জানেন আপনার নাম্বারটা মোবাইলে কি নামে সেভ করেছি? আমি জিগ্গেস করলাম, কি নামে? লিসা অত্যন্ত গোপনীয়তার একটা দূর্লভ ভঙ্গিতে বলল, (ওর এই ভঙ্গিটা আমার খুব পছন্দের) মি: স্কলার।

অবশ্য এরও আগে অন্য একটা নামে সেভ করা ছিল। এরপর পুরোপুরি রহস্যময়ী হাসিতে ও বলল, আজকে থেকে নতুন একটা নামে নাম্বারটা সেভ করব। ভেতরে ভেতরে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে উঠে আমি বললাম, তাই নাকি? কৌতুহল আরো তীব্র হওয়ায় জিগ্গেস করলাম, কি নাম দেবে, রৌদ্র্য নাকি রুদ্র? লিসা একটা গোপন হাসি হেসে বলল, সেটাতো আপনাকে বলা যাবে না, তবে রৌদ্র্য বা রুদ্্র কোনটাই নয়, একেবারে আমার নিজের দেয়া নাম এবার আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হলাম, খানিকটা ভালোও লাগল আমি বললাম, তাহলে আর আমাকে জানিয়ে লাভ কি, তুমি যখন নামই বলবেনা লিসা একরাশ মমতা নিয়ে আমার দিকে তাকালো এবং খানিকটা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে বলল, বলল, সবকিছু তো আপনার জানার দরকার নেই। আমি লিসার কথা মেনে নিলাম এবং নামের বিষয়ে আমার কৌতুহল মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। ব্যাপারটা ওর পছন্দ হল কিনা বুঝতে পারলাম না বিল দেবার জন্য আমি দাঁড়াতেই ও বলল, চলুন ওঠা যাক, আজকের বিকেলটা খুব সুন্দর, এমন সুন্দর বিকেল ্এখানে বসে নষ্ট করা ঠিক না।

আমি ওকে রিঙ্ায় করে ঘোরার প্রস্তাব দিলাম লিসা সচ্ছন্দে মেনে নিল কাউন্টারে বিল দিতে দিতে,আমার মনে হল মেয়েটির সাথে নানাভাবে আমি জড়িয়ে যাচ্ছি, এভাবে জড়িয়ে যাওয়া কি আমার জন্য ঠিক হচ্ছে? বেশ কিছুণ রিকশায় যেতে যেতে আমার মনে হল এবার একটু হাঁটতে পারলে ভাল হত একটা পার্কের কাছে রিকশা থামিয়ে আমি হাঁটার প্রস্তাব করলাম লিসা জানালো হাঁটতে ওর কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু খুব বেশিণ নয় কারন সন্ধ্যা থেকে ওর ছাত্রীরা আসা শুরু করবে। ওর দ্বায়িত্ববোধ আমাকে আশ্বস্ত করল। পার্কের বাইরের ফুটপাথ ধ'রে হাঁটছি, দুপাশের নাম না জানা গাছের ফাঁক দিয়ে আলো আসছে। পড়ন্ত বিকেলের রোদে ফুটপাথে গাছের ছায়া পড়ছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ডান দিক দিয়ে দুরন্ত গতিতে গাড়ী ছুটে চলেছে ।

সেদিকে বিশেষ মনোযোগ না দিয়ে আমি তাকালাম বাঁ দিকের পার্কের সুঁচালো গ্রিলগুলোর দিকে, সুন্দর সারিবদ্ধ এবং আকাশমুখী। দেখলাম একটু দূরে পার্কের দেয়াল বরাবর একটা আমগাছের তলায় রংওঠা, জীর্ণ পোশাক পড়া পতিতা বাঁ হাত দিয়ে সিগারেট টানছে আর ডান হাতে একটা সুপুষ্টু শিশুকে ধ'রে স্তন্য পান করাচ্ছে। শিশুটি একনিষ্ঠ মনোযোগে স্তন্য পান করে চলেছে, আবার স্তন মুখে রেখেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। শিশুটিকে এবং ছাই রংয়ের আধখোলা স্তনটিকে দেখতে আমি এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে খেয়াল করিনি কখন লিসা আমার দিকে তী্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকাতেই ও চোখ সরিয়ে নিল আর নিজের পোশাক ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

পোশাক ঠিক করার সময় কারো দিকে তাকানো অশোভন জেনেও আমি লিসার দিকে তাকালাম। দেখলাম পোশাকের ফাঁক দিয়ে ওর বাঁ কাঁধের কালো ব্রার স্ট্র্যাপটা বেরিয়ে আছে। যদিও এরপর আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। লিসা সচেতন হয়ে সেটি ঠিক করে নিল। ইতমধ্যে আমরা আমগাছটার আরো কাছে চলে এসেছিলাম।

মহিলার কোলে থাকা শিশুটি আমাদের দেখে ফিক্ করে হেসে উঠল। আমার মনে হল খুব শৈশবে লিসার হাসি বোধহয় এমনই ছিল। মহিলাটি আমাদের এগিয়ে আসতে দেখে আরেকটু ছায়ার আড়ালে যাবার চেষ্টা করল। লিসা দ্রুত পা চালিয়ে আমগাছ পেরিয়ে গেল, আমি চারদিকে তাকিয়ে পূর্বের গতিতেই আসতে থাকলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।