ছেলেটি চিপস আর চকলেট খেতে অনেক পছন্দ করে। প্রতিদিন একটু একটু না খেলে তার হয় না। আজকাল সবকিছুর অনেক দাম। চিপস খেতে গেলেও টাকার হিসাব কষতে হয়। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো দিন দিন অর্থের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
কিন্তু ছেলেটি আবার অন্যরকম। একটু হাত খোলা টাইপ। তেমন হিসাব করে না। নিজের বেলায় ও না, অন্যের বেলায় ও না।
সে বিশ্বাস করে "সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ". গরীব হলে বা পয়সা কম হলে যে সাধ করা যাবে না তা তো না।
যা আয় তা দিয়ে সুখ করবে সে, জমানোর চিন্তা কম। কাল মরে গেলে এই জমিয়ে কি লাভ ?
অনেকদিন হল সে প্রিনগেলস খায় না। অনেক সুস্বাদু কিন্তু বিদেশী বলে দাম টাও চড়া। একটা ১৯০ টাকার মতন। আজ সে চিন্তা করল খাবে।
বাসার সাথেই একটা ডিপার্টমেন্টল স্টোর আছে। সেখানে পাওয়া যায় না এমন কিছুই নাই। টুকটাক দরকারী সবকিছুই আছে। শুকনা খাবার থেকে শুরু করে প্রসাধন সামগ্রী, ঘর সাজানোর জিনিস থেকে শুরু করে ফ্রোজেন ফুড, ছেলেদের আন্ডারওয়ার , মেয়েদের বিকিনি, অথবা ঘরের দরকারী অন্য সব রকম জিনিস, সবই আছে। ওই দোকানে সেই ছেলেটি আবার খুব সুপরিচিত।
কারণ প্রায় সেখান থেকে দামী দামী চিপস আর চকলেট কিনে, সেই সাথে অন্য অনেক কিছু তো আছেই। ভাল সম্পর্ক।
তো ছেলেটি চিপস কিনে দোকান থেকে বের হয়ে খুলে খাওয়া শুরু করল। হটাত ছোট হাফ প্যান্ট পড়া খালি গায়ের একটা মেয়ে শিশু এল আর হাত বাড়িয়ে দিল। ছেলেটি ভাবছে মেয়েটি কি চায় , চিপস নাকি টাকা ? সে কি করবে টাকা দিয়ে ? খাবে ? চিন্তা করছে আর কুরমুর করে করে চিপস চাবাচ্ছে।
এরপর সে জিগ্যেস করল-
কিরে ? চিপস খাবি ?
(মেয়েটি ভয় আর আগ্রহের মিশ্র দৃষ্টি দিয়ে হাত নামিয়ে মাথাটা কাত করে সম্মতি দিল )
ছেলেটি চিপসের কৌটায় হাত ঢুকাল কিছু চিপস হাতের মুঠোয় করে মেয়েটিকে দিবে বলে । পরক্ষনেই ভাবল, মেয়েটাকে একটা চিপস কিনে দিলে তো আরও ভাল হয়। ছেলেটি আবার দোকানে ঢুকল চিপস কিনার জন্য। ১৫ টাকা দামের একটা চিপস হাতে নিয়েই ভাবল - "আচ্ছা যদি গোটা একটা প্রিনগেলস কিনে দেয়া যায় তবে কেমন হবে ! ভাবতেই দারুন লাগে। যদিও টাকাটা লাগবে, কিন্তু সখের দাম তো লক্ষ টাকা !"
যেই কথা সেই কাজ, ছেলেটি চিপস কিনল ১৯০ টাকা দিয়ে।
মেয়েটির হাতে দিয়ে খুলে দিল। মেয়েটির অবস্থা ততক্ষণে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত। সামান্য একটা চিপস কে যে আকাশের চাঁদ ভাবা যায় তা সে দৃশ্য না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ছেলেটির চোখের কোনায় বিন্দু বিন্দু পানি। তবে সে পানি ঢুকিয়ে ফেলার চেস্টা করছে।
কারণ সে কান্না জয় করার চেস্টা করছে। কিন্তু এই কান্নার কাছে মনে হয় তাকে হার মানতে হবে আজ।
আকাশে তখন আশ্বিনের চাঁদ। শরতের আকাশের চাঁদ। ছেলেটি রাস্তায় নেমে পড়ল চাঁদ এ গোসল করবে বলে।
সেই সাথে প্রিনগেলস খাচ্ছে। তার কাছে চিপসের টুকরা গুলোকে কেন জানি চাঁদ এর টুকরা মনে হচ্ছে ! জোস্নার আলোয় সবকিছু চাঁদময়। ছেলেটির চোখের মাঝে তখন রুপালি সাগরের দোলা .........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।