ভারতীয় চলচ্চিত্র আসছে না। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে একথা জানা গেছে। এমন তথ্যে স্বস্তি প্রকাশ করেছে চলচ্চিত্রকাররা। ২০১০ সালে ইন উইন এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির উদ্যোগ নেয়। সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরের ২৬ এপ্রিল তিনটি কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র আমদানির জন্য এলসি খোলে (এলসি নং-১৬৭৬১০০১০০৭৫)। এতে চলচ্চিত্রকাররা প্রতিবাদ জানালে ২০১০ সালের ১৪ জুন সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি এসআরও জারি করে (নং-২১৯/২০১০)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যে তিনটি বাংলা চলচ্চিত্র আমদানির জন্য ২৬ এপ্রিল ২০১০ সালে এলসি খুলেছিল তা ১৪ জুন নিষেধাজ্ঞা জারির আগের বিধায় তা বৈধ হয়। তা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আমদানিকৃত তিনটি বাংলা চলচ্চিত্র 'জোর', 'বদলা' ও 'সংগ্রাম' সেন্সর করতে আপত্তি জানায়। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে (নং-৫৭৩১/২০১০)। পরে কোর্ট তিনটি চলচ্চিত্র সেন্সরের জন্য সেন্সর বোর্ডকে আদেশ দেয়। তবে রিট পিটিশনে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি তিনটির পরিবর্তে ১২টি চলচ্চিত্রের উল্লেখ করে। এগুলো হচ্ছে_ জোর, বদলা, সংগ্রাম, শোলে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, দিলতো পাগল হ্যায়, থ্রি ইডিয়টস, ওয়ানটেড, তারে জামিন পার এবং কাভি খুশি কাভি গাম। কিন্তু বাংলা ছাড়া এতে অন্তর্ভুক্ত নয়টি হিন্দি চলচ্চিত্রের এলসি সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর অর্থাৎ ২৩ জুন ২০১০ সালে খোলায় আদালত এই নয়টি চলচ্চিত্র সেন্সরের অনুমতি দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি ১২টি চলচ্চিত্র সেন্সরের জন্য যে রিট পিটিশন দাখিল করেছিল তার নম্বর হচ্ছে ৯৯৩৮/২০১০ এবং ১০ অক্টোবর এক পত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে প্রথম তিনটি বাংলা চলচ্চিত্র আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হলেও ১ জুন ২০১০ সালে ঋণপত্রটি সংশোধন করে নয়টি হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে যুক্তি উত্থাপন করে বলা হয়, সংশোধনটি (এসআরও নং-২১৯/২০১০) ১৭ জুন ২০১০ সালের থাকলেও বিজি প্রেস থেকে ওই গেজেট ছাপা হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসে ২৫ নভেম্বর ২০১০ সালে। কিন্তু ব্যাংক থেকে সংগৃহীত এলসির রেকর্ড অনুযায়ী এলসি সংশোধনীর মাধ্যমে অতিরিক্ত নয়টি চলচ্চিত্র এলসিভুক্ত করা হয় আমদানি নিষিদ্ধের পর ২৩ জুন ২০১০ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে। আমদানি নিষিদ্ধের প্রায় দুই বছর পর ইন উইন এন্টারপ্রাইজ নয়টির মধ্যে চারটি হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি করে এবং ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সেন্সর বোর্ডের এনওসির জন্য আবেদন করে। এতে সেন্সর বোর্ড অস্বীকৃতি জানালে আইন মন্ত্রণালয় ৯৯৩৮/২০১০ রিট পিটিশন সম্পর্কিত আদালতের আদেশ ভ্যাকেট করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়। এতে দরখাস্তটির ওপর শুনানির জন্য মামলাটি কজলিস্টে আসে এবং আংশিক শুনানি সম্পন্ন হয়। মামলার কার্যক্রম বর্তমানে মুলতবি রয়েছে।
এ বিষয়ে ইন উইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন (নওশাদ) বলেন, বর্তমানে বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানির কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। প্রেক্ষাগৃহ সচল রাখতে স্থানীয় চলচ্চিত্রকাররা যদি চাহিদা অনুপাতে মানসম্মত চলচ্চিত্র দিতে পারে তাহলে বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানির প্রশ্নই ওঠে না।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাফটা চুক্তির অধীনে অথবা অন্য যে কোনো উপায়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ব্যাপারে সরকারের কোনো অনুমতি বা উদ্যোগ নেই। সরকার চায় দেশীয় চলচ্চিত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। এর জন্য সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন এ খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এতে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে চলচ্চিত্রকারদের সজাগ থাকতে হবে যাতে ইন উইন এন্টারপ্রাইজ বা অন্য কেউ সাফটা চুক্তির নাম করে অথবা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে এ দেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করতে না পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।