বদলে যাচ্ছে ঢাকার চলচ্চিত্র। সময়ের পথে হেঁটে নতুনত্বের কাঁধে ভর করে এ বদলের হাওয়া লেগেছে। নির্মাণ ও প্রদর্শনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর ধ্যান-ধারণা; গল্প, গান, অ্যাকশন, নৃত্য, লোকেশনে বৈচিত্র্য, নতুন অভিনয় শিল্পীর আগমন_ সবমিলিয়ে ঢাকার চলচ্চিত্র এখন নতুনত্বের কারণে সাফল্যের জোয়ারে ভাসছে। প্রেক্ষাগৃহ-বিমুখ দর্শক নতুনত্বে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র দেখতে প্রবল উৎসাহে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে। এ তথ্য চলচ্চিত্রকার ও প্রদর্শকদের। গতানুগতিক এবং মান্ধাতা আমলের নির্মাণের কারণে নব্বই দশকের শেষ ভাগ থেকে দর্শক ঢাকার চলচ্চিত্র-বিমুখ হয়। পুরনো ধাঁচের নির্মাণ, গল্প, প্রদর্শন আর অভিনয় দেখতে দেখতে সবাই যখন চরম বিরক্তিতে ভুগছিল তখনই অবস্থার উত্তরণে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে এলেন এম এ জলিল অনন্ত। তার মনসুন ফিল্মসের ব্যানারে ২০০৮ সালে তিনি অত্যাধুনিক রেড ক্যামেরা, দেশ-বিদেশের মনোরম লোকেশন, ভিন্নধর্মী গল্প, অভিনয় শিল্পী, নির্মাতা, গান, অ্যাকশন, নৃত্যকে আধুনিক ও সমৃদ্ধ করে নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র 'খোঁজ দ্য সার্চ'। এর চিত্রায়নের জন্য রেড ক্যামেরা, অ্যাকশন ও গানের জন্য জিমি জিপ (রিমোট কন্ট্রোল ইলেকট্রিক জিবাম), স্টাডি ক্যামসহ সর্ব ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলো। অভিনয়ে নতুন শিল্পীদের পাশাপাশি যুক্ত হলেন ইতালির নিনো। পরিচালক হিসেবেও যুক্ত হন নতুন মুখ। ফিল্ম ও মিডিয়া বিষয়ে বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী ইফতেখার চৌধুরী নির্মাণ করলেন 'খোঁজ দ্য সার্চ', ২০১০ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। দর্শক আধুনিক ধ্যান-ধারণার এই চলচ্চিত্র পেয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরেন। একই পথে এর আগে ২০০৯ সালে দেবাশীষ বিশ্বাস নির্মাণ করেন 'শুভ বিবাহ'। প্রথমবারের মতো এফডিসিতে ৩৫ মিলিমিটার পদ্ধতির ক্যামেরার পরিবর্তে সনি এস-থ্রি ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেন দেবাশীষ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন হলেও ডিজিটাল প্রজেক্টর না থাকায় ৩৫ মিলিমিটারে ট্রান্সফার করে প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করতে হয়। ট্রান্সফার করতে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নির্মাতারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারছিলেন না। এ ছাড়া এ দেশে পোস্ট প্রোডাকশন কাজের ব্যবস্থা না থাকায় সবার পক্ষে দেশের বাইরে গিয়ে এ ব্যয়বহুল কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে শুরুতেই ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণ হোঁচট খায়। নির্মাতাদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এফডিসিতে এখনো ডিজিটাল নির্মাণ পদ্ধতির প্রবর্তন হয়নি। এই অভাব পূরণে ২০১২ সালে এগিয়ে আসে প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। তারা ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি দেশের শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপন করে। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট কাটাতে উপহার দেয় একজোড়া নায়ক-নায়িকা। এরা হলেন বাপ্পা ও মাহি। তাদের অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল জাজ প্রযোজিত 'ভালোবাসার রঙ'। দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঝকঝকে ছবি ও নিখুঁত শব্দ পেয়ে আনন্দিত হয় এবং নতুন মুখের প্রতি উৎসাহ দেখায়। সব শ্রেণীর দর্শক প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জাজের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে রেইন পিকচার্স নামে আরেকটি প্রযোজনা সংস্থা আরও অর্ধশতাধিক প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপন করে। এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয়ও হ্রাস পায়। এতে চলচ্চিত্র নির্মাণে আবারও জোয়ার আসে। প্রবল উৎসাহে এগিয়ে আসেন নতুন তরুণ নির্মাতারা। এদের মধ্যে ইফতেখার চৌধুরী, রেদোয়ান রনি, মোস্তাফা কামাল রাজ, দেবাশীষ বিশ্বাস, স্বপন চৌধুরী, অনিমেষ আইচ, অনন্য মামুন, অনন্ত উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে নতুন শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন অনন্ত, বর্ষা, ববি, মাহি, বাপ্পী, শুভ, আইরিন, পিয়া, শম্পা, অমৃতা, রুহী, সাইমন, সারাহ জেরিন, অাঁচলসহ অনেকে। নতুন প্রযুক্তিতে নির্মিত 'দ্য স্পীড', 'মোস্ট ওয়েলকাম', 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,' 'চোরাবালি,' 'পোড়ামন', 'অন্যরকম ভালোবাসা,' 'পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী,' 'জ্বী হুজুর,' 'ভালোবাসা জিন্দাবাদ'সহ বেশকিছু চলচ্চিত্র বদলে দেয় ঢালিউডের চালচিত্র। চলচ্চিত্র গবেষক মতিন রহমানের কথায়, 'যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবস্থার প্রবর্তন হওয়ায় এ দেশের চলচ্চিত্রজগতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। সময়ের পথে হেঁটে এই সাফল্যকে ধরে রাখতে হবে'।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।