ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কার্যকর নেই ছাত্র সংসদ। কিন্তু থেমে নেই ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়। অযৌক্তিকভাবে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে বছরের পর বছর। আদায়কৃত এ টাকার কোনো সুষ্ঠু হিসাবও নেই প্রশাসনের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নামে ৬০ এবং হল ছাত্র সংসদের নামে ৬০- এই ১২০ টাকা নেওয়া হয়।
বছরে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে হিসেবে প্রতি বছর ছাত্র সংসদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি টাকা আদায় করে। এ ছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, মাস্টার্স এবং এমফিলসহ অন্যান্য কোর্সে ভর্তি হওয়ার সময়ও একই পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যায়ের ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছাত্র সংসদের নামে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় হয়।
এ ছাড়া প্রতি বছর সরকার থেকে দেওয়া বাজেটেও ডাকসুর জন্য বরাদ্দ থাকে।
বাজেট বইয়ের তথ্যানুসারে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ২৩ হাজার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯১ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬৭ হাজার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৮৬ হাজার এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
দীর্ঘ দুই দশক ধরে ডাকসু না থাকায় এ ফান্ডে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো জমা হওয়ার কথা। কারণ আইন অনুযায়ী ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি এবং জিএসের স্বাক্ষর ছাড়া ছাত্র সংসদ ফান্ডের এ টাকা উঠানো যায় না। আদায়কৃত এ টাকা আদৌ জমা আছে কি না কিংবা জমা থাকলে এর পরিমাণ কত, তা প্রশাসনের কেউ জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র সংসদের এ টাকা ছাত্রদের কল্যাণমূলক কাজে প্রতি বছর ব্যয় করা হয়।
শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের বুলেটিন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা থাকে। কিন্তু বছর বছর এ পাওনার পরিমাণ কমতে থাকে। বাজেট বই অনুসারে ২০০৯ সালে হল সংসদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাওনা ছিল ৪৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১০ সালে এসে বিশ্ববিদ্যালয় পাওনা দেখায় ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ডাকসুর পাওনা ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
ডাকসু ও হল সংসদ কার্যকর না থাকার পরেও চাঁদা আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা। তাদের দাবি, অবিলম্বে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা হোক। আর যদি প্রাশসন তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ছাত্র সংসদের নামে অবৈধভাবে টাকা আদায় বন্ধ করা হোক। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু সচল করার আন্দোলনে জড়িত 'শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ'-এর মুখপাত্র নূর বাহাদুর বলেন, ডাকসু না থাকায় ছাত্রদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসন ছাত্রদের অধিকার উপেক্ষা করে নিজের মতো সব কিছু করছে।
ডাকসু বন্ধ রেখে চাঁদা আদায় করা অন্যায় ও অবৈধ। এ টাকার কোনো হদিসও নেই।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মো. শোয়াইব বলেন, ডাকসু না থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের টাকা আদায় অনৈতিক। এ খাতে টাকা নেওয়া বন্ধ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরাও চাই ডাকসু সচল হোক।
কিন্তু ছাত্র সংগঠনে অছাত্রদের পদ পাওয়ার যে ধারা তা দূর না হলে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে না। ডাকসু অকার্যকর থাকা অবস্থায় এ বাবদ আয়ের টাকা খরচ করার কিছু বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ীই কল্যাণমূলক কাজে এ টাকা ব্যয় করা হয়। হিসাব পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ছাত্র সংসদের এ টাকা প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হিসেবে গণ্য করে বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়। ডাকসু বাবদ কোনো টাকা জমা নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।