মন কি যে চায়...... বাঙালির গৌরবের ইতিহাস নিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে আছে ডাকসু ভবন
অর্থশূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মধুর ক্যান্টিন
কি এক আশ্চর্য ভঙ্গি অপরাজেয় বাংলার
ভালো করে খেয়াল করলে যে কারো চোখে ধরা পড়বে ক্রোধ আর বেদনার মিশ্র যন্ত্রনা
কিছু সংখ্যক মানুষ এসবের ভাষা বোঝেন না
তারা মাত্র ক’জন।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র ও সমাজ সার্বিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক, জাতীয় মুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী।
আর যুগ যুগ ধরে সেই অকুতোভয় সৈনিকদের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু। কালের আবর্তে আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এখন ঐতিহ্যের কঙ্কাল। সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ধারক বাহক ডাকসু গত ২০ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে আছে। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচনের কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সদিচ্ছার অভাবে হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বলছে সুস্থধারার রাজীতির জন্য ডাকসুর বিকল্প নেই। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলছে তারা নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর। অপরদিকে ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সহ অবস্থানরে মাধ্যমে শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ফিরিয়ে আনা, নানাবিধ সমস্যার সমাধানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ডাকসু ও হল ছাত্রসংসদের নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বর্তমানে ডাকসুর অস্তিত্ব অনুভব করা যায় ভবনের নিচতলায় ডাকসু সহকারী ক্যামেরামান, চিত্রশিল্পী ও সংগ্রাহক গোপাল দাসের একক প্রচেষ্টায় নানা ঢঙের ফ্রেমে বেঁধে রাখা ঐতিহাসিক ছবিগুলোর প্রদর্শনীর মাধ্যমে। ডাকসুর দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে চলে শিলালিপির গবেষণা। অপর একটি কক্ষে জাতীয় কয়েকটি দৈনিক সংবাদপত্র রাখা হয়, বিভিন্ন সংগঠন তাদের দলীয় প্রোগ্রাম, সভা, সেমিনার করে থাকে একটি অপর কক্ষে।
ডাকসু:
সকল প্রকার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ডাকসুই প্রথম আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ আপোসহীন ভূমিকার কারণে ডাকসু নেতৃবৃন্দ সকল সময়েই নির্যাতিত জনতার ভালবাসা পেয়েছে।
তবে ডাকসুর পরবর্তী যে রাজনৈতিক রূপ, তাহা শুরুতে এমন ছিল না। এটি ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক চরিত্রের। ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে ডাসু বা Dhaka University Central Students Union সংক্ষেপে Dacsu সৃষ্টি করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়। তখন প্রতিটি ছাত্র ১ টাকা দিয়ে সদস্য হতে পারত।
সেই সময়ের তিনটি হল - ঢাকা হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল- প্রতিটি হল থেকে একজন করে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং উপাচার্য মনোনীত একজন শিক্ষক নিয়ে সংসদ গঠন করা হত। ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদের সাধারণ সভায় খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করলে তা কার্যকর হয়। এত ছাত্র প্রতিনিধি ও মনোনীত শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ কর্তৃক কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। সেসময় থেকেই সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করা হত।
এ সময় ছাত্র সংসদের কার্যক্রম শুধুমাত্র সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তখন ছাত্র সংসদ সাধারণ মিলনায়তন পরিচালনা, বিতর্ক সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে ডাকসু।
ডাকসু ভবন:
ডাকসু প্রতিষ্ঠার শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন পুরাতন কলা ভবনে ডাকসু অফিসের কার্যক্রম চালানো হত। ১৯৬২ সালে নীলক্ষেত সংলগ্ন কলাভবনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে ডাকসু অফিস কলা ভবনের পূর্বদিকের নিচতলায় স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯৮০ সালে কলাভবনের পূর্ব-দক্ষিনের কোনে (জাপান স্টাডিজ যেখানে ঠিক সেখানে) ডাকসুর অফিস কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮২ সালে আলাদা ডাকসু ভবন নির্মান করা হয় (নবাবের বাগান বাড়ির নাচঘরে)। তখন থেকে বর্তমান মধুর ক্যান্টিনের সামনে ডাকসুর নিজস্ব ভবনে ডাকসুর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়।
ডাকসু গঠনতন্ত্র ও সংশোধন:
ডাকসুর নয়া গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে ডাকসু নির্বচনের পর মাত্র এক বছর তার কার্যকারিতা থাকিবে। এই সময়ের পর যদি ডাকসু নির্বাচন না হয় তবে ৩ মাস পর্যন্ত উহার কার্যকারিতা থাকিবে।
ইহার পর আপনাআপনিই ডাকসু বাতিল হইয়া যাবে। আর কেবল নিয়মিত ছাত্ররাই ডাকসুর কর্মকর্তা কিংবা সদস্য হইতে পারিবেন। যদি ডাকসুর কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার পর কাহারও ছাত্রত্ব শেষ হইয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে ডাকসু হইতে তাহার পদও বাতিল হইয়া যাইবে। এই ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পুনরায় ওই পদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যেগ নিবেন। পূর্বের গঠনতন্ত্রে ছিল যে এক বছরের জন্য কার্যকারিতা থাকবে।
তবে পুনরায় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যক্রম বহাল থাকিবে।
১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৫ সালের মে মাসে ছাত্র সংসদের সাধারণ সভার খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। ১৯৩৯ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে বলা হয় মুসলমান হল থেকে সহ-সভাপতি হলে হিন্দু হল থেকে সাধারণ সম্পাদক কিংবা হিন্দু হল থেকে সহ-সভাপতি হলে মুসলমান হল থেকে সাধারণ সম্পাদক হবে। সাম্প্রদায়িক প্রভাবের কারণে এই সংশোধন করা হয়।
আর গঠনতন্ত্রে এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের উপশম হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে বিশ্ব নির্বাহী পরিষদ আরেকটি সংশোধন অনুমোদন করে। চারটি হলের প্রতিটি থেকে চারজন করে ষোল জন এবং মেয়েদের মধ্য থেকে একজন ছাত্রী প্রতিনিধি ছাত্র-ছাত্রীরা সংসদের জন্য নির্বাচন করতে পারত। এ ১৭ জনের পরিষদ থেকে একজন ভিপি ও একজন জিএস নির্বাচিত হত।
১৯৫৩ সালে পুনরায় গঠনতন্ত্রে সংশোধন করা হয়।
নাম পরিবর্তন তরে রাখা হয় ডাকসু। উপাচাযর্কে সভাপতি এবং ১৬ জন ছাত্র প্রতিনিধি থেকে ১০ জন কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। কোষাধ্যক্ষ থাকতেন একজন শিক্ষক।
ডাকসু নির্বাচনের খতিয়ান:
ডাকসু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে ৩৬ বার। প্রথম জিএস হিসেবে ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নাম পাওয়া যায়।
১৯৭০ সাল থেকে পরোক্ষ নির্বাচনের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ নির্বাচন চলছিল ডাকসুতে। স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। ওই নির্বাচনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ৪০ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ছয়বার। প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচনের বিধান থাকলেও ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালেই কেবল নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন হয়।
সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ওই নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমান ও খায়রুল কবীর খোকন (আমান-খোকন) পরিষদ জয়লাভ করে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে ডাকসু নির্বাচন হলেও ১৯৯১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত গনতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে নির্বাচন একবারের জন্যও হয়নি।
নির্বাচন না হওয়ার কারন:
ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার পেছনে বড় কারনটি হচ্ছে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অব্যন্তরীন দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া ক্যাম্পাস ও হলগুলোয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এটাও ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার অন্যতম কারন। ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর ১৯৯১ সালের ১২ জুন তৎকালীর ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছিলেন। ওই সময় কিছু সংখ্যক ছাত্রনেতা তাদের ছাত্রত্ব বজায় রাখার জন্য বিশেষ ভর্তির দাবি জানান। এ নিয়ে উদ্ভূত সহিংসতায় ডাকসু নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৪ সালে ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছিলেন।
কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ আনে ছাত্রলীগ। ফলে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত হয় । ১৯৯৫ সালে আবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও নির্বাচন হয় নি। তারপর ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী ভিসির দায়িত্ব নেয়ার পর অন্তত ছয়বার ডাকসু নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওপর মহলের এবং বিরোধী ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বাধায় তিনি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করতে ব্যর্থ হন।
১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলে অভ্যন্তরীন কোন্দলে ছাত্রদলের নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুন হন । এ ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশে ডাকসু ভেঙে দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে। ১৯৯৭ এর ২৭ মে সিন্ডিকেটের সভায় ডাকসু ভেঙে দেয়া হলেও নির্বাচন আর দেয়া হয়নি। ডাকসুর জন্য গঠিত নতুন (সংশোধিত) গঠনতন্ত্রে ডাকসু ভাঙার চার সাসের মধ্যে আবার নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের আগেই ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা।
কিন্তু এ পর্যন্ত তা হয়নি। তারপর ২০০৫ সালের মে মাস ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড এস এম এ ফয়েজ। ওই বছর ডিসেম্বরেই ডাকসু নির্বাচন দেয়ার কথা বলেন তিনি। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরোধিতার কারণে সে নির্বাচন হয় নি ।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় গেলে ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনের বিরোধিতা করে।
এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে ছাত্রদলও ডাকসু নির্বাচনের বিরোধিতা করে। এভাবে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর পরস্পর বিরোধী অবস্থানের ফলে ডাকসু নির্বাচনের সুফল থেকে বঞ্চিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি, পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মতে, ডকসু নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্র চর্চা ব্যহত হচ্ছে এবং সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব ও নেতাশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে রাজনীতির প্রতি মেধাবীদের বিরূপ মনোভাব তৈরী হচ্ছে, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং দখলদারি ও মাস্তানতন্ত্র স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ডাকসুর সাবেক নেতারা মনে করেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে আবার সুস্থধারা ফিরে এলে তার ছোয়া জাতীয় রাজনীতিতে লাগবে।
ফলে বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে সৎ, যোগ্য ও মেধাবীদের পদচারনায় আবার মুখরিত হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল মনে করেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর কর্মীদের হলে থাকা নিশ্চিত করতে না পারলে ডাকসু নির্বাচন কল্পনাই থেকে যাবে। যখন উভয় দল মনে করে ডাকসু নির্বাচন দিলে তারা জয়লাভ করবে তখন আপত্তিতে তারা উভয়ে নির্বাচন মেনে নেবে। ক্যাম্পাসে উভয় দলের ভারসাম্য সমান না করে নির্বাচন করতে গেল রক্তপাত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায় বলে একাধিক ছাত্রনেতা দাবি করেছেন। তাই ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ভারসাম্য রক্ষা করার দরকার।
সকল ছাত্রসংগঠনের ছাত্রদের হলে থাকা নিশ্চিত না করতে পারলে ডাকসু নির্বাচন স্বপ্নই থেকে যাবে।
সব নিবাচন হয় ডাকসু নির্বাচন হয়না:
বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র ডাকসু ও হল ছাত্রসংসদের নির্বাচন ছাড়া শিক্ষক সমিতি, সিন্ডিকেট, সিনেট, ডিন, কর্মচারী সমিতিসহ সকল সমিতির নির্বাচন হচ্ছে। কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভয় পাচ্ছেন যে ডাকসু নির্বাচন যদি হয় তাহলে তাদের কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে। প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন অনিয়ম র্ককান্ডে বাধাপ্রাপ্ত হবে।
বাজেট আছে নির্বাচন নেই:
নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ডাকসু নির্বাচনের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। প্রতি বছর ভর্তির সময় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও ডাকসুর জন্য চাঁদা নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর ডাকসুর জন্য যে বাজেট দেয় তার পরিমান হচ্ছে- ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৭০ হাজার টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৬ লাখ টাকা,২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা সংশোধিত ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সংশোধিত ৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে সংশোধিত ৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা। প্রতি বছর এ বরাদ্দকৃত অর্থ ডাকসু নির্বাচনের জন্য ব্যয় করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
নির্বাচনের জন্য চাঁদা দেন শিক্ষার্থীরা:
ছাত্রছাত্রীরা ডাকসু বাবদ প্রতি বছর নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু বাবদ ২০ টাকা (কেন্দ্রীয় সংসদ বাবদ ১০ টাকা + হল সংসদ বাবদ ১০ টাকা) নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই চাঁদার পরিমান বাড়ানো হলেও প্রকৃত কাজের কিছু হচ্ছে না।
ডাকসুবিহীন ছাত্র রাজনীতির সেকাল-একাল:
ডাকসুর সর্বশেষ কমিটির (১৯৯০ সালের ৬ই জুন) প্রকাশিত একটি স্মরণিকায় ডাকসু সম্পর্কে তৎকালীন অধ্যাপক বর্তমানে প্রফেসর অব ইমিরেটাস ড. আনিসুজ্জামান স্যার লিখেছেন,
“ এখন সবাই বলে ডাকসু। তার অনুকরণে রাকসু, জাকসু, ইউকসু ইত্যাদি চলছে। অথচ আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, ১৯৫৩ সালে তখন ডাকসুর নামও শুনিনি।
কিছুকাল পরে শুনলাম। কারণ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদ আয়োজিত নবীন বরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বুঝলাম ডাকসু এবং হল ছাত্র সংসদ সম্পর্কে। আমি প্রথম বর্ষে ভর্তি হবার কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করলেন। আমাদের মধ্যে খুবই উত্তেজনা। এতকাল পরে কেন্দ্রীয় সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে।
উত্তেজনার আরো একটি কারণ ছিল-পদেও বন্টন পদ্ধতিতে সেবার সহ-সভাপতি হবে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হলো। আমাদের হল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে আমরা যাদের নির্বাচিত করলাম, তাঁরা হলেন: এস, এ বারী এ, টি (পরে বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী), আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (কবি ও পরে বাংলাদেশের সচিব, মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত), শাফাত আহমদ চৌধুরী (ডেলটা লাইফের চেয়ারম্যান), ফরিদা বারী মালিক(সংগীতশিল্পী)। বারী ও ওবায়দুল্লাহর মধ্যে কে সহ-সভাপতি হবেন, এ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। বারীই সহ-সভাপতি হন।
ততদিনে ডক্টর জোনকিন্স উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন-তিনিই সভাপতি। ১৯৫৪ কি ৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি কলকাতাবাসী অরবিন্দ বসু ঢাকায় এসেছিলেন- তাঁর কথা শোনার জন্যে কলাভবনের প্রাঙ্গনে ডাকসু এক সভার আয়োজন করে। তিনি খুব সুন্দর বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ”
ছাত্র রাজনীতি ও দেশবাসীর প্রত্যাশা শীর্ষক এক নিবন্ধে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন লিখেছেন,
‘মফস্বল থেকে এসে ভর্তি হওয়ার পর আমি এবং আমার সতীর্থরা দুটি জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম, তা হলো সাধারণ ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জীবন। দু’টি ক্ষেত্রই ছিল সজীব।
আমার ছাত্রজীবনে দেখেছি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তখন আন্দোলন দানা বাঁধছে, রাজনৈতিক আবহাওয়া হয়ে উঠছে উত্তপ্ত; কিন্তু সাংস্কৃতিক জীবনে ছেদ পড়েনি। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য তাতেও যোগ দিচ্ছিলেন ছাত্ররা। তখন সংস্কৃতি চর্চাও ছিল রাজনীতির একটি অংশ’।
আমাদের অগ্রজদের ক্যাম্পাস জীবন আর আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে ভিন্ন। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষাজীবন শুরুর পর থেকেই শুধু শুনে আসছি এ বছরই ডাকসু চালু হচ্ছে।
কিন্তু ডাকসুতে ঝুলছে তালা। আমার আগে সিনিয়ররাও একই দুঃখ নিয়ে ক্যাম্পাস জীবন শেষ করেছেন। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেই না ডাকসু কি বা তার কাজ কি ? ছাত্র রাজনীতি বলতে তারা বোঝে রাতে হলের গেস্টরুম, দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে হাজিরা দেয়া আর মাঝেমধ্যে “ওই নেত্রী আছে রে.....বলতো কোন সে নেত্রী”-এই জাতীয় শ্লোগানে মিছিলে প্রকম্পিত ক্যাম্পাস। গণরুমে গাদাগাদি করে থাকা, নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর খাবার এখন নিয়তি। ক্লাস হয় তো আবার স্যার নেই।
স্যার ছুটিতে অমুক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তমুক বিভাগের ডীনের দায়িত্বে। ডাকসু এবং হল ইউনিয়নের জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থী বছরে ১২০ টাকা দিচ্ছেন। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয় কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ডাকসু অচল থাকলেও প্রাপ্ত অর্থ খরচের খাত কিন্তু বন্ধ নেই। প্রতিবছর অর্জিত ফি টিএসসি সাংষ্কৃতিক খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
অথচ ইউজিসি স্পষ্ট নির্দেশনা আছে এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। ডাকসু না থাকায় অছাত্র ও আদু ভাই ছাত্রনেতাদের দখলে চলে গেছে ছাত্ররাজনীতি। ক্ষমতার রাজনীতিতে পেশীশক্তি ও অস্ত্রবাজি তাদের টিকে থাকার একমাত্র সহায়। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যকার আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও অদৃশ্য একটি মিল রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচন চায় আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।
প্রকৃতপক্ষে কোন ছাত্র সংগঠনই চায় না ডাকসু নির্বাচন হোক।
মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্র সংগঠনগুলো যেখানে মেধার চর্চা করতো এখন সেখানে ক্ষমতা ও পদপ্রাপ্তির চর্চা হয়। কার চেয়ে কে বড় পদে আসীন হতে পারে। পদাসীন হতে গিয়ে নানা বিপদ দেখা দেয়। আগে ছাত্র সংগঠনের দিকে দেশবাসী তাকিয়ে থাকতো।
তারা স্বৈরাচারে বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার হয়ে গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করতো। এখন ছাত্রনেতারা নেত্রীর জন্মদিন কিংবা মাদার অর্গানাইজেশনের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন ছাড়া সামাজিক কাজে সেভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারে না।
ডাকসু অচল থাকায় লাভবান কারা?
ডাকসু নির্বাচন ১৯ বছর বন্ধ থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কিন্তু নিয়মিত হচ্ছে। (২০০৮ সালে হয়নি)। বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতি বা চতুর্থ অথবা কারিগরি সমিতির নির্বাচন কিন্তু বন্ধ থাকেনি গত দেড় যুগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, শিক্ষকরাই চায় না ডাকসু নির্বাচন। তাদের যুক্তি ডাকসু নিয়মিত হলে শিক্ষকদের একচেটিয়া আধিপত্য কমে যাবে। ডাকসুর জন্য বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে শুধু নেই যারা ডাকসুর প্রাণভোমরা তারাই। হলগুলোয় কর্মচারীদের দৌরাত্মে অসহায় ছাত্র-ছাত্রীরা। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের ছাত্রদের ‘স্যার’ বলার নিয়ম এই চালু ছিল।
এখনও আছে তবে চর্চা হয়না। বর্তমানে কর্মচারীদের দাপট দেখে মনে হয় তাদের কাজ করতে বলাটা অপরাধ ? প্রয়োজনের অতিরিক্ত হল কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হলেও হলের বারান্দা ঝাড়– দেয়া হয়না দিনের পর দিন, অপরিচ্ছন্ন বাথরুম ও টয়লেট। টেবিলের একটা সুইচ লাগাতে কর্মচারীদের তৈলমর্দন করতে হয়। বকশিশ না দিলে কাজ হয়না। ওয়ার্ড বয় বা সিক বয়দের দেখা পাওয়া যায় না।
কিছু বলা যায় না। কিছু বললেই কর্মচারী সমিতি নেতারা হাজির। ছাত্রদের সঙ্গে অকথ্য দুর্ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেন না। যারা কাজ বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে হোম পলিটিক্স কিংবা নীলক্ষেত বা শাহবাগে নিজস্ব ব্যবসায় বেশি মনোযোগী । কর্মচারী নিয়োগে পরিবারতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গুরুদোষ করলেও তারা শাস্তিপান না। এখানে তো রাঙ্গামাটি বা হাওড়া এলাকায় বদলির শাস্তি নেই্। যদিও বা বদলি করতে গেলে বাপ-চাচা-মামা-খালু-শ্বশুর-শ্যালক সবাই যারা কর্মচারী বা কর্মকর্তা তারা এসে তদবির শুরু করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের পক্ষে আর কিছুই করার থাকে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই শয়ের অধিক সিকিউরিটি গার্ডকে প্রতিবছর সরকারী খরচে ড্রেস দেয়া হয়।
বরাদ্দ আছে পোষাক ধৌত বিল। কিন্তু শিক্ষক ক্লাব বাদে কোন কর্মচারী তা পরিধান করেন না। শিক্ষকরাও এদের কাছে জিম্মি। কয়েক দফা বলার পরও এক কাপ চা পেতে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষকদের। লাইব্রেরী চেয়ারের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মারামারি করতে হয়।
কিন্তু কর্মকর্তাদের রুমে গেলে দেখা যাবে দশ-বারোটা চেয়ার অযথা পড়ে আছে। লাইব্রেরীতে আড়াই’শ কর্মচারী কিন্তু বাথরুমে দুর্গন্ধে টোকা দায়। সিলিংয়ে ঝুল পরিস্কার করার কেউ নেই্। তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কে প্রতিবাদ করবে ? ডাকসু নেতারা নেই। জবাবদিহিতা নেই।
কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে নেতারা আছেন কিন্তু যাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার কে আদায় করবে ?
কেন দরকার গৌরবের ডাকসু:
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু গঠিত হয়। তখন বার্ষিক এক টাকা হারে চাঁদা দিয়ে এ সদস্য হতে হতো। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২- এর শিক্ষানীতি আন্দোলন, ’৬৬ - এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণ-অভুত্থান, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৩ এর সা¤্রাজ্যবাদী আন্দোলন এবং ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে ডাকসু। শুধু আন্দোলন সংগ্রামে নয়, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের প্রধান কেন্দ্র হিসেবেও ডাকসু সুদীর্ঘ সময় নানা ভূমিকা রেখেছে, তৈরি করেছে নতুন নেতৃত্ব ও চেতনা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় কোন যোগ্য প্রতিনিধিত্ব গড়ে উঠতে পারছে না।
ডাকসুর মতো শক্তিশালী প্লাটফর্ম অকার্যকর থাকায় আবাসিক হলগুলোতে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরাজ করলেও সাধারণ ছাত্রদের প্রতিবাদের কোন উপায় নেই। ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ছাত্রনেতাদের বক্তব্য:
ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক আব্দুল মতিন বলেন,“আমরা অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন চাই। ছাত্রদল সব সময় চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব থাকুক। ’ তবে ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রত্যেক হলে সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সেক্রেটারি ওমর শরীফ বলেন,“ডাকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা চাই ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকুক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে দাবি জানানো হবে। ’
ঢাবি ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আবদুল হামিদ বলেন,“আমরা এই মুহূর্তেই ডাকসু নির্বাচন চাই।
ডাকসু নির্বাচন না থাকায় ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনা ঘটছে। ’ তাই ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করে ডাকসু নির্বাচন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে; কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নেই। নতুন নেতৃত্ব ও ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।
ভিসির বক্তব্য:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ড. আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক বলন, ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায়র ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক বাধা।
বিগত দুই দশক নির্বাচন না হওয়ায় এ বাধা আরও বেড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচন কতটা প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম সফল করার জন্য ডাকসুর ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু নির্বাচনের ধারা অব্যাহত ও ডাকসু কার্যকর থাকলে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষে সৃজনশীল কর্মকান্ড পরিচালনা এবং এর মাধ্যমে সহজভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করাও সম্ভব হবে। পাশাপাশি ডাকসু চালু হলে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
এক সময় ডাকসু সচল থাকার কারনে নেক বড় বড় জাতীয় নেতা তৈরি হত, বর্তমানে সেখানে ডাকসু অচল থাকায় জাতীয় জীবনে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন না থাকার কারনে ছাত্র-ছাত্রীরা দিন দিন দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অনেকের শিক্ষাজীবন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ক্যাম্পাস অঙ্গনেও বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কোন কিছুরই প্রদিবাদ করতে পারে না ভয়ে। এ থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় ডাকসু নির্বাচন। আজ অনেক ছাত্রই ভুলতে বসেছে ডাকসু কি ছিল।
তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেয়া এবং জাতীয় নেতা তৈরির সুযোগ করে দেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।