আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কসাই সমাচার



স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, যে রোগী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে ৫০০ টাকা দিতে চান না, তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে উকিলের কাছে যান। এই সংবাদটা আমার কাছে নিতান্তই গুরুত্বহীন। কারন এতদিন পর মন্ত্রী মহোদয়ের এই বোধদয়ের একটাই কারন- সামনে নির্বাচন, অন্তত আমার মত ঋণাত্বক চিন্তাধারার অধিকারী ও সন্দেহবাদীরা এইরকমই মনে করে বলে আমার বিশ্বাস। তবে সংবাদটার আসল মজা এবং গূরুত্ব হচ্ছে এর কমেন্টগুলোতে। যেরকম একজন মন্তব্য করেছেন- "উপজেলা হাসপাতাল গুলার ডাকতার রা তো প্যারা সিটামল আর হিসটাসিন এর বাইরে তাদের আর কোন চিকিৎসা জানা নেই ! পরীখখা নিরিখখার ও প্রয়োজন খুব এক্টা বেশী নেই..."।

উনি মনে হয় মঙ্গলগ্রহের অধিবাসী, জানেনই না যে উপজেলা হাসপাতাল গুলাতে প্যারাসিটামল আর হিস্টাসিন ছাড়া আর তেমন কিছু সরকারবাহাদুর সরবরাহ করেননা। তো উনাকে যদি এর বাইরে অন্য কোন ওষুধ লিখে বাইরে থেকে কিনে নিতে বলা হয়, তাহলে উনি ডাক্তার সাহেবের টুঁটি চেপে ধরে বলবেন, -"ব্যাটা সরকার ঠিকই সাপ্লাই দেয়, তোরা সব বেইচ্যা খায়া ফালাস- ওষুধ যখন কিন্যাই খামু তয় ১০ টাকা ভ্যানভাড়া দিয়া সরকারী হাসপাতালে আইলাম কেন?" অর্থাৎ ডাক্তার সাহেব উনাকে যে প্রেসক্রিপশন করে দিলেন, সেটার কোন দাম নেই। আরকেজন মহাজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন- "he is mad, Health and treatment is necessary for human life but court case and advocate is not necessary. He should think how we can get free medical service, free surgery, eye treatment." উনার মন্তব্যের প্রাথমিক অংশটুকু ঠিক থাকলেও থাকতে পারে, তবে পরের অংশটুকু পড়লে মনে হবে উনি নিজেও ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী গোত্রের একজন। উনি বলেছেন চিকিৎসেবা মানবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে কেস-কাচারী-উকিল নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য উনি টাকা খরচ করতে নারাজ, তবে অপ্রয়োজনীয় জিনিস (যেমন উকিল) এর জন্য টাকা খরচ করতে উনার কোন সমস্যা নাই- হায়রে এরাই আমাদের ভোটার।

আর একজন লিখেছেন- "এই সব অমানুষদের জন্য দেশের আপামর সাধারণ মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। একজন মন্ত্রীর চিন্তা-চেতনা যখন এ রকম, তখন একজন সাধারণ ডাক্তার আরও কত নিচু ও নোংরা মানসিকতার হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ডাক্তাররা যে কতটা অমানুষ, নির্বিবেক, অসভ্য ও অর্থগৃধ্নু তা একজন ডাক্তার মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার"। বোঝা যাচ্ছে বিশেষণ ব্যবহার করায় উনি ওস্তাদ মানুষ। তো ওস্তাদজির কাছে আমার প্রশ্ন উনার পরিবারে যদি কোন ডাক্তার থাকে (আমি নিশ্চিত চৌদ্দ গোষ্ঠীতে নাই) তার সামনে গিয়ে কি উনি এইসব বিশেষণ-বাণ ছুড়ে মারতে পারবেন? পারলে সেটাই করেন, নপুংশকের মত ভার্চুয়াল গলাবাজি করতে তো মাথার ভেতরে গো-বিষ্ঠা থাকলেই হয়, সেটা সবাই জানে।

আরএকজন ইন্টেলেকচুয়াল বলেছেন- "ডাক্তারী মূলত সেবামূলক পেশা। একে বাণিজ্য হিসেবে না দেখে সেবামূলক দেখা উচিত। " উনি ভালই বলেছেন- অন্তত স্বীকার করছেন যে ডাক্তারী একটি পেশা। পেশা যেখানে থাকবে, সেখানে টাকার ব্যাপারও থাকবে। যে লোকটা চালের ব্যবসা করে সংসার চালান, সেটাও উনার পেশা।

তো উনার কাছ থেকে ৫ কেজি চাল কিনে কি বলতে পারবেন, "ভাই আমি গরীব মানুষ এইবার ট্যাকা দিতে পারুম না"? যেই উকিলকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তো উনাদের কাছে গিয়ে কি বলতে পারবেন একটা কেস বিনাপয়সায় রফা করতে? যত চোটপাট শুধু ডাক্তারের কাছে এসে। ডাক্তারের কাজ সেবা করা সেটুকু যখন মানেন, তাহলে সেই সেবা করা যে একটা পেশা, সেটা ডাক্তার সাহেবরা করবেন টাকার বিনিময়ে সেটুকু মানতে দোষ কোথায়? আর একজন হিসাববিদ বলেছেন- "সরকারি খরচে ডাক্তার হয়ে দেশবাসির সেবা না করে এখন ৫০০ নয় ৭০০ টাকা ভিসিট নিচছেন অনেক ডাক্তার। আর এটাতো শুধু ভিসিট ৭০০ টাকা। এর বাইরে বিভিনন পরিক্কাগার থেকে ৩০% কমিশন পান, অনেক ডাক্তাররা বাধ্যতামুলক কিছু টেসট ধরিয়ে দিয়ে বলেন "অমুক" ল্যব থেকে করেন। তাহলে একজন বিষেশ ভাবে অগগ (বিশেশগগ ) ডাক্তারের ডেইলি ইনকাম কত ? ৭০০ টাকা করে দিনে ৫০ জন রোগি দেখেন , ৩০% কমিশন পান সব রোগির ল্যব টেসট থেকে, অপারেশন করেন, বিভিনন হসপিটালে কলে যান, হসপিটালে ডাইরেকটরশিপ আরো কত কি ???" হিসাববিদের মন্তব্যে মনে হচ্ছে ডাক্তাররাই শুধু সরাকারী খরচে লেখাপড়া করে (যদিও এখন অনেকেই বাপের টাকায় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়তেছেন), আর দেশের সব পন্ডিতরা নিজের টাকায় পড়ে।

সরকারী টাকার এমনই গুন যে ডাক্তার হওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয় না, কোন পরিশ্রম করতে হয় না, ৬ টা বছর সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ করলেই একএকজন ডাক্তার হয়ে যায়। নাহ মেজাজটা এমনই বিগড়ে গেল যে আর লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে না। আচ্ছা এইবার একজন অংকবিদের মন্তব্য দিয়ে লেখাটা শেষ করব, অংকবিদ বলেছেন- "প্রায় ১৮ কোটি রোগী সেবা পেয়েছে। এ লোকের মাথা ঠিক আছে ? ১৫/১৬ কোটি লোকের দেশে ১৮ কোটি সেবা কিভাবে ?" উনি লোক এবং সেবা গুলিয়ে ফেলেছেন। উনি মনে হয় বছরে একবারই হাসপাতালে যান।

, মারা গেলেও বছরে দ্বিতীয়বার আর ডাক্তারের কাছে যাবেননা বলে পন করেছেন। উনার ঝুলিতে এই বিদ্যাটুকুও নাই একজন লোক হাসপাতালে একাধিকবার সেবা নিতে পারেন। আসলে উনাদের মত লোকরাই যান, সরকারী হাসপাতালের ফ্রী ওষুধ (চিকিৎসা নয়) নিতে, একবার নয়- বার বার। আগে গ্রামের মামলাবাজ লোকজন নিয়ে একটা কথা প্রচলন ছিল- "শহরে যখন আইলাম, চাচার নামে একটা মামলা দিয়াই যাই। তো উনাদের মত লোকদের জন্য মনে হয় বলতে হবে- " হাটে যখন আইলাম, সরকারী হাসপাতাল থন কিছু ওষুধ নিয়াই যাই।

"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.