আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তন - একটি বড় গল্প (অখণ্ড)

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

বিবর্তন ------------------------------- (১) প্রত্যয় কপালের ঘাম মুছে সূর্যের দিকে তাকালো সুরুজ মিয়া। "আজকে মামা বড় গরম দেখাচ্ছ", মনে মনে বললো সে। মির্জা বাড়ির কামলা সুরুজ মিয়া। সেই ছোট বেলা থেকে এখানে কাজ করছে। এ বাড়ির বড় ব্যবসা হচ্ছে মিস্টির বিপণী।

গঞ্জে তিনখানা মিস্টির দোকান আছে তাদের। মির্জার মিস্টি কথা পুরো গঞ্জের লোকের মুখে মুখে ঘোরে। বড়কর্তা হামিদ মির্জা রাশভারী লোক। তার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস আশে পাশের দশগ্রামে কারো নেই। সেই মির্জা সাহেবের সাথে মুখোমুখি কথা বলতে হবে তার আজকে।

গত রাতে এটা নিয়ে বউয়ের সাথে শলা পরামর্শ করতে বসেছিল সে। বউ নসিমন আর একমাত্র ছেলে কাচু কে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। নসিমন ও বলছিল এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে আর এত ভয় পেয়ে লাভ নেই। খুব বেশি হলে আর কী হবে - হয়তো একটু বকঝকা করতে পারে। মির্জা সাহেবের গোস্যাকে ভয় পেয়ে নিজের স্বপ্নটাকে এভাবে জলাঞ্জলি দেয়াটা সমীচীন হবে না বলে নসিমন তার মত ব্যক্ত করে।

অবশেষে সুরুজ মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সন্ধ্যাতেই - হয় এসপার নয় ওসপার। সূর্যকে পাটে বসিয়ে ঘরে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে নেয় সে। তারপর হাঁটা ধরে বড়বাড়ির দিকে। এসময় মির্জাসাব উঠানের বৈঠকখানায় দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বসে থাকেন।

সেলাম ঠুকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সুরুজ মিয়া। মির্জাসাবের সপ্রশ্ন দৃষ্টির সামনে তার পরিকল্পনাটা জানায়। ব্যাপারটা হল, সারা জীবন কামলা খেটে দু’টো চারটে করে টাকা জমিয়ে আজ সুরুজ মিয়ার হাতে কিছু টাকা জমা হয়েছে, এই দিয়ে সে একটা ব্যবসা শুরু করতে চায়, ফলের রসের ব্যবসা। বড় সাহেবের মিস্টির দোকানে সে দেখেছে গরমের সময় যতটা না মানুষ মুখ মিঠা করতে ঢোকে তার চেয়ে বেশি ঢোকে ফ্যানের তলায় বসে দুই দন্ড জিরিয়ে নিতে। সেই সময় যদি তাদের সামনে বরফ কুচি দেয়া এক গ্লাস ঠান্ডা মৌসুমি ফলের জুস দেয়া যায়, লোকে তা লুফে নেবে।

শহর থেকে একটা ব্লেন্ডার কিনতে হবে, আর শুরু করার জন্য কয়েকশ টাকার ফল - অল্প মূলধনে শুরু করা যাবে। আর শুরু করার জন্য মির্জাসাবের মিষ্টিরর দোকানের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? যদিও মির্জা সাহেব নিজেই করতে পারেন তবু এ কাজের জন্য তার তো আলাদা লোক নিতেই হবে, সে ই না হয় থাকবে। দুরু দুরু বুকে বলে সে তার পরিকল্পনার কথা। জানায় এ ব্যবসায় পরিকল্পিত হিসেবের করার কথা। জানায় আর চাকুরি করবে না।

যদি মির্জা সাহেব দয়া করে তাকে কিছু মূলধন দিয়ে ব্যবসাটা শুরু করতে সাহায্য করেন, তার বড় উপকার হতো। মির্জা সাহেব অপলক নয়নে পুরো কথাটা শুনলেন । তারপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন, “সুরুজ মিয়া, সাপের পাঁচ পা দেখতাসো?” হঠাৎ এ আক্রমণে হকচকিয়ে গেলো সুরুজ মিয়া, “জ্বী হুজুর…?” “বাড়ির চাকর হইয়া এহন শখ হইসে ব্যবসার পার্টনার হবা? তারপর কী? আমগো বাড়ির মাইয়ার লগে পোলার বিয়া দিবা? আমগো ঘরে আইসা উঠবা?” “হুজুর মাফ কইরেন, কিন্তু…” “চোপ্‌! বেয়াদপ্‌ কোথাকার! কামলার ঘরের কামলা, যা! বাইরাইয়া যা!” মাথা নিচু করে সুরুজ মিয়া বেরিয়ে যেতে যেতে শুনলো – “অজাত কুজাত জানি কোনখানকার, ব্যাপারী হইবো! তর ব্যবসা করা ছুটাইতেসি – খাড়া!” ঘরে ফিরে নসিমনকে সব কথা জানায় সুরুজ মিয়া। শুনে সে কিছুক্ষন চুপ থাকে। তারপর প্রশ্ন করে বকা দেয়া ছাড়া ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা।

নেতিবাচক উত্তর পেয়ে আবার কিছুক্ষণের নিরবতা। মুখোমুখি বসে থাকা দু’জনকে দেখে বোঝা দায় যে তাদের মনে কী ঝড় চলছে। অবশেষে মুখ খোলে নসিমন। সাহস দেয় সুরুজ মিয়াকে। এটাই পৃথিবীর শেষ নয়।

বরং এ-ই শুরু। সামন্ততান্ত্রিক নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে অপার সম্ভাবনাময় পৃথিবীকে আপন করে নেয়ার এটাই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। মন দিয়ে শোনে সুরুজ মিয়া। ঘরের কোণে মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে অংক কষতে থাকা কাচুর দিকে তাকায়। “আমগো কাচুরে বড় করতে অইব”, মনে মনে ভাবে সে।

তার বাপ কামলা ছিলো, দাদা কামলা ছিলো – কিন্তু এবার বৃত্ত সে ভাঙবেই। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে চেয়ে থাকে সুরুজ মিয়া। তার দুচোখে খেলা করে সম্ভাবনার আলো। (২) স্বপ্ন ল্যাপটপে রেজিগনেশন লেটারটা টাইপ করতে করতে শফিক ভাবলো অনেকদিন আনিকাকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যাওয়া হয় না। আজকে যেহেতু আগে আগে অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, আজকে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে।

নতুন প্রজেক্টটা শুরু করার আগে কয়েকদিন বিশ্রাম করে নেবে। একটা এস,এম,এস করে দিলো সে আনিকার ফোনে। ও যেন টুপলুকে স্কুল থেকে তুলে বাসায় না যায়, সরাসরি গুলশানে চলে আসে। গত প্রমোশনটা পাবার পর সে বুঝেছিলো যে তার ওপর অফিসের বড় কর্তাদের নজর আছে। মার্কেটিং ম্যানেজার থেকে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র ম্যানেজারদের কাতারে যোগদান করে তার মনে হয়েছিল প্ল্যানটা বড় কর্তাদের জানানোর এটাই সুযোগ।

তার এই পরিকল্পনা ‘মডার্ণ জুস বার অ্যান্ড বেভারেজ’-এর ব্যবসায়িক মানচিত্রে ছোটখাটো একটা পরিবর্তন আনতে পারে। বড় পরিবারের উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও পিতার অবিমৃষ্যকারিতার কারণে তার জীবদ্দশায় একে একে সব সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায়। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পর যা কিছু অবশিষ্ট আছে তাও বিক্রি করে নিজের একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়ে নিজের বহুদিনের ইচ্ছাকে সার্থক রূপ দেয়ার উদ্দেশ্যেই সে প্ল্যানটা বানাচ্ছিলো। মডার্ণ জুস বার অ্যান্ড বেভারেজের ঢাকা শহরে চারটা জুসের বার আছে – সেখানে কেবল তাদের ব্র্যান্ডের ফলের জুসই বিক্রি হয়, আরো আছে নিজস্ব কার্বনেটেড বেভারেজের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল। ছয় বছর ধরে সেলস ম্যানেজ করার কাজ করে শফিক জানে যে জুস বার গুলোতে যদি ঠান্ডা কোন মুখরোচক আইটেম দেয়া যায় তাহলে হু হু করে বিক্রি হবে।

কাজেই তার পরিকল্পনা ছিলো জুস বার গুলোতে প্রাথমিকভাবে আইসক্রিম পার্লার যোগ করার এবং পরবর্তিতে ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলোতে প্যাকেটজাত আইসক্রিম ঢোকানোর। প্রডাকশনের কারখানা, প্যাকেজিং ইত্যাদির খরচের খতিয়ান, লাভ ক্ষতির হিসেব, এমনকি ব্র্যান্ডের নামও সে তার প্রস্তাবে ঢুকিয়ে পাঠিয়েছিল, সব রকম প্রশ্নের জন্য সে প্রস্তুত থাকতে। তার চাওয়া ছিলো শুধু এটুকুই – এক্‌জেকিউটিভ পার্টনার হিসেবে স্বয়ং সে ই থাকবে। আক্রমণটা এলো সম্পূর্ন অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। সেদিন সকালে সে বড় কর্তার সাথে দূপুরে বসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছিল।

টেনশনে লাঞ্চটা না করেই সে দূপুর দু’টার দিকে বসের অফিসে উপস্থিত হয়। রাশভারী ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফ সাহেবের মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত। ঘরে ঢুকে দেখে কোম্পানীর চেয়ারম্যান কায়েস সাহেবও আছেন। “শফিক, তোমাকে তো ভালো ছেলে বলেই জানতাম। হঠাৎ এরকম বদ মতলব হল কেন?” গায়ে আরমানির স্যুট, হাতে রোলেক্স ঘড়ি, পায়ে ইতালির এক নামকরা মুচির হাতে বানানো জুতো – সারা শরীর থেকে জৌলুস ঠিক্‌রে বের হচ্ছে।

বয়সে খুব একটা বড় হবেন না আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু কথা বার্তায় সব সময় একটা ঔদ্ধত্য। পিতার চেয়েও বয়সে বড় কর্মকর্তাদের সাথে তুমি তুমি করে কথা বলার রেকর্ড আছে তাঁর। কিন্তু, শফিক গায়ে মাখলো না। এখন এসব চিন্তা করার সময় নয়।

“বদ মতলব মানে? ঠিক বুঝলাম না, স্যার। ” “সেলসে থেকে থেকে তো বড়লোক হয়ে গেছো দেখছি। তাই তো বলি, আমার লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়। ” চুরির অপবাদ, তাও আবার এরকম অপ্রত্যাশিত সময়ে, শফিক কিছুটা হকচকিয়ে যায়। “স্যার, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

” “নিজে থেকে সব স্বীকার কর, নাহলে আমার টাকা চুরি করে আমার ব্যবসাতেই পার্টনার হওয়ার শখ ছুটিয়ে দেবো। ” চেয়ারম্যান কায়েস উদ্দিন আহমেদের বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই করছে। তার পোষাক আশাক সর্বদাই ভদ্র-মার্জিত। ছেলে আশরাফের মত কথায় কথায় উত্তেজিত হন না। পাশের সোফা থেকে তার গলা ভেসে আসে, “আশরাফ, এতো উত্তেজিত হবার দরকার নেই।

তুমি পলিসি মোতাবেক আগাও। ” এতক্ষনে ব্যাপারটা পরিস্কার হয় শফিকের কাছে। সে প্রস্তাবে তার পার্টনারশিপের জন্য তিন ভাগে ভাগ করে একটা বিনিয়োগের পরিমাণ লিখে দিয়েছিল – তার, কোম্পানীর আর ব্যাঙ্ক ঋণের। সেটাই হয়তো এম,ডি,-কে ভাবিয়ে তুলেছে। সে একটা উত্তর দিতে গেলঃ “এতো টাকা থাকলে তুমি কি আর আমার কোম্পানীতে হাল চাষ করতে নাকি? কত দিন ধরে সরাচ্ছো বল।

ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টকেও খাইয়েছ নাকি? এক্সটার্নাল অডিটরকেও? আমি তো দেখছি দুধকলা দিয়ে এতদিন কালোসাপ পুষেছি। ” “স্যার, আপনি ভুল বুঝছেন। আমার কিছু জমি ছিলো গ্রামে, সেটা…” “চোপ্‌! চুরি করে আবার বাহাদুরি করার চেষ্টা! ভালোয় ভালোয় সব স্বীকার করো, নাহলে কিন্তু পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব!” শফিকের লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। মনে মনে সে ভাবছিল, ভাগ্যিস এই রুমের কথা বাইরে থেকে শোনা যায় না। আনিকা ঠিকই বলে, যতই দাম দেবার ভাব করুক না কেন, কর্পোরেট কালচারের বুলি কপচাক না কেন, মালিক পক্ষ সব সময়ই আলাদা।

প্রকৃত অর্থে তাঁদের কাছ থেকে সন্মান জেতার আশা করা অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার আশা নিয়ে এসেছিলো সে। মনে মনে তখনই রেজিগনেশন লেটারটা সে ড্রাফট করা শুরু করে। কম্পিউটার থেকে লগ আউট করতে করতে শফিক ভাবে এই শেষ সপ্তাহটা ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ সপ্তাহ। প্রিন্ট করা লেটারটা একটা খামে ঢুকিয়ে পিয়নের হাতে বড় সাহেবের জন্য ধরিয়ে দিয়ে সে বেরিয়ে পরে।

অনেকদিন খোলা আকাশটা দেখা হয় না। মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে শফিক আকাশের দিকে তাকায়, অনেক উঁচুতে দু’পাখা মেলে দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে গুটিকয়েক গাঙচিল। সে গাঙচিল হবার স্বপ্ন দেখে, আকাশটাকে ছোঁবার স্বপ্ন দেখে। (৩) পরিবর্তন ফজরের আজানের সাথে সাথে সশব্দে কুলি করে একটা নিমের দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজা শুরু করেন মির্জা হামিদুর রহমান। আশ পাশের দশ গ্রামের মানুষ তাঁকে মির্জা বাড়ীর বড়কর্তা হিসেবে চেনে।

তার পাকা দালানের পাশেই তিনি গড়ে দিয়েছেন এক পাকা মসজিদ। “এলাকার লোকরা দেখুক, বুঝুক, বুইঝা হাত তালি দেক। হ্যারা ত কখনো গাঁও গেরামে পাকা দালান দ্যাখেই নাই। এরপর থেইকা দেখবো। ” পুরো ইউনিয়নের লোকে জেনে গিয়েছে এই কির্ত্তীর কথা।

সবাই বোঝে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেতার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়ে গিয়েছে। এখন প্রচারনা চলছে। মাস্টরের চ্যাংড়া গুলা যতই তিড়িং বিড়িং করে লাফাক, দশ গ্রামের মমিন-মুসলমানদের জন্য কয়টা কাম করসে ঐ মাস্টর? আবার তাকে নসিহৎ করতে এসেছিলো – বলতে এসেছিলো যে মসজিদ না করে একটা পাকা স্কুল করে দিলে ইউনিয়নবাসীর উপকার হতো। হুঁহ্‌, ঐ বুদ্ধি নিয়ে চললে তো মাস্টারেরই লাভ হতো। আবার তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো হচ্ছে! মনে মনে ঠিক করলেন তিনি, একবার ইলেকশনটা জিতলে পরে বুঝিয়ে দেবেন কত ধানে কত চাল।

বাসার পাশে মসজিদ, তাও আবার নিজের করা, কাজেই নামাজ না পড়তে গেলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগে। অতএব, প্রতিদিন অন্তত ফজর, মাগরিব আর এশার নামাজটা জামাতে গিয়ে পড়তেই হয়। এতে অবশ্য লাভই হয়েছে – কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়। নির্বাচন জিতে কী কী উন্নতি করতে চান তিনি তা আরো বেশি বেশি করে ঝালিয়ে নেয়া যায়। মসজিদ ঢোকার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি চিন্তা করলেন রশিদ বড় বেশি বখে যাচ্ছে।

আসলে জন্ম থেকে এতো জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা পেলে নিজের উন্নতি করার আর মন-মানসিকতা থাকে না এটাও তিনি বোঝেন। কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। আর এই শয়তানের দৌরাত্মে পুরো এলাকা অস্থির। সারাদিন বখাটেপনা করে বেড়ায় ছেলেটা। শাসন যে তিনি করেননা তা নয়, তবে ছেলের মা জাহেদা সারাক্ষণ ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়ে রাখেন।

জাহেদা বলেন এই বয়সটাই তো দস্যিপনা করার। বিয়ে দিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সেই উপলক্ষে আবার পাত্রীও দেখা হচ্ছে। তবে পুরো ব্যাপারটার ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন না হামিদ মির্জা। সময়টা খুব খারাপ।

ব্যবসা ভালো না। গঞ্জে তাঁর গোটা চারেক মিষ্টির দোকান আছে, আরো আছে আবাদি জমি আর গবাদি। সমস্যা যখন আসে সব দিক থেকেই আসে। গেলো বছর খরা হল, জমিতে ফসলের আবাদে লোকসান হয়েছে। তাঁর দাদনের টাকাই উঠে নি।

আর মানুষের হাতে খরচ করার মতো পয়সা না থাকায় তা মিষ্টির দোকানেরও ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো এবারের নির্বাচন। এতদূর এসে তো আর ফিরে যাবার উপায় নেই। এখন নির্বাচনটাতে জিতলে আবার সব কিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। জিততেই হবে, এছাড়া আর কোন পথ নেই।

ভ্রুঁ কুঁচকে এতসব ভাবতে ভাবতে ভেতর থেকে ভেসে এলো ইকামতের আওয়াজ। নামাজের সময় হয়েছে।   (৪) উত্থান সুরুজ মিয়ার জুসের দোকানে প্রায়ই তিনি আসতেন। কাঁচাপাকা চুল, সৌম্যদর্শন এই ভদ্রলোককে দেখলেই কেমন যেন সম্ভ্রম জাগে। গঞ্জের এক কোণে ধার দেনা করে শুরু করা ফলের রসের সেই দোকানটি তখনও ততটা পরিচিতি পায়নি।

নসিমনের ব্যবসা বুদ্ধি খুব ভালো। নিজে দায়িত্ব নিয়ে পাই পাই করে দেনা শোধ করে দিয়েছে। সুরুজ মিয়াও জান দিয়ে খেটেছে এই দোকানটাকে দাঁড় করানোর জন্য। মাইলের পর মাইল সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে বেছে বেছে কাঁচা পাকা ফল কিনে আনতো। সেই ফলের জুস তৈরি করে দোকানে পরিবেশন করতো নসিমন।

ছেলে কাচুও স্কুলের পড়া শেষে সময় দিতো দোকানে। তিনজনের পরিশ্রমে গড়ে তোলা দোকানটা ধীরে ধীরে পরিচিতি পেল। সেই কাঁচাপাকা চুল ওয়ালা সৌম্য দর্শন লোকটা সাপ্তাহিক বাজার করতে প্রায়ই আসতো, আর এলেই একবার না একবার ঢুঁ মেরে যেত দোকানাটায়। গরমকালে লেবুর শরবত আর শীতে নারকেলের পানি – একেবারে গঁৎ বাধা অর্ডার করতো। একদিন তিনি সুরুজ মিয়াকে ডেকে বললেন এই ব্যবসা নিয়ে বড় শহরে যেতে পারলে মুনাফা আরো বাড়বে।

সুরুজ মিয়া ঢাকায় কখনো যায়নি। সেই ঢাকায় নাকি এরকম অনেক ব্যবসা আছে, বড়লোক হবার অনেক সুযোগ আছে। আর ঢাকা নাকি গাঁও গেরামের মতো না। সেখানে কেউ কাউকে চেনে না। কামলার ছেলে বলে কাচুকেও আর কেউ গঞ্জের স্কুলে গালমন্দ করবে না।

ভদ্রলোকও বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু বিশ্বাসী কাউকে না পেয়ে এখনো করা হয়ে ওঠেনি। গত তিন বছরে অসংখ্যবার তিনি এই দোকানে এসেছেন। দেখেছেন, বুঝেছেন, বিশ্বাস করার মতো কর্মী মানুষ পেয়েছেন। সেই থেকে সুরুজ মিয়ার উত্থান শুরু।

ঢাকার মতিঝিলে অফিস পাড়ায় একটা ছোট্ট দোকান নিয়ে শুরু করলো সে। কাচু কে সরকারী স্কুলে পড়ালো। বছর পাঁচেকের মাথায় যখন দ্বিতীয় দোকানটা দিলো ততদিনে কাচু কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা সব অবস্থাতেই জীবনের গান গেয়ে যায়। সুরুজ উদ্দিন আহমেদ তাঁদেরই দলে।

না পাওয়ার ভয় তাকেও ভাবায়, অমঙ্গলের শঙ্কা তাকেও গ্রাস করে, তার বুকেও বাসা বাঁধে লক্ষ্যচ্যুত হবার ত্রাস। কিন্তু তার চোখে তখন অনেক স্বপ্ন, মনে তখন অনেক আশা। তখন শুধু ঢাকা নয়, সমস্ত দেশজুড়ে গণ আন্দোলনের জোয়ার স্তিমিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে অস্থির উত্তাল জনতা সবে শান্ত হয়েছে – তারা সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের আশায় উদগ্রীব। শিল্প-কারখানাগুলোতে নিত্য নতুন ব্যবসাবুদ্ধি আর ভোক্তাশ্রেনীতে আকৃষ্ট করতে নব নব বিপণনীর আয়োজনে আর্থসামাজিক দৃশ্যপটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।

প্যাকেট করা ফলের জুস দোকানে দোকানে সরবরাহ করার বুদ্ধিটা তখন মাথায় আসে। ততদিনে সেই শুভাকাঙ্খী আর নেই। তার পরিবার আর বিনিয়োগে উৎসাহী না হওয়ায় সুরুজ মিয়া পুরোটা কিনে নেয়। সূক্ষ্মবুদ্ধির অধিকারী তার সহধর্মিনী নসিমন নিজের মত করে ব্যবসা সাজানোর এই সুযোগটা হাতছাড়া হতে দেয়নি। আস্তে আস্তে পরিচিতি পেলো তাদের পণ্য।

ছেলে কাচু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে তখন পড়াশোনার বাইরের পুরোটা সময় সে ব্যবসায় দিতো। উন্নতি করতেই হবে – এই একটাই মন্ত্র জপে যেত সে সারাক্ষণ। পড়াশোনা শেষ করে যখন পিতার সাথে ব্যবসার হাল ধরলো তখন সে অনেক পরিপক্ক, অনেক ধীরস্থির, সুবিবেচক। এর ফল পেতেও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। সুরুজ মিয়া অনেকটা নিশ্চিত হলেন ছেলেকে তার পাশে সবসময়ের জন্য পেয়ে।

তিল তিল করে গড়ে তোলা কোম্পানীটার হেড অফিস যখন গুলশানে আসলো ততদিনে সুরুজ মিয়ার বয়স হয়েছে। কাজ ছেড়ে তিনি অবসরে গিয়েছেন। কাচুর নিজের সংসার হয়েছে, তার ঘর আলো করে এসেছে সন্তান। স্বপ্নটা বড় হয় – সেই সাথে বড় হয় কোম্পানী। সুযোগ্য হাতে পড়ে তিরতির করে উঠে চলে সমৃদ্ধির পথে।

সুরুজ মিয়ার প্রত্যয়ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে কাচু, হাতে তুলে নেয় দ্রুতবেগে ভেসে চলা নৌকার হাল। সমৃদ্ধি আসবেই - উত্থানের পথে পিতা-পুত্রের প্রতিটি দৃঢ় পদক্ষেপ এই একই ছন্দে আন্দোলিত হয়। (৫) পরিনতি সদর দরজার চৌকাঠে সোনার পানি দিয়ে লেখা নামটা জ্বল জ্বল করে সারাদিন। ফিরোজা বানু দেখেন আর আফসোস করেন। কী সোনার সংসার ছিলো তাঁর! গৃহস্বামীর মনোযোগের অভাবে সব যেন ছারখার হতে চলেছে।

তিরিশ বছর আগে যখন মির্জা বাড়ীর বৌ হয়ে আসেন তিনি তখন মির্জাদের খুব ভালো অবস্থা। অর্থ, সুনাম, প্রতিপত্তিতে তাঁদের সমকক্ষ শুধু এই ইউনিয়নে কেন আশেপাশের কয়েকটা ইউনিয়নে খুঁজে পাওয়া যেত না। সেই বাড়ীরই আজ এহেন ভগ্নদশা। সোনার পানিতে লেখা “মির্জাবাড়ী” নামটা যেন সেই সোনালী অতিতের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর একজন হয়তো আড়াল থেকে সবকিছু দেখে যায় আর মুচকি হাসে।

সেই বছরের সেই নির্বাচনের কথা এখনো মনে আছে ফিরোজা বানুর। তাঁর বিয়ের মাস চারেক পরেই সেই নির্বাচন। বাবা ছিলেন পেঁয়াজের ব্যাপারী। ছেলের যৌতুকে পাওয়া টাকা নির্বাচন লগ্নি করতেই সেই আয়োজন ছিলো জেনেও তিনি রাজী হয়েছিলেন। খুশি হয়েছিলেন মির্জা বাড়ীর সাথে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করতে পেরে।

নিয়তি হয়তো তখনও আড়ালে থেকে মুচকি হাসি হাসছিলো। নির্বাচনে ভরাডুবির ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে মির্জার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হল – প্রায় সাথে সাথেই মারা গেলেন তিনি। সেই থেকে মির্জা রশিদুর রহমানের বড় কর্তা হয়ে ওঠা। সময়টা খুব খারাপ ছিলো। রশিদ মির্জা মদ্যপ – জুয়ার আসর থেকে তাকে হাতি দিয়ে টেনেও ওঠানো যেত না।

জুয়ার চক্রে একে একে বাঁধা পড়ে গেলো আবাদি জমিগুলো। লোকসান খেতে খেতে মিষ্টির দোকান বিক্রি হয়ে গেলো। হাজার বুঝিয়েও রশিদ মির্জাকে কুপথ থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। তবে সেই পতনের দিনগুলিতে ফিরোজা বানু একমাত্র পুত্র শফিককে বুকে আগলে রেখেছিলেন, দূরে রেখেছিলেন পিতার সব ধরণের কুপ্রভাব থেকে। এক সময় আর না পেরে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

বড় স্কুলে পড়িয়েছেন। সেই ছেলে আজ চাকুরি করে। গেলো বছর বিয়ে দিলেন ছেলের। ছেলে এখন অনেক চাইছে তাকে শহরে নিয়ে নিজের কাছে রাখতে। পড়ন্ত বিকেলের নরম রোদে বসে বসে তিনি ভাবলেন রশিদ মির্জার কবরটা ছেড়ে তিরিশ বছর ধরে সযত্নে আগলে রাখা ভিটেটাকে বিরান করে চলে শহরে গিয়ে তাঁর মন টিকত না।

উচিৎ কাজটিই তিনি করেছেন। তাঁর আর কতদিন? এক পা তো কবরেই চলে গিয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে তিনি প্রার্থনা করলেন, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। ” ওপর থেকে কেউ শুনলো কিনা ঠিক বোঝা গেলো না। (৬) বিবর্তন গ্রামের রাস্তায় নগ্নগাত্রে দৌঁড়াদৌঁড়ি থেকে শুরু করে স্কুল পর্যন্ত পদে পদে তিনি শুনে এসেছেন একই গালি - একই অপবাদ।

“কামলার পোলা” – “পন্ডিত হইতে আইসে” – “দূরে যা!” তখনো পরিবর্তনের ছোঁয়া আসেনি গ্রামে, গঞ্জে তখনো জমে ওঠেনি পুঁজিবাদের মনুমেন্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আধুনিক বিলাস-বসনের সম্ভারে উদ্ধত মার্কেট-প্লাজা। ফাস্টফুডের বদলে গঞ্জের লোকেরা তখন চা শিঙাড়াতেই সন্তুষ্ট ছিলো। আর হ্যাঁ, তখন কেবল বড় বাড়ির বড় বড় ছেলেরা বেলা এগারোটার দিকে গোসল সেরে স্কুলপানে দৌঁড়াতো – কামলার ছেলেরা শুধু দূর থেকে দেখতো আর বুকফাটা দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে রেখে নিজ নিজ পরিবারের অন্নসংস্থানকারীর সাথে কর্মস্থলে যেত। এগারো বছরের কাচু কখনো মন খারাপ করতো না। সে জানতো, মন খারাপ করে - শুধু নিজের ওপর নিজেই রাগ করে - কখনো কিছু অর্জন করা যায় না।

অতটুকু বয়সেই সে বুঝে গিয়েছিলো তার পিতামাতার সবটুকু স্বপ্ন জুড়ে শুধু সে-ই আছে। সমাজের আর দশটা লোক যে সামাজিক বিধিবিধানের কাছে নতজানু হয়ে নিয়তিকে মেনে নিচ্ছিলো তার জন্মদাতা সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাকে মানুষের মত মানুষ হবার পথে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলো। অতটুকু বয়সেই সে বুঝে নেয় যে নিয়ম ভেঙে নিয়ম গড়াটা নিয়মের ব্যত্যয় নয় – বরং এটাই প্রকৃত স্বভাব, এটাই ধর্ম। ঢাকায় আসার পর কাচু পড়াশোনার বাইরে পুরোটুকু সময় তাদের ব্যবসায় দিতো। আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে দুই প্রজন্মের হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কাজ করেছে।

কাচু নামটা ধরে আরে কেঊ তাকে ডাকে না। তিনি এখন কায়েস উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, মডার্ণ জুস বার অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। ছেলে আশরাফকে দেশের বাইরে পড়িয়েছেন, সে অবশেষে এসে যোগ দিয়েছে পৈতৃক ব্যবসায়। এরা অনেক সচেতন – দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কোন অবস্থার জন্য প্রস্তুতি নেয়া দরকার এরা ভালো বোঝে, তবু কেন যেন এদেরকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। এদের মধ্যে আবেগ নেই, স্বপ্ন নেই – আছে শুধু যুক্তি।

আজকে একটা লোক রিজাইন করলো। আশরাফ তো বলেই বসলো এ ব্যাটা নাকি মহাচোর। পরে অবশ্য কাগজে কলমে কিছুই প্রমাণ করা যায়নি। এই লোকটাকে আলাদা করে চিনতেন না তিনি। বছর ছয়েক হোল অপারেশন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন, ছেলে আশরাফের ওপর অগাধ ভরসা ছিলো, শুধু দূর থেকে নজর রাখছিলেন।

একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন হাতে ধরা রেজিগনেশন লেটারটাতে। নিচের স্বাক্ষরটা লক্ষ করলেন - “মির্জা শফিকুর রহমান”। মির্জা, মির্জা! নাহ্‌, অন্য কেউ হবে। ক্ষণিকের জন্য নিজের শৈশবে চলে গেলেন। সুরুজ মিয়ার একমাত্র পরিচয় ছিলো সে হচ্ছে মির্জা বাড়ির কামলা, আর কাচুর – কামলার পোলা।

সুদিনের নতুন বাতাসে সেইসব পুরনো স্মৃতিগুলো ফিকে হয়ে এসেছে, সহজে মনে পড়ে না। বাবা-মা-স্ত্রী-পুত্র নিয়ে তার গড়ে তোলা সোনার সংসার দেখে যেতে পেরেছেন সুরুজ মিয়া। শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে তৃপ্তি নিয়ে দেখে গিয়েছেন তার সারা জীবনের পরিশ্রমকে স্বার্থক হতে। জীবন থেমে থাকে না। জীবন এগিয়ে চলে।

সুরুজ মিয়া যে জীবনের স্বপ্ন দেখে গিয়েছিলেন, কাচু তা পূরণ করতে থাকে। রচিত হয় নতুন গল্প – লেখা হয় নতুন উপন্যাস। সময়ের সাথে সাথে জীবনের বিবর্তনে ঘুরপাক খায় সুরুজ মিয়া, কাচু, আশরাফ, হামিদ মির্জা, রশিদ মির্জা, শফিক মির্জা। গল্পটা চলতেই থাকে, ঘড়ির কাঁটার মতন, নিরন্তর। (সমাপ্ত)


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।