আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির সেই নেতারা এখন কি করবেন

দুঃসময়ে দলের পাশে দাঁড়াতে চান বিএনপির সেই নেতারা। অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন তারা দলের মূল স্রোতে ফেরার অপেক্ষায়। ওয়ান-ইলেভেনে কথিত সংস্কারপন্থি বলে খ্যাত প্রায় অর্ধশত সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এখনো দলের বাইরে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে দলের বাইরে থাকলেও নতুন কোনো দলে যুক্ত হননি এক সময়ের প্রভাবশালী এসব নেতারা। এখনো তারা দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। দল থেকে সাড়া না পেয়ে অনেকের মধ্যে হতাশাও রয়েছে। তারপরও কেউ কেউ নিজ এলাকায় বিএনপির পক্ষে নানা কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হুদাকেও দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দলের ঐক্যকে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই সংস্কারপন্থিদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে একই ভুল যেন না করে সে ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন সরকারবিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করতেই দলের মধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করাতেই বিএনপির নীতি নির্ধারকরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল ও পরশু রাতে সংস্কারপন্থি বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর বনানী ও নিকুঞ্জে পৃথক দুই বাসায় এসব বৈঠকে সংস্কারপন্থি নেতারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এখন কে ডানে কে বামে, কে উত্তরে কে দক্ষিণে, কে উঁচু কে নিচু তা দেখার সময় নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে সাবেক নেতাদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সংস্কারপন্থি নেতাদের অধিকাংশই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। এখনো তাদের অনেকেই এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও আগের মতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ভয় পাচ্ছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ওইসব নেতাদের দলে নেওয়া সময়ের দাবি বলে মনে করেন অনেকে। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে এদের অনেকেই দলীয় মনোনয়নও পাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের বাইরে থাকা বিএনপির এসব নেতার মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, সাবেক সচিব কবি মোফাজ্জল করীম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ, পিরোজপুর জেলা সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক হুইপ রেজাউল বারী ডিনা, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, সাবেক এমপি, সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, চাঁদপুরের সাবেক জেলা সভাপতি এস এ সুলতান টিটু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হায়দার খান, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, সাবেক এমপি বরগুনার সাবেক জেলা সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি, সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, বরিশালের সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, ঝালকাঠির সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো, পিরোজপুরের সাবেক এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাবেক হুইপ খলিলুর রহমান, সাবেক এমপি আব্বাসী, সাবেক এমপি শাম্মী শের, সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি আবদুল গনি প্রমুখ। সংস্কারপন্থি হিসেবে না থাকলেও দলের বাইরে রয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। তিনিসহ তার ছেলে ও মেয়ের নামে মামলা দেওয়া হয়েছিল। তবে দেশে ফিরে মনোনয়নবঞ্চিত হন। দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী ও নাজমুল হুদাও দলের বাইরে। তাদের ব্যাপারেও বেগম জিয়া ইতিবাচক বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চান বেগম খালেদা জিয়া। ঈদুল ফিতরের পর এ দাবি নিয়ে টানা কর্মসূচি দেবেন তিনি। এ লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতাদের একই প্লাটফরমে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে। এরই মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি আহমদকে ১৮ দলীয় জোটভুক্ত করা হয়েছে। বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে রয়েছেন। অন্য নেতাদের সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিএনপির পক্ষে কাজ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রমজানের পর বিএনপিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে বলেও মনে করেন তারা। বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেনের এখন অলস সময় কাটছে। রাজধানীর নিকুঞ্জে নতুন বাসায় থাকেন। আগে থাকতেন টিকাটুলীতে। কিন্তু এখন আগের মতো নেতা-কর্মীদের আনাগোনা নেই। অনেকটা একাকীত্বেই সময় কাটে তার। মাঝে মধ্যে নীরবে-নিভৃত্বে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে ঘুরে আসেন। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখনো তাকে চান বলে দাবি আশরাফ হোসেনের। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমি পাইনি। আমি রাজনৈতিক কর্মী। শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করেছি। তাই প্রস্তাব পেলে অবশ্যই দলে ফিরব। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নজির হোসেন জানান, এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এখনো তার যোগাযোগ রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, শীঘ্রই দল তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমরা দলের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে চাই। দলে আমরা সক্রিয় হতে চাই। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যে নতুন ধারার রাজনীতিক কথা বলছেন, আমি বিশ্বাস করি- সবাইকে নিয়ে তিনি এই ধারার রাজনীতি করবেন। সাবেক মন্ত্রী এমপিদের দলে নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ইতিবাচক উল্লেখ করে সাবেক এই এমপি বলেন, শহীদ জিয়ার রাজনীতির সঙ্গে ছিলাম আছি এবং থাকব। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.