আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই শিক্ষার্থীদের কী হবে!

রাজনৈতিক অস্থিরতায় সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে থমকে গেছে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। ক্লাস-পরীক্ষা আর বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ঘরে-বাইরে নেই নিরাপত্তা। গোলাগুলি, বোমা হামলা আর আগুনে পুড়ছে মানুষ। বছরের শেষ সময়ে পরীক্ষার মৌসুমে বার বার পরিবর্তন করতে হচ্ছে পরীক্ষার তারিখ। সময় পরিবর্তন করেও দিশা পাচ্ছে না শিক্ষা প্রশাসন। ছুটির দিনেও নিতে হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও শুক্রবারের পর দিনেও অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ায় আর নেওয়া যাচ্ছে না পিছিয়ে দিয়ে নতুন সময় নির্ধারণ করা শনিবারের পরীক্ষা। বার বার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন এবং দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্তিরতার বিভীষিকাময় চিত্র দেখে পড়ালেখা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন ৪ কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

এদিকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলমান বার্ষিক পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার তারিখ পূর্ব ঘোষিত হলেও বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না হওয়ার ঘোষণা পাচ্ছে। আবার অনেক বিদ্যালয় আগে থেকে কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছে আরেক বিপাকে। জীবন বাজি রেখে সন্তানকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে বলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ঠিক সময়ে পরীক্ষা শেষ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার এমন সংকটের মুহূর্তে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন সমস্যা পুরো দেশের। সমস্যা সবার। তবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা একটু বেশি। তাদের এখন পরীক্ষার সময়। তারা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এটা বড় রকমের ক্ষতি। দেশের ভবিষ্যতের ক্ষতি। আমাদের রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য নয় ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করেন। এ রাজনীতি দেশের জন্য অসম্ভব ক্ষতিকারক।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'দেশের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এ সংঘাত স্বল্পমেয়াদি হবে বলে মনে হয় না। তাই সবার প্রতি অনুরোধ অন্তত পরীক্ষাগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখুন।' অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার জন্য রাজনীতি দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না। দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তানকে অন্তত পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করবে। গরিব বাবা মেয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে রাত জেগে হোটেলে পাহারা দেয় নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু রাজনীতিবিদদের চেতনাবোধ ফিরে আসে না হরতাল-অবরোধ দিয়ে লাখো বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভাঙতে। এখন পরীক্ষার সময় রাজনীতিবিদদের বিষয়টি ভাবা উচিত। মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা বাসাবো আহমেদবাগের বাসিন্দা লাকি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, হরতাল-অবরোধের সময়েও ভোর বেলায় আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে সন্তানদের নিয়ে বিদ্যালয়ে যাই। পরীক্ষার দিনে স্কুলে গিয়ে জানতে পারি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা সন্তানদের নিরাপদে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাই। দেশের এ পরিবেশ চাই না। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক কল্লোল দেশের এমন পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে এসএমএস দিয়ে সবাইকে স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা আগে। এই শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে যাবে। হরতালের জন্য তাদের এ লেভেল, ও লেভেল পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল হরতালে পরীক্ষা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এ দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদরাই নষ্ট করছেন। আমরা এর অবসান চাই। জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বই মুদ্রণের কাজ শেষ। কিছু উপজেলায় নতুন বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সারা দেশের উপজেলাগুলোয় বই পাঠানোর ঘোর মৌসুম এখন। কিন্তু যেভাবে পরিবহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে বই পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি বইয়ের ট্রাকে আগুন দেয় সেই বই আবার ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া কঠিন। হরতাল-অবরোধের কারণে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় স্থগিত হয়ে গেছে ভর্তি পরীক্ষা। স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর। নতুন ভাবে তৈরি হচ্ছে সেশনজট। আর উচ্চশিক্ষা শেষ করার মুহূর্তেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় হতাশায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরও প্রায় ৩০ লাখ। এখন চলছে পরীক্ষার মৌসুম। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষাও চলছে। ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। আগের সময়সূচি অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের অবরোধের কারণে দুই দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। এর আগে ৪ নভেম্বর শুরু হয়ে সদ্য শেষ হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) ১১টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে ৬টিই পেছাতে হয়েছে। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ভয়াবহ সেশনজট। এর মধ্যে বার বার পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন আরও অভিশাপের মধ্যে পড়েছে। বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন পরীক্ষা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.