বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি সফল গণযুদ্ধ। এই সফল সংগ্রামের মূল ক্রীড়নক ছিলেন আমাদের গেরিলা যোদ্ধারা। আর গেরিলারা উঠে এসেছিলেন সমাজের একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে। বিচ্ছিন্নভাবে গোটা নয় মাসজুড়েই গেরিলাদের দেশরক্ষার চেষ্টা থাকলেও মূলত মে-জুন-জুলাই এই তিন মাস প্রশিক্ষণের পর দেশে প্রবেশ করে হাজারও প্রশিক্ষিত গেরিলা। এই প্রশিক্ষিত গেরিলাদের মূল লক্ষ্য ছিল হিট-অ্যান্ড-রান পদ্ধতিতে পাকিস্তান বাহিনীকে নিয়মিত আক্রমণের মাধ্যমে বিপর্যস্ত রাখা।
আর এ ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হয়েছিলেন তার প্রমাণ আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। আর একজন গেরিলা যোদ্ধা হয়েও যুদ্ধে কত বড় ভূমিকা রাখা যায়_ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ কাদের সিদ্দিকী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য নাম। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম যাকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে কল্পনা করাও কঠিন। মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধ শুরু করেন এই অসম সাহসী বীর।
তার নেতৃত্বে যে কাদেরিয়া বাহিনী গড়ে ওঠে তার নিয়মিত সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার। আর স্বেচ্ছাসেবক সদস্য ছিল প্রায় ৭২ হাজার। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে তিনি সাক্ষাৎ আতঙ্ক বলে বিবেচিত হতেন। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সব সেক্টর কমান্ডারের সম্মিলিত সাফল্যের চেয়েও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একক সাফল্য অনেক বেশি। মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের সিদ্দিকী ছিলেন টাঙ্গাইলের এক জেলা পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতা।
বড় ভাই শক্তিমান রাজনৈতিক নেতা লতিফ সিদ্দিকীর অনুপ্রেরণায় তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের সৈনিক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতাদের এলাকা ত্যাগের পর চারদিকের অসহায় পরিবেশের মধ্যে প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্ব তুলে নেন নিজ হাতে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল ও ধারে কাছের জেলাগুলোর বিশাল এলাকা কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হতো।
কাদেরিয়া বাহিনীর গেরিলারা মুক্তিযুদ্ধে এককভাবে যে সাফল্য দেখিয়েছেন এর তুলনাই নেই।
এ বাহিনীর হাতে সর্বাধিক সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য যেমন হতাহত হয়েছে তেমন তাদের হাতে আত্দসমর্পণকারী হানাদার সৈন্যের সংখ্যা সর্বাধিক। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। একবার আহত হলেও প্রতিবারই তিনি শত্রুদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করতে সক্ষম হন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অভিযানে মিত্রবাহিনীর পক্ষে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাভূত করা সম্ভব হয় কাদেরিয়া বাহিনীর সহযোগিতার কারণে। কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তাঞ্চলে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে সৈন্য নামায় মিত্রবাহিনী।
ঢাকা জয়ের অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কাদেরিয়া বাহিনী। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছিলেন যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্দসমর্পণও অনুষ্ঠিত হয় কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে। মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীই একমাত্র বীর উত্তম উপাধির অধিকারী যিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অস্ত্র সমর্পণ করেন।
তার বাহিনীর জমা দেওয়া অস্ত্রের পরিমাণ ছিল এক লাখ চার হাজার। *কালাম আজাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।