আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর এবার ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলছে দর কষাকষি। মহাজোট নয়, ১৪ দলগতভাবে নির্বাচন হলে এবার শরিকদের দেওয়া হতে পারে ১৫টি আসন। বিএনপি নির্বাচনে এলে এবং জাতীয় পার্টি মহাজোটে ফিরে এলে তাদেরও দেওয়া হতে পারে ৭০টি আসন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলীয় সূত্রমতে, আজ সোমবার বা আগামীকাল মঙ্গলবার জোট প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শরিকদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকেই শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকের আগে প্রাথমিকভাবে আলোচনার জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল আগামী সোমবার, যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর। শুক্রবার জোটের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা ঘোষণার আগে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, যদিও আমরা আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তু করেছি। এর সঙ্গে আমরা আমলে নিয়েছি যে, আমরা ১৪ দল এবং মহাজোটের অংশ। সুতরাং সব কিছু নিয়েই এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরে জোটের সঙ্গে প্রার্থী সমন্বয় করা হবে। সৈয়দ আশরাফের এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিএনপি এলে আওয়ামী লীগ মহাজোটগতভাবেই নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিগত নির্বাচনের মতোই বৈঠক করে জোটগত প্রার্থী ঠিক করা হবে। এ জন্য দলের সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরেই জোট-মহাজোটের বাইরে থাকা বাম ঘরানা ও ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের। ইসলামী সমমনা কয়েকটি দল নির্বাচনে আসা এবং জোটবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক হলেও বাম ঘরানার দলগুলো জোটেও আসবে না এবং একতরফা নির্বাচন হলে অংশও নেবে না বলে জানিয়েছেন। ১৪ দলসূত্র জানায়, আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। একের পর এক বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই চলছে শরিকদের দর কষাকষির পালা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জোট নেত্রী শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, চলমান সংকটের মধ্যে নির্বাচন করতে শরিকদের পাশে চায় আওয়ামী লীগ। আর শরিকরাও এই সুযোগের সৎব্যবহার করে আসন নিয়ে দর কষাকষি করছেন। জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবার অন্তত ১০ থেকে ১৫টি আসন দাবি করবে। পাশাপাশি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ) একই পরিমাণ আসন চাইতে পারে। আর গণতন্ত্রি পার্টি ৫টি আসন চাইবে। এ ছাড়াও অন্যান্য শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দল (এমএল), ন্যাপ মোজাফফর, গণআজাদী লীগ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ২টি করে আসন চাইবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নবম জাতীয় নির্বাচনে জাসদ ৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে ৩টিতে জয় লাভ করে, ১টিতে হেরে যায়। ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি আসনের মধ্যে ২টিতে জয় পায়, ১টিতে হারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে জাসদের শতাধিক নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জাসদ ১২০টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫টি এবং গণতন্ত্রি পার্টি ৪০টি, ন্যাপ (মোজাফফর) ৭৪টি দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র বিতরণ করেছে। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিরোধী জোট অংশ না নিলে সমমনা আরও কয়েকটি দল নিয়ে ১৪ দল পুনর্গঠন করা হবে। আর জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নেবে। বিন্তু বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করবে ক্ষমতাসীন জোট। এই দুটি দিকই সামনে রেখে এগোচ্ছে ১৪ দল। সবে মাত্র জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টিকেও তাই সহসাই ছাড়ছে না আওয়ামী লীগ। থেমে নেই কাছে টানার প্রচেষ্টা। তবে ভেতরে ভেতরে চলছে আসন নিয়ে দর কষাকষি। জানা গেছে, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এইচএম এরশাদের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৭, রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮, হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২, এলাকায় আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। আবার যেসব আসন শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে সেসব আসনে দুর্বল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য অনেক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বা প্রভাবশালী নেতাদের না দিয়ে নতুন দুর্বল মুখকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে জাপার এরশাদকে খুশি রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, এদিকে জাতীয় পার্টি মহাজোট ছাড়লেও কয়েকজন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়া এবং নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২৯৯ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা কার্যত মহাজোটের সুযোগ রেখেছে। নির্বাচনে বিএনপি এলে এরশাদ আবার মহাজোটে ফিরে আসবে বলেও মনে করে ১৪ দল। তাই তাদের সঙ্গে নীতিগত আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আসন বণ্টনের ব্যাপারে জোটগত প্রাথমিক বৈঠক হয়ে গেছে। এখন নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। এ ব্যাপারে তিনি দুই-এক দিনের মধ্যেই বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষমতা তাকে দেওয়া আছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মলি্লক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের শরিকদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। খুব শীঘ্রই আসন বণ্টনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ১৪ দল ও মহাজোট উভয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। গণতন্ত্রি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে আমাদেরও প্রার্থী থাকবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।