আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বস্তি এনেছে শুভ উদ্যোগ

‘আমি রক্ত দিতে চাই। আমার রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ। ’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঢুকেই আবাসন ব্যবসায়ী আতাউর রহমান সরাসরি এ কথা বললেন। অবরোধের যাবতীয় আতঙ্ক উপেক্ষা করে তিনি এসেছেন রাজধানীর বারিধারা থেকে।
একই সময়ে ইস্কাটন থেকে দুই যুবক এসে হাজির।

তাঁরাও রক্ত দেবেন, গ্রুপ ও নেগেটিভ।

গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ চালক মাহবুব আলমের রক্তের গ্রুপ ও-নেগেটিভ। দুষপ্রাপ্য এই রক্তের জন্য এই গরিব চালকের স্বজনদের ছোটাছুটির খবর গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। তাতেই ছুটে আসেন এই তিন যুবক। মানুষের শুভ উদ্যোগ মাহাবুবের স্বজনদের চিন্তামুক্ত করেছে।



রক্তদাতা আতাউর রহমান বললেন, ‘শুধু আমরা নই, রক্তের প্রয়োজন হলে আরও পরিচিতদের নিয়ে এসে ব্যবস্থা করব। ’ যোগাযোগের জন্য বার্ন ইউনিটে নিজেদের নাম-ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যান তাঁরা।

হিংস্রতা আর মানবিকতার যুগপৎ প্রদর্শনী ছিল গতকালের বার্ন ইউনিটে। রক্ত, অর্থ আর ওষুধ নিয়ে অনেকে এসেছেন দগ্ধদের পাশে দাঁড়াতে। অনেকে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ফোন করে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা জানতে চেয়েছেন।



বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পালের কক্ষে গিয়ে দেখা মিলল বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিনিধি ইমরান হাবিবসহ দুজনের। ইমরান বললেন, ‘অনেক প্রয়োজনীয় ও দামি ওষুধ রয়েছে, যা হাসপাতালে নেই। এ ধরনের ওষুধ আমরা বাসদের পক্ষ থেকে দগ্ধদের জন্য সরবরাহ করতে চাই। সে জন্য ওষুধের তালিকা নিতে এসেছি। ’

মানুষের এমন শুভ উদ্যোগকে সার্থক করতে এগিয়ে এসেছে বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষও।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা টি এম মনোয়ারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রক্তদানে ইচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার জন্য। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর: ০১৭২১২৩৯৭২৯।

বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামন্তলাল সেন বলেন, ‘এখন রোগীদের স্বার্থেই আমাদের ভিড় কমাতে হবে। যাঁরা সাহায্য করতে চান, তাঁরা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। ’
হরতাল-অবরোধে দগ্ধদের অন্তত ৩৪ জন এখন বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।

তাঁদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। আয়-উপার্জনের সব পথ বন্ধ, এখন কেবলই খরচ হচ্ছে।
অনেক মানুষের এমন পাশে এসে দাঁড়ানোয় দরিদ্র মানুষগুলোর স্বজনেরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।

অন্তত ১০ জন দগ্ধ ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা শান্তিনগরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮০০ টাকা করে প্রতি ব্যাগ সাদা রক্ত (ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা/ফ্রেশ প্লাজমা) কিনেছেন। কেউ স্বেচ্ছায় রক্ত দিলেও ওই প্রতিষ্ঠান সাদা রক্তে রূপান্ত করতে একই টাকা নেয়।

কিন্তু অনেক রোগীরই টাকা খরচের সামর্থ্য কমে আসছে।

চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত আগুনে পুড়ে মানুষের রক্তের ‘অ্যালবুমিন’ প্রোটিনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে। দগ্ধ ব্যক্তির জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। আর অ্যালবুমিনসহ যাবতীয় উপাদান থাকে সাদা রক্তে।



গতকাল দুপুরে অগ্নিদগ্ধ সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. রুবেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কাঁদছিলেন স্ত্রী নাসিমা বেগম। গত ২৫ নভেম্বর চাঁদপুরের কচুয়ায় অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগে দগ্ধ হয়েছিলেন রুবেল। নাসিমা বললেন, ‘ডাক্তাররা বলছে অনেক সাদা রক্ত লাগব। সোমবার ষোলো শ ট্যাকা দিয়া শান্তিনগরের তন দুই ব্যাগ আনাইছি। ’ এখন টাকাও নাই, আবার রক্ত এনে দেবে এমন কোনো স্বজনও কাছে নাই।

রুবেলের রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ।

পাশের বেডেই রক্তের জন্য হাহুতাশ করতে দেখা গেছে দগ্ধ রিয়াজ হোসেনের স্বজনদের। গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে বাসে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়া ১৯ জনের মধ্যে রিয়াজ একজন। রিয়াজের রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ।
চারতলায় গিয়ে কথা হয় একই ঘটনায় দগ্ধ কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগমের সঙ্গে।



বিউটি বেগম বলেন, চিকিৎসক বলেছেন, যেকোনো সময় রক্ত লাগতে পারে। রক্ত কিনতে হবে বলে প্রয়োজনীয় কিছু কাজে খরচ না করে হাতে টাকা রেখেছেন তিনি। এই সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় থাকা রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ। ওই বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন রহমান বলেন, হরতাল-অবরোধে দগ্ধ ব্যক্তিদের জন্য গতকাল থেকে তাঁরা বিনা মূল্যে সাদা রক্তে রূপান্তর করার কাজ শুরু করেছেন।

সালাহউদ্দিন রহমান বলেন, রক্ত দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বার্ন ইউনিটে গিয়ে কার কোন গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন, তা জেনে সেখানকার চিকিৎসকের সিল-স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে এলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হবে।

এরপর প্রক্রিয়ার মাধ্যম তা সাদা রক্তে রূপান্তরিত করে দগ্ধ ব্যক্তিকে দেওয়া হবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।