১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে অভিষেক ঘটে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের। তবে দলটির উত্থান ঘটে মূলত ১৯৯৪ সালের পর থেকেই। সেবারই তারা কাগজ-কলমে সেরা দল গড়তে সক্ষম হয়। আর সেবারই ফেডারেশন কাপ ফুটবলে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই শিরোপা জিতে নেয়। আরও দুবার এ আসরে সাফল্যের পতাকা ওড়ালেও পরবর্তীতে শিরোপা দূরের কথা, ফাইনালেই উঠতে পারেনি তারা।
প্রায় আট বছর পর শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে এবার। গতকাল সেমিতে বিজেএমসিকে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে পরাজিত করেছে মুক্তিরা। ১৩ ডিসেম্বর প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে এবারে টপ ফেবারিট শেখ জামাল ধানমন্ডিকে। শক্তির বিবেচনায় শেখ জামালের জেতার সম্ভাবনা থাকলেও এত দূর আসার পর তো মুক্তিযোদ্ধাকে ফেলে দেওয়া যাবে না। মুক্তিতে এবার তারকা বলতে গোলরক্ষক আমিনুল ও এনামুলই।
এর পরও তাদের ফর্মে আগের সেই ভয়ঙ্করী ছাপ নেই। তবে দলবদল সম্পন্ন করার পর কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক দৃঢ়ভাবেই বলেছিলেন, 'যে দল আমি পেয়েছি তাতে মৌসুমটা ভালোভাবে পার করতে পারব। '
ফুটবল ক্যারিয়ারে নিজেকে তেমনভাবে তুলে ধরতে না পারলেও প্রশিক্ষক হিসেবে রীতিমতো সাড়া জাগাতে পেরেছেন। বাংলাদেশে পাঁচজন সেরা কোচের মধ্যে অবশ্যই মানিকের নাম ঠাঁই পাবে। সুতরাং তিনি যখন দলের ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী তখন অনেকেই বলেছিলেন, মানিক নিশ্চয়ই চমক দেখাতে পারবেন।
সত্যি বলতে কী, সেই চমকের প্রথম প্রমাণটা মিলেছে ফাইনালে উঠেই। আবাহনী, শেখ রাসেল ও মোহামেডানের মতো শক্তিশালী দল থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধা যে ফাইনালে জায়গা পাবে তা ছিল অনেকের ধারণার বাইরে। যাক, ধারণা না থাকলেও বাস্তবে মানিকের শিষ্যরা শক্তির পরিচয় দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে। সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ বিজেএমসিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। টাইব্রেকার হলেও কোয়ার্টার ফাইনালে তারা শেখ রাসেলকে হারিয়েছে।
তাই শুরু থেকেই শনিবার মুক্তিযোদ্ধা ছিল সব পজিশনে সতর্ক। প্রয়োজন বুঝেই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মার্কিংয়ে রেখেছিল তারা। কেউ কেউ বলতেন, কোচ হিসেবে আত্দপ্রকাশ করার পর মানিক অধিকাংশ সময়ই তারকা খেলোয়াড়দের পেয়েছেন। তাই তার সাফল্য নিয়ে গুণকীর্তন করাটা ঠিক হবে না। কিন্তু এ যুক্তি যে হাস্যকর তা অন্তত মৌসুমের প্রথম আসরে প্রমাণ দিতে পেরেছেন।
শেখ রাসেল থাকার পরও তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। এরপর ফাইনালে খেলাটা তো আর ভাগ্যের জোরে আসেনি। ক্যারিশমা দেখিয়ে এখন তারা ফেডারেশন কাপে হারানো ট্রফি ফিরে পেতে অপেক্ষায় রয়েছে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে তুলনামূলকভাবে মুক্তিযোদ্ধা বেশি আক্রমণ চালালেও প্রথমাধের্্ব গোলের দেখা পায়নি। শেষ পর্যন্ত ৭৬ মিনিটে তারা এগিয়ে যায়।
এ সময় পারভেজের কর্নার থেকে চমৎকার হেডে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠান কিংসলে এলিটা। জয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখনই মুক্তিযোদ্ধার চেহারা মলিন হয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার চার মিনিট আগে বদলি গোলরক্ষক লিটনের সঙ্গে বিজেএমসির স্ট্রাইকার বাঙ্গুরা ধাক্কা খেলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধা এ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানালেও পরে অতিরিক্ত সময়ে খেলতে নামে। ৩০ মিনিটে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি।
শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জয়ের হাসি হাসে মানিকের শীর্ষরা। তার দলের এনামুল, বিপ্লব, রাখাইন, কোচা ও এলিটার শট জালে গেলেও বিজেএমসির রনি, বাঙ্গুরা ও ইতেজ গোল করলেও তারার শট গোলরক্ষক লিটন সেভ করায় মুক্তিযোদ্ধা ফাইনালে উঠে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।