আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোকে শ্রদ্ধায় মহানায়ককে বিদায়ের প্রস্তুতি

দীর্ঘ জীবন আর বিশাল অর্জন তাঁর। কালের মহানায়ক তিনি। মহানায়ককে বিদায় জানাতে বিশাল প্রস্তুতি শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শোক আর শ্রদ্ধা নিবেদনে ১০ দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৫ ডিসেম্বর বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করা হবে। আর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতারা।

শোক আর শ্রদ্ধা: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা ম্যান্ডেলার মহাপ্রয়াণ হয়েছে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে। এর পর থেকে শোকে কাতর পুরো দেশ।

পিতার জন্য শোক করছে, শ্রদ্ধা জানাচ্ছে পুরো জাতি। পাশাপাশি নিজেদের প্রথা আর ঐতিহ্য অনুযায়ী নাচছে-গাইছে, বাদ্য বাজাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেছেন, ‘মহান বিপ্লবীর জীবনকে স্মরণ করে আমাদের উচিত শোকের পাশাপাশি গলা ছেড়ে গাওয়া, নাচা অথবা মন যা চায়, তা-ই করা।

’ প্রিয় মাদিবার জন্য সত্যিকার অর্থে তা-ই করছেন তাঁর দেশের মানুষ। শুক্রবারের মতো গতকাল শনিবারও কেপটাউন, প্রিটোরিয়া, জোহানেসবার্গসহ দেশের প্রতিটি কোণে তাঁরা মোমবাতি জ্বেলে স্মরণ করেছেন ম্যান্ডেলাকে, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁকে।

ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর গতকাল প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে তাঁর পরিবার। পরিবারের মুখপাত্র লে. জেনারেল থেমবা টেমপ্লেটন মাতানজিমা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের স্তম্ভ সরে গেছে। কিন্তু আমাদের হূদয় ও অন্তরে তিনি সব সময় থাকবেন।

’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জন্য গত দুটি দিন মোটেও সহজ ছিল না এবং সামনের দিনগুলোও তা হবে না। কিন্তু সবখান থেকে সময়মতো যে সমর্থন আমরা পাচ্ছি, তাতে সবকিছু আপাতত ঠিকঠাকভাবে চলছে। ’

প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা গত শুক্রবার জানান, ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করা হবে ১৫ ডিসেম্বর, তাঁর জন্মস্থান ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের কুনু গ্রামে। এর আগে ১০ দিন ধরে চলবে শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। আর তা শুরু হয়ে গেছে শুক্রবার থেকেই।

আজ রোববার জাতীয় প্রার্থনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশজুড়ে গির্জা, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও সিনাগগসহ অন্যান্য প্রার্থনালয়ে প্রার্থনায় বসবেন দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী। যে মানুষটি বর্ণবাদে বিভক্ত এক সমাজকে এক করে তাদের শান্তির ব্যবস্থা করে গেলেন, তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করবেন পরম করুণাময়ের কাছে।

ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানটি হবে ১০ ডিসেম্বর জোহানেসবার্গের এফএনবি স্টেডিয়ামে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায় এই স্টেডিয়ামেই শেষবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

প্রায় এক লাখ মানুষ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওই স্টেডিয়াম সেদিন কানায় কানায় ভরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই হতে যাচ্ছে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় শোক ও স্মরণানুষ্ঠান।

এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ম্যান্ডেলার মরদেহ রাখা হবে রাজধানী প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এটাই ছিল ম্যান্ডেলার কর্মস্থল।

প্রতিদিন সকালে মর্গ থেকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে ওই ভবনে। এ সময় রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন তাঁর দেশের মানুষ। এ ছাড়া ওই তিন দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে তাঁকে শেষ বারের শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বিশেষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। এর মধ্যে প্রথম দিনটি থাকবে শুধু বিশেষ মর্যাদাবান ব্যক্তিদের জন্য। এ ছাড়া ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর অন্যান্য প্রাদেশিক রাজধানী ও ছোট শহরগুলোতেও আয়োজন করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানের।

১৪ ডিসেম্বর একটি বিশেষ সামরিক বিমানে করে ম্যান্ডেলার মরদেহ প্রিটোরিয়া থেকে নেওয়া হবে ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের প্রধান শহর এমথাথাতে। ম্যান্ডেলা পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন ওই বিমানে। এমথাথা বিমানবন্দর থেকে সেনাবাহিনীর পরিবহনে করেই মরদেহ নেওয়া হবে ম্যান্ডেলার নিজের গ্রাম কুনুতে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের কাছে। দিনভর প্রথাগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা থেকে পরদিন ১৫ ডিসেম্বর আয়োজন করা হবে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান।

এরপর ম্যান্ডেলা চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন জন্মস্থান আর শৈশবের স্মৃতিমাখা কুনু গ্রামে।

থাকবেন বিশ্বনেতারা: দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওবামা বলেছিলেন, তাঁর সত্যিকারের নায়ক হলেন ম্যান্ডেলা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই প্রেসিডেন্টও স্ত্রীদের নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেন ম্যান্ডেলাকে শ্রদ্ধা ও বিদায় জানাতে। তাঁরা হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন।

১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, তখন নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ক্লিনটন।

এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও মর্যাদাবান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেবেন ম্যান্ডেলার বিদায় অনুষ্ঠানে। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.