আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরম অস্তিত্ব সংকটে জামায়াত

চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অন্যতম শরিক এ দলটি অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে এখন প্রচণ্ড চাপের মুখে। ফলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন কৌশল নিয়েছে তারা। এর অংশ হিসেবে স্কুলপড়ুয়া সাদাসিধে ছেলেদের টার্গেট করেছে দলটি। বাগে এনে তারা এদের পরিচালিত করছে ভুল পথে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এখন দেখা যাচ্ছে এসব স্কুলপড়ুয়াদের মাঠে নামতে। আর তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের আওতায় আনতে তারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। প্রতিদিনই খুলছে ভুয়া নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট। তৈরি করছে নানা রসালো ভুঁইফোড় ব্লগ। এগুলোর সফলতা নিশ্চিত করতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বিশেষ করে এর ছাত্র শাখা শিবির। এগুলোর মাধ্যমে তারা আকৃষ্ট করছে স্কুলপড়ুয়া তরুণদের। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে কোমলমতি কিশোরদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং দলে ভেড়ানো। একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তাদের গড়ে তোলা। নিজেদের বেদনায় তাদের সমব্যথী করা। এর আগে এক সময় ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে সরলমনা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেও তা খুব কাজে আসেনি। জামায়াত সেই ১৯৪১ থেকে মানুষকে ধর্মীয়ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এলেও এক্ষেত্রে তাদের সফলতা খুব কমই। দীর্ঘ সময় রাজনীতির মাঠে বিচরণ করলেও তাদের এই ভুল পদক্ষেপের কারণে কোনো নির্বাচনেই দলটি ৩ শতাংশের বেশি ভোট এ যাবত টানতে পারেনি। এত দিনে অবশ্য লোকজন বুঝে গেছে যে, যদিও জামায়াত নিজেদের ধর্মভিত্তিক দল বলে পরিচয় দেয়, মূলত ধর্মের কিছুই পালন করে না তারা। তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। যেমন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই বলে গেছেন, নামাজ ইসলামের ভিত নয়। এটি শুধুই একটি প্রশিক্ষণ বা চর্চার বিষয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা। অন্যদিকে শিবির বলে থাকে, যে কিনা প্রতিদিন নামাজ কায়েম করবে না, সংগঠনে তার জায়গা নেই এবং মেসে তাদের খাবার বন্ধ। এটি ধড়িবাজি বৈ কিছুই নয়।

জামায়াত শুধুই ছেলে শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে থাকে। তাদের কাছে নারী নেতৃত্ব 'হারাম'। তারা নারীশিক্ষার বিরুদ্ধাচারী। দলটি কোনোভাবেই নারীর ক্ষমতায়নের বিশ্বাসী নয়। তারা চায় নারীকে চার দেয়ালে আটকে রাখতে। তাদের ভয়, শিক্ষিত হলে মুক্তমনা ও যোগ্য হয়ে উঠতে পারে নারী। তারা হয়ে উঠতে পারে জামায়াতকে উপেক্ষা করার মতো কেউ। জামায়াত বলে থাকে, নারী শুধু সন্তান জন্মদান, তাদের প্রতিপালন ও গৃহকর্মের জন্য।

জামায়াতের কর্মকাণ্ড একাত্তরে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। ওই সময় তারা ছিল অমানবিক, বর্বর। ওই সময়কার কৃতকর্মের জন্য বহু জামায়াত নেতা এখন বিচারের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে বাঁচতে চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক জোর তৎপরতা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই এ বিচার- জামায়াত মনেপ্রাণে চাইছে এমন কিছু আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে। তারা নিজেদের রক্ষার জন্য কোরআন ও ইসলামকে ব্যবহার করতে চাইছে ঢাল হিসেবে। বিচারকে বানচাল করতে তারা দেশে খরচ করছে কোটি কোটি টাকা। আর দেশের বাইরে লবিংয়ে ব্যয় করছে মোটা অঙ্কের অর্থ, যেন বিদেশিরা বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয় এ বিচার বন্ধে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারী পাকিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে গ্রহণ করছে গোপন ফান্ড। জামায়াত আরেকটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে, তা হচ্ছে মানুষের মধ্যে পাকিস্তানি মনোভাব সৃষ্টি করা। আর এটি করা হচ্ছে, দেশ যাতে এক সময় পাকিস্তানি কায়দায় পরিচালিত হয় এ জন্য।

জামায়াত চায় একাত্তরে তারা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে ৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা আর তিন লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করেছে, তা এ দেশের মানুষের মন থেকে মুছে যাক। জামায়াত মূলত একটি পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন এবং এর নাড় এখনো পাকিস্তানেই গ্রোথিত। যখন বাংলাদেশে দলটির নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি করা শুরু হয়, ঠিক তখনই পাকিস্তান জামায়াতের নেতারা এতে সমব্যথী হয়ে তাদের সরকারকে বলেন, বিষয়টিতে যাতে তারা হস্তক্ষেপ করে। এ ছাড়া চাপ সৃষ্টি করতেও তাদের সরকারকে অনুরোধ জানায়, যেন এ বিচার বন্ধ করে বাংলাদেশ। কিন্তু এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর অমার্জিত এক হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায়। এ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে পারবে না নিশ্চিত জেনে তারা এরই মধ্যে শুরু করেছে নানা ধরনের নাশকতা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নিজেদের বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু এত কিছু করেও কি অস্তিত্ব টেকাতে পারবে জামায়াত?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.