আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহজালালে এখনো ম্যানুয়াল ইমিগ্রেশন

দেশের ইমিগ্রেশন চলছে ম্যানুয়াল (সনাতন) পদ্ধতিতে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এক বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ জানে না অন্য বন্দরের যাত্রী সম্পর্কিত কোনো তথ্য। দেশের আকাশপথের প্রধান বন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কম্পিউটারাইজড হলেও অন্য সব আকাশ ও স্থলবন্দর চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করা কোনো যাত্রী যদি অন্য কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বেরিয়ে যান, তাহলে সেই তথ্যটি বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন জানছে না। এতে করে শাহজালাল বিমানবন্দরের কম্পিউটার ডাটাবেজও ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

তারা বলছেন, এক বিমানবন্দর থেকে অন্য বিমানবন্দরগুলোর সঙ্গেও কোনো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যম গড়ে ওঠেনি। শাহজালাল ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কাছে যাত্রীদের তথ্য পেতে হলেও সাত দিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সারা দেশের সব বন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি যাত্রী সম্পর্কে অন্ধকারে থাকছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। অপরদিকে তথ্য আদায়ের নামে ইমিগ্রেশন বিভাগের অযাচিত প্রশ্নবাণে নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণকে। বন্দরগুলোর ইমিগ্রেশনে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা কম্পিউটারাইজড করতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ নিয়ে কাজ হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর এ বিভাগটি এখনো পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা হয়নি। এক বন্দর দিয়ে যে কোনো যাত্রী প্রবেশ করে অনায়াসেই আরেক বন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করতে পারছেন। তালিকাভুক্ত কোনো চিহ্নিত ব্যক্তি আরেক বন্দর দিয়ে পালিয়ে গেলেও খবর পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ। এক বন্দরের সঙ্গে আরেক বন্দর ইমিগ্রেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড হলে যাতায়াতকারী যাত্রী সম্পর্কে তথ্য জানা সহজতর হবে বলে মনে করেন তারা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের সিনিয়র এএসপি বেলাল আহমেদ বলেন, এক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে তথ্য পেতে হলে আগে থেকে তা জানাতে হয়।

সেখান থেকে সময়-সুযোগ মতো তা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত কোনো যাত্রী সম্পর্কে তথ্য জানা যায় তাদের প্রতি পক্ষের কাছ থেকে। তারা যদি তথ্য সরবরাহ না করে, তাহলে জানাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের অবস্থা আরও খারাপ। এখনো আধুনিক বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি।

জানা গেছে, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগত এবং বিদেশের উদ্দেশে যাওয়া বাংলাদেশি ও বিদেশি যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পরিসেবা দিয়ে থাকে ইমিগ্রেশন বিভাগ। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই বিভাগটি। ইমিগ্রেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের আকাশ ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দেশের এক বিমানবন্দর থেকেই অন্য বিমানবন্দরের যাত্রী সম্পর্কে তথ্য কম্পিউটারে জানা যাচ্ছে। এতে করে তালিকাভুক্ত যাত্রী সম্পর্কে জানা যাচ্ছে কম্পিউটারে এক ক্লিকেই।

কিন্তু এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হয়নি বাংলাদেশে। সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতেই চলছে তথ্য সংগ্রহ। যাত্রী সম্পর্কে তথ্য থাকছে শুধু সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের কম্পিউটারেই। সূত্র জানায়, যাত্রী সম্পর্কে তথ্য না থাকায় অযাচিত নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন।

কোনো কারণ ছাড়াই ইমিগ্রেশন পুলিশের অযাচিত জেরায় নাকাল হতে হচ্ছে তাদের। হয়রানি থেকে নিস্তার পান না ব্যবসায়ী, ছাত্র, রাজনীতিক এমনকি বাংলাদেশিী পর্যটকরাও। ইমিগ্রেশন পুলিশ এসব যাত্রীর পাসপোর্ট কখনো আটকে রাখছে। আবার কারও পাসপোর্ট মালিবাগ পুলিশের 'বিশেষ শাখা'র (এসবি) প্রধান দফতরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তথ্য থাকলে সাধারণ যাত্রীরাও এমন হয়রানির শিকার হতেন না।

সূত্র জানায়, বন্দরগুলোর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু না থাকায় দেশে কি পরিমাণ বিদেশি নাগরিক বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করছে এমন তথ্যও থাকছে না ইমিগ্রেশন বিভাগে। যদিও এ তথ্য থাকার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ইমিগ্রেশন বিভাগেই। ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরতদের কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, ইমিগ্রেশন বিভাগ শুধুই বিমানবন্দর হয়ে যারা প্রবেশ করে তাদেরই হিসাব রাখতে পারছে। দেশে প্রবেশের পর এসব বিদেশি যথাসময় দেশে ফিরে যায় কিনা, এমন তথ্য সংগ্রহে নেই এ বিভাগটির কাছে।

বিদেশিদের অবৈধভাবে অবস্থান, তাদের আনাগোনা, সুষ্ঠু পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি এই বিভাগটির।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.