সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকেই (ইসি) শক্তিশালী দেখতে চায় দাতারা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ও প্রতিবেশী ভারতের আদলে কমিশনকে ঢেলে সাজানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেও। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর সরকারও ইসিকে শক্তিশালী করার পক্ষে কথা বলছে।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে বিগত কমিশন ইসিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা হালে পানি পায়নি। সূত্র জানায়, ইসিকে শক্তিশালী করতে দাতা সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম একাধিক দেশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবেএক্ষেত্রে অবশ্যই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পেঁৗছাতে হবে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে দাতারা কমিশন শক্তিশালী করা প্রশ্নে তৎপর ছিলেন। নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও সহিংসতা ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের জন্য এখন নতুন করে তারা তাগিদ দিচ্ছেন। সূত্র আরও জানায়, সদ্য সমাপ্ত দশম সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনের আগে আচরণবিধি তৈরিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আচরণবিধির নানা বিষয় অনুসরণ করা হয়েছে। ভারতে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো একটি 'মডেল কোড অব কন্ডাক্ট' এর মধ্যে দিয়ে চলে। এটাকে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের একটি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারকও বলা যায়, যা সবাই মেনে চলেন। সেখানে ভোটের ছয় মাস আগেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়। কমিশনের সুবিধানুযায়ী প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়। বলা চলে, ভারতে নির্বাচনকালীন ছয় মাস কমিশন ছায়া সরকারের ভূমিকায় থাকে। আর কমিশন যে কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে কাজ করে। আদালতও কমিশনকে সব সময় সহযোগিতা করে। সাধারণত কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে যায় না আদালত। আদালত নির্বাচন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলেও আগেই কমিশনের বক্তব্য শোনা হয়। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে। তবে অনেক বিশ্লেষকের মত, এখানে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কাগজে-কলমে। আবার যতটুকু ক্ষমতা আছে তারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। ভারতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মেয়াদ শেষ হলে অন্য কমিশনারদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে বিগত কমিশনের অভিজ্ঞতা পরবর্তী কমিশনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, ইসিকে শক্তিশালী করতে হলে প্রথমে এর স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য একটি যথাযথ আইনি কাঠামো করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যোগ্য, স্বাধীনচেতা ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত কমিশন। রাখা হয়েছিল 'না' ভোটের বিধান। তাছাড়া তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন, কোনো দল থেকে প্রার্থী হতে ওই দলের সঙ্গে কম পক্ষে তিন বছর থাকার বিধানও ছিল। কিন্তু এসব বিধান পরবর্তীতে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে না ভোট দেওয়াকে নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে ইতোমধ্যে রায় দিয়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। বিশ্লেষকদের মতে, হলফনামায় অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া এবং তথ্য গোপনের জন্য বিজয়ী প্রার্থীর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা কমিশনকে কাজে লাগাতে হবে। হলফনামার ছকেও পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন বয়স, পেশার সুস্পষ্ট বিবরণ, আয়ের উৎসের বিস্তারিত তথ্য, নিজের ও নির্ভরশীলদের সম্পদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও মূল্য উল্লেখ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিস্তারিত তথ্য, প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি (দল বদলের তথ্যসহ অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণী) ইত্যাদি সংযোজন। এসব তথ্য ভোটারদের জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি সর্বোচ্চ তিনজনের প্যানেল থেকে মনোনয়ন দেওয়াও বাধ্যবাধকতামূলক করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য আগের আরপিওতে থাকা ভালো বিধানগুলো পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন না ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনতে হবে। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।