আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাউন্সিলর শূন্যতায় চরম ভোগান্তিতে নগরবাস

কাউন্সিলরদের কার্যক্রম না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঢাকা মহানগরবাসী। অভিভাবকহীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের এসব অসুবিধা দেখারও কেউ নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় কাউন্সিলরদের কার্যক্রম। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ওয়ার্ডভিত্তিক পুরুষ ও মহিলা কাউন্সিলরদের অফিস কক্ষ। ফলে ওয়ার্ডভিত্তিক নাগরিক সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তি বিল পাস হয়। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার কথা থাকলেও ২৫ মাসেও তা সম্ভব হয়নি। এর ফলে সিটি করপোরেশনভিত্তিক নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী। ওয়ার্ডভিত্তিক ১৭ ধরনের সনদের মধ্যে ৩/৪টি বর্তমান প্রশাসন সম্পাদন করলেও বাকি সনদগুলো পাচ্ছেন না নগরবাসী। সেবা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভক্ত করা হলেও সেবার পরিবর্তে নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। সিটির ওয়ার্ড কার্যালয়ভিত্তিক সেবা পেতে জনসাধারণ নাস্তানাবুদ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নূ্যনতম সেবা পেতেও ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন। ওয়ার্ড থেকে যাতায়াত খরচের নামে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সনদের প্রয়োজনে অনেকে ভিড় করছেন। এ সময় মহাখালী এলাকার নাসিরউদ্দিন নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, চারিত্রিক সনদ এখন আর সহজে মিলছে না। ঘুরতে হয় ৩-৪ দিন। ওয়ার্ড অফিসে এলে সচিব এখন না পরে আসেন বলে সময়ক্ষেপণ করেন। তবে ওয়ার্ড সচিব হাবিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাউন্সিলররা তো ওয়ার্ডের সবাইকে চিনত। কিন্তু আমরা চিনি না। তাই সনদ দেওয়ার সময় সঠিকভাবে চিনে নিতে সময় লাগে। একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড অফিসে। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্বাস আলী বলেন, বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সবগুলো ওয়ার্ড অফিসের চিত্র একই। ওয়ার্ড সচিবরা তাদের মর্জি মতো অফিস করেন। সনদ নিতে গেলে আজ নয়, কাল বলে সময় ক্ষেপণ করেন। এভাবেই চলছে কাউন্সিলরবিহীন ডিসিসির ওয়ার্ড ভিত্তিক সেবা। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নগরবাসী।

কাউন্সিলর শূন্যতার সমস্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে উত্তরার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ বলেন, এলাকায় কোনো সামাজিক-পারিবারিক-আইনগত সমস্যার সৃষ্টি হলে নালিশ করতাম কাউন্সিলরদের কাছে। কাউন্সিলর সালিশ করতেন এবং সমাধান দিতেন। এখন কোথাও এসব অভিযোগ-সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিষয়গুলো জটিল হচ্ছে, ছোটখাটো বিষয়েও মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। অপরদিকে ২০১১ সালের জুন মাসের দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে নতুন এলাকা গঠন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ডিএসসিসি এখনো এসব ওয়ার্ডগুলোতে কোনো ধরনের সেবা কার্যক্রম শুরু করেনি। ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুইজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের সেখানে পাওয়া যায় না। আর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নাগরিক সনদই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী এসব সমস্যার জন্য ডিএসসিসির ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তবে এলাকাবাসীর অনুরোধে বিলুপ্ত সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ সরকার এখনো বিভিন্ন সনদ ইস্যু করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক আখতার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ও সহজে নাগরিকত্ব সনদ বা অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে। কাউন্সিলরদের শূন্যতা কোনোভাবে আমলাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন সেবা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ভোগান্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের আমলারা কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করছেন না। সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাচিত প্রতিনিধি আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি।

স্থানীয় সরকার গবেষক ড. তুহিন মালিক বলেন, জনপ্রতিনিধির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের আমলারা জনগণের টাকা লুটপাটে ব্যস্ত। সেবার পরিবর্তে তারা ভোগান্তি উপহার দিচ্ছে নগরবাসীকে। আগেকার যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ঢাকা মহানগরবাসীর নাগরিক সেবার মান হতাশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন এই নগর গবেষক। নগরবাসীর অভিযোগ, সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করছেন না। নগরবাসী দ্রুত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন দিয়ে নতুন নগরপিতা ও কাউন্সিলরদের হাতে দায়িত্ব প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.