নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে শিল্প উৎপাদনে স্থবিরতা কেটে গেলেও বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবরোধ-হরতালে শিল্প উৎপাদনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল সেটি দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। তবে বিনিয়োগের জন্য যে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা দরকার সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। পরিবেশ সৃষ্টি আর ব্যবসা-বাণিজ্যে নীতিগত সহায়তা দিয়ে সরকার সেই অনিশ্চয়তা দূর করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলার হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়লেও সে হারে বাড়েনি বেসরকারি খাতে ঋণ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে সেটি কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশে। অন্যদিকে অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে এ খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে শিল্প ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিল্প ঋণ ও এলসি খোলার সূচক দেখে বলা যায়, শিল্প উৎপাদনে স্থবিরতা কাটলেও বিনিয়োগে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করার আগে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করেন। সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। যেহেতু অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছেন, সে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের চেষ্টা রয়েছে দ্রুত লোকসান কাটিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি। জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কিছুটা ফিরে আসায় উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্প-কারখানায় যে উৎপাদন সক্ষমতা ছিল সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এমন প্রত্যাশা থাকতে পারে যাতে তারা বুঝেছিলেন নির্বাচন পরবর্তী হরতাল-অবরোধ কেটে যাবে। সে প্রত্যাশাতেই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু বিনিয়োগের জন্য যে পরিবেশ দরকার সেটি নিশ্চিত হয়নি বলেই বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি তেমন বাড়ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের এই সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বলেন, বিনিয়োগের জন্য যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের। বিনিয়োগ হচ্ছে না গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সমস্যার কারণে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ৩০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। চায়নিজ কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে সমস্যার কারণে কাজ আর এগোচ্ছে না। সমস্যা দ্রুত সমাধান করে এটা বাস্তবায়নে নজর দেওয়া উচিত। গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য জমি অধিগ্রহণও হয়ে গেছে। এগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত করা যায়। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ পরিবেশ চায়। অবকাঠামো সমস্যা দূর হলে সেটি অনেকটা নিশ্চিত হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা কম-বেশি সব দেশেই আছে। এটা এমন নয় যে বাংলাদেশই কেবল সমস্যা। সে কারণে সরকারের উচিত হবে স্বল্পমেয়াদি যেসব উদ্যোগ রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।