জীবনে সফল হতে না পারি দুঃখ নেই... একজন ভাল মানুষ হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই...
সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী এমপি অপু উকিল বলেন, 'ভারতের দার্জিলিং চা বাগানে লক্ষ্মীরানী নিজের নাম পরিবর্তন করে তৈয়বা নামে চাকরি নেন। খালেদার জন্ম হয় চা বাগানে এবং তার পিতা একজন ইহুদি। এদিকে ১৯৭১ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খান জানজোয়ারের সাথে পরীকায় মেতে উঠেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে পাকিস্তানি সেই সেনা কর্মকর্তা খান জানজোয়ারের সাথে কোকোর চেহারার মিল রয়েছে।
'
এর আগে গত ১৮ মার্চ ২০১৩-তে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় খালেদার চা-বাগানে জন্মতত্ত্বটি জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, তাঁর [খালেদার] জন্ম শিলিগুড়ির চা-বাগানে। তাঁর নানা-নানির নাম কী? জিয়াউর রহমানের জন্ম ভারতে, পড়াশোনা করেছেন পাকিস্তানে। তাঁর বাবা-মার কবর পাকিস্তানে। দেশের প্রতি তাঁদের দরদ থাকবে কী করে? বিএনপির নেতা মেজর হাফিজের লেখা বইয়ে আছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলারা বেগম জিয়াকে ভারতে নিয়ে যেতে এসেছিলেন।
তিনি যাননি। তিনি ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মেসে ছিলেন। ’
জিয়ার জন্মসংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি কৌতুকপ্রদ ছিল - কেননা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারিতে জিয়া যখন বগুড়ায় জন্মান, তখন বগুড়া আসলেই ব্রিটিশ ভারতের অংশ! সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী গর্বও করতে পারেন - কেননা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে তিনি যখন টুঙ্গিপাড়ায় জন্মান, তখন সেটি আর ব্রিটিশ ভারতের অংশ নয়, স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ! যদিও ওই একই টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ যখন প্রধানমন্ত্রীর পিতা জন্ম নেন, তখন সেটি ব্রিটিশ ভারতই ছিল।
যাই হোক, ভারতে জন্ম নেয়ার কলঙ্কটি তো অন্তত নেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর! খালেদার জন্ম তো ১৯৪৫ সালে - (হুর রে!) ভারতে, দিনাজপুরে। দু' বছর পরে দুনিয়ায় এলে হয়ত তিনিও স্বাধীন পাকিস্তানে জন্ম নিতেন।
কিন্তু সেই কপাল আল্লাহ পাক তাঁর হাজী-নামাজী-কুরআন তিলাওয়াতি বান্দী শেখ হাসিনাকেই দিয়েছেন - বেলা বারোটা পর্যন্ত ঘুমানো খালেদাকে তো নয়!
তবে খালেদার জন্মস্থানটি দিনাজপুর থেকে শিলিগুড়ির চা বাগানে কিভাবে শিফট হলো, সেটা প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য শিষ্য অপু উকিল আবার রেফারেন্স ছাড়া বাতচিত করেননি। তিনি উকিল মানুষ - রেফারেন্স দিয়েই তো কথা বলবেন! পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকের ‘ওয়ার ইন ১৯৬৫ পাকিস্তান অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ নামের বইটিতে যদি খালেদা জিয়ার মায়ের নাম ‘লক্ষ্মী রানি মারমা’ উল্লেখ থাকে, তাতে অপুর দোষ কী? তবে ১৯৬৯ সালে জন্ম নেয়া কোকোর জন্মবৃত্তান্ত উকিল সাহেবা কি ওই বইতেই পেয়েছেন, নাকি প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতির সামনে পেশ করলেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
যেমন বোঝা যাচ্ছে না, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা অফিসার জানজুয়ার সাথে ঢাকা "ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মেসে" থাকার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালে কোকোর জন্ম কিভাবে হলো?
এছাড়া আরো একটি অঙ্কও মিলছে না - সকল জ্ঞাত ইতিহাস বলছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া ছিলেন ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার। ১৯৭১ সালে মেজর জিয়া ছিলেন এই ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টেরই সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে জানজুয়াকে নিজের হাতে গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে সেই রাতেই জিয়ার নির্দেশে জানজুয়াসহ সকল পাকিস্তানি অফিসারকে হত্যা করা হয়। উইকিপিডিয়াসহ সর্বত্র ইতিহাসটি এভাবেই আছে:
ttp://en.wikipedia.org/wiki/Ziaur_Rahman#Liberation_War_of_1971
Click This Link
Click This Link
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে নিহত জানজুয়ার সাথে খালেদা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেসে কিভাবে পরকীয়ায় জড়ালেন, সেটা এক রহস্যই বটে! সেই পরকীয়ার ফসল কোকোর ১৯৬৯-এ জন্ম নেয়ার মতোই ঘোলাটে এই রহস্য।
কুরআন তিলাওয়াতি হাসিনা ও রেফারেন্স জিনিয়াস অপু উকিল জুটি মিলে ভবিষ্যতে কোনো জন্মবার্ষিকী বা সংসদ অধিবেশনে এই মূর্খ জাতির জ্ঞানচক্ষু খুলে দেবেন, এই আশাতেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের বেঁচে থাকা... —
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।