ধর্মভীরু নামক ধর্মান্ধ ঘেঁষা মডারেশন স্কোয়াড নিপাত যাক।
ডুবে মরে যাওয়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ করতে গিয়ে যে দীঘিটি কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়েছিল সে দীঘির পানিতে কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে সমূলে ডুবে যেতে দেখে আমরা তরুণেরা কেউ স্মৃতিকাতর হই, কিশোরীদের কেউ মন খারাপ বোধ করে, ঘুড়ি-বালকেরা আনন্দিত হয় এবং আমাদের মধ্যকার সর্বাপেক্ষা বয়স্ক মানুষটির দীর্ঘশ্বাসে মোটাসোটা ঠিকাদার লোকটি অস্বস্তি বোধ করে।
কারণ, আমাদের মনে পড়ে যে ক্লান্তিকর ছয়টি ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমরা গাছটির নিচে বসে ফুল চিরে পুংকেশর নিয়ে কাটাকুটি খেলতাম; একদিন জনৈক পাকনা ক্লাসমেট যখন জানায় পুংকেশর হচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নুনু, তখন আমরা বিব্রত হই এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে এই জনপ্রিয় খেলা ও গাছটি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। এর দীর্ঘদিন পর গাছটি আবারও আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে পড়ে, কারণ, গাছটিকে বাম ধরলে ডানের দীঘিটি ছিল মানুষখেকো, অথবা এটাও হতে পারে যে আমরা ততোদিনে আবিষ্কার করে ফেলেছি আমাদের দ্বিখণ্ডিত ইশকুলের গার্লস ইউনিটটিতে পৌঁছোবার দ্রুততম সড়ক ছিল এই গাছ ও দীঘির মাঝে।
এক বছর পর পর আমরা শুনছিলাম মানুষখেকো দীঘিটিতে একজন করে ডুবে মরে যাওয়ার সংবাদ এবং গাছটির তলায় আমাদের দেখা হচ্ছিল সানজিদা, সাথী, আভা অথবা বৃষ্টির সাথে।
আমাদের দিনগুলি দুধে-ভাতে কাটছিল কিন্তু সেচের জন্য দীঘির পাশে কদাকার কীসব যন্ত্র ও ছাউনি বসানো হলে সেখানে নেশাখোরদের আনাগোনা বেড়ে যায় এবং অভিভাবকদের কঠোর নির্দেশে আমরা বিকল্প সড়কে আসা-যাওয়া করতে থাকি। আমরা কিন্তু গাছটিকে ভুলে যাই না, প্রায়ই আমরা সাহস করে গাছের সাথে বাঁধা নেশাখোর দেখতে যেতাম এবং আমাদের কেউ কেউ পরবর্তী সাক্ষাতে গল্প করার লোভ সামলাতে না পেরে আরও কিছু সাহস যুগিয়ে তাদের পেটে-পিঠে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে আসতো।
বছর দশেক আগে একদিন হুট করে আমাদের দ্বিখণ্ডিত ইশকুলটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের গাছটির পাশের সড়ক অথবা বিকল্প সড়কে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। অথবা আমরা চাইলেও সেখানে যেতে পারি না, কারণ, সড়ক দুইটি প্রথমে বেসরকারী ছিন্নবস্ত্রের উদ্ভাস্তুদের ও পরবর্তীতে সরকারী কালো পোষাকের উদ্ভাস্তুদের সম্পূর্ণ দখলে চলে যায়। আজ বৃহদাকার ক্রেনটি যখন গাছটিকে মূলে-কাণ্ডে-শাখায়-প্রশাখায় ধাতব দড়ি বেঁধে দীঘির পানিতে ফেলছিল, তখন আমরা উপলব্ধি করি যে সেটি শুধু মানুষখেকো দীঘি নয়, গাছখোকোও।
এবং আমরা স্মৃতিকাতর হতে গিয়ে কিশোরীদের ন্যায় মনও খারাপ করে বসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।