আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একতরফা নির্বাচনের ফজিলত-মুসিবত আর দিগদারিগুলা

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো

একতরফা নির্বাচন কেন বারে বারে হইতেছে সেইটা খুইজা বাইর করার কোশেশ থিকাই এই লেখা। অনেকেই আফসোস করেন, আহারে আমাগো নেত্রীরা কেহ ইতিহাস থিকা কিচ্ছু শিখলো না। হেরা খালি ভুল করে, গদি আকড়াইয়া পইড়া থাকবার চায় কিন্তু কেউ শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে না। হুদা কামে আমাগো দিগদারির মইধ্যে ফেলায়। আরেকটা প্রচলিত জনমত হইলো, আহারে কেন যে এই ইলেকশন ইয়ারে আইসা খালি হত্তাল আর সহিংসতা করে, মানুষ মারে, এগো দিলে কি রহম নাই? সত্যকথা হইলো, উনারা ইতিহাস থিকা ফটাফট তালিম নিয়া আগাইয়া যাইতেছেন বইলাই বারে বারে একতরফা ইলেকশন দিতেছেন।

আর বারে বারে হরতাল অবরোধ আসতেছে। আমরা পিছায়া পড়ছি বইলাই ব্যাপারটা বুঝতেছি না। ধরেন একতরফা নির্বাচনের কিছু কুফল যদি বলতে বলি আপনি কবেন এতে সরকার দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাইতে থাকে। তারা যে ফেয়ার ইলেকশনে জিতবে না সেইটা সবাই বুইঝা ফেলায় আর এরপরে দুই তিন ডজন সিট পাইয়া বিরোধীদল হয়। এইতো? এখন আমি একতরফা নির্বাচনের কিছু সুফল বলি যেগুলা যে রাজনৈতিক দলের জন্যই উপকারি, কোন সাইড এফেক্ট নাই।



১. একতরফা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সুবিধা এতে বাড়তি কিছুদিন গদিতে থাকা যায়। কিছুদিন বলা ভুল হবে। মাস বা বছর বলা উচিৎ। ১৯৯৬ সালের ইতিহাস বলতেছে ১৫ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপি একলাই অংশ নিয়া ৩০০সিট পাইছিল। এরপরে তারা দেড় মাস ক্ষমতায় থাকবার পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ পরে পদত্যাগ করে।

দেড় মাস বেশি ক্ষমতায় থাকাটা ৯০ এর দশকের চেয়ে এখন অনেক বেশি লাভজনক। তাছাড়া এই সময়কাল দীর্ঘায়িত করার সমস্ত বন্দোবস্ত করা আছে। আগেরবারের বিএনপির ভুল থিকা শিক্ষা নিয়াই কয়েক হালি বিরোধীদল কাছে টানা হইছে। এরা সাধারন নির্বাচনে দুধভাত হইলেও বহুদলীয় গণতন্ত্রের দলের সংখ্যা বাড়াইতেছে। আপনেরা খেয়াল করবেন, গত হপ্তায় নেপালের ইলেকশন বয়কট করছিল ৩২দল, তারপরেও ইন্টারন্যাশনাল কমুনিটি (ইউ নো হু দে আর) এই নির্বাচন সাপোর্ট দিছে।

কারণ অংশগ্রহনকারী দল অনেক। ব্যালট পেপারে গরু ছাগল হাস মুরগি টিভি কলম বল ব্যাট চেয়ার মার্কার ঠাসাঠাসি মানেই এফেক্টিফ বহুদলীয় গনতন্ত্র হাজির, প্রমাণিত।

২. একতরফা নির্বাচনের কোন সাইড এফেক্ট নাই। সরকার যখন নানান অপিনিয়ন পোলে বুইঝাই যায় যে, তার আর জিতার ব্যবস্থা নাই ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হইলে তাইলে সে কেন সেদিকে যাইয়া নাক কাটা দিবে? সুস্থবুদ্ধিতে এইটা করার কথাই না। জিতা যখন যাবেই না তাইলে কোন কৌশলে দুই চার মাস বেশি ক্ষমতায় থাকতে কি সমস্যা? কিছু ভোট কম পাবে।

তাইলে আরো ভালো। সংসদে যাওয়া লাগবে না। কবে, আমাদের সিট কম, কথা কইতে দেয় না, আমরা 'না' বইলা আওয়াজ দিলে বিলাইয়ের মতো মিউমিউ আওয়াজ বাইর হয় বিশাল সংসদে। আমরা গেলেই কি আর টিকফা, তথ্য অধিকার আইন আটকাইতে পারুম? এরমানে সংসদবর্জন জাস্টীফাইড।

৩. রিওয়ার্ড সিস্টেমঃ এইটা হইলো আসল কথা।

মানুষরে চালায় রিওয়ার্ড সিস্টেম। এই যে আল্লাহ পাক বেহেস্ত আর দোজখ বানাইছেন, কেন? কারণ ভালো কাজের পুরস্কার আর খারাপ কাজের শাস্তির ব্যবস্থা দরকার। মাঝামাঝি কিছুতো রাখেন নাই। কারন তাইলে দেখা যাবে মানুষ মোটিভেট হইতেছে না ভাল কাজ করার জন্য। পাপ কইরাও ভয় করতেছে না।

স্পষ্টভাবে ভালোর দিকে টানার জন্য এই পরিস্কার সিস্টেম। তো আমরা একতরফা নির্বাচনের জন্য কি কখনো কোন দলরে শাস্তি দিছি? এই যে পাবলিকের এতোগুলি টাকা নষ্ট কইরা ইলেকশন করলেন তামাশা করতে তার বিচার কি? দুইটা ভোট কম দিছেন। তাতে ক্ষতি কি? আবারতো পাঁচ বছর পরে তাগোই ক্ষমতায় আনছেন 'নিরব ভোটবিপ্লব' কইরা। একদিনের বিপ্লব। তাই ফলটাও এমন।

যারে আনছেন সেই আবার ক্ষমতা ছাড়ার নামে টলাবাহানা কইরা একতরফা নির্বাচন করতেছে। তাইলে একতরফা নির্বাচনের জন্য ৯৬সালের বিএনপি বা ধরেন ২০০১সালের বিএনপিরে কি শাস্তি দিলেন যা দেইখা আওয়ামী লীগ ২০১৩তে ডরাইবো? বা ধরেন ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে মানে মানে কাইটা পরলো একজন ভালো নির্বাচন কমিশনার দিয়া সেই জন্য তারে কি মারহাবা দিছিলেন? দেন নাই। কইছেন, হালা ভোদাই। তো আপনারাই রিওয়ার্ড দিতেছেন একতরফা নির্বাচনের জন্য আর ভোদাই কইতেছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য। তাইলে কিসমতে একতরফা নির্বাচনইতো জুটবে, নাকি?

কেন আন্দোলন জমতেছে না?

বিরোধীদল বিএনপি একটা ভেজিটেবল টাইপ আন্দোলন করতেছে।

আর যখন একটু শুরু করবে তখনি গাউছিয়ার দোকানদারদের মতো 'আপা আসেন আসেন, আর দুইশো বাড়ায়ে দিয়েন' বইলা ডাকাডাকি করতেছে সংলাপে। তার উপরে আছে মিডিয়ার শক্ত বায়াস, জামাত ইস্যু, রাজাকার ইস্যু, তারেক ইস্যু, আমেরিকা-ভারত ইস্যু। ম্যাডামরে দিল্লীতে ডাইকা মনমোহন তারে শক্ত দিল্লীবিরোধী অবস্থান নিতে দিল না। আবার আমেরিকারে সাহারা দিতে উনি যে ১৮বার ভাষণে জঙ্গি-জঙ্গি বললেন, ওয়াশিংটন টাইমসে স্যাংশন-গনতন্ত্র চাইয়া চিঠি দিলেন সেইটা তারে এন্টি আমেরিকা কার্ডটাও খেলতে দিতেছে না। এন্টি-ভারত কার্ডরে নিউট্রালাইজ কইরা এখন ভারত পুরাপুরি হাসিনারে সাপোর্ট দিতেছে।

(http://bit.ly/15vwh8n)


এখন ২০১৩তে আইসা ৯৬ মডেলের আন্দোলন খাড়া করতে কেন ব্যর্থ হইলেন বিএনপি তা বুঝতে চাইলে ৯৬ এর আন্দোলনের টাইমলাইন দেখতে হবে। ৯৬এ আওয়ামী লীগ কি দিয়া সরকাররে প্যাচে ফেলছিল? একদফা, একদাবিতে নামছিল নির্বাচনের দেড় বছর আগেই। তাগো এতো রাজাকার ইস্যু, তারেক-রক্ষা ইস্যু ছিল না। তারা যে ডেস্পারেটলি আন্দোলন করতেছে সেইটা বুঝাইতে পারছিল জনগণরে। কিভাবে বুঝাইছে? ১৯৯৪ এর ডিসেম্বরেই শতাধিক বিরোধীদলীয় এম্পি পদত্যাগপত্র পাঠায়।

সেইটা গ্রহন করবে কিনা, করলে উপনির্বাচন করতে হবে কিনা তা নিয়া দিকদারিতে পড়ছিল সরকার। এরপরে হাইকোর্ট বলছে পদত্যাগপত্র এক্সেপ্ট করেন। করছে। তখন জোট মহাজোট ঐক্যজোট না থাকলেও সরকাররে একদম একলা কইরা দিতে পারছিল বিরোধীরা। অথচ বিএনপি সরকার যে খুব একটা অজনপ্রিয় ছিল তা কিন্তু না।

কেন অজনপ্রিয় ছিল না প্রথম বিএনপি সরকার? কারণ তখন তারেক, ব্যাপক দূর্নীতি, ডজন ডজন মিডিয়া, ব্যাপক সুশীল, ফেইসবুক- এইসব কিছুই ছিল না। বেশ ভালো সরকার চালাইছিল বিএনপি যা আমরা দেখতে পাই তত্ত্বাবধায়কের অধীনের নির্বাচনের ফলাফলে। আর কোন সরকারি দল ১১৬টা সিট পায় নাই ৯৬ এর পরে।

যেইটা কইতে নিছিলাম, সাধারন মানুষ বাস-গাড়িতে আগুন প্রাণহানির মানবিক বিবেচনার প্রশ্নে বিএনপি বলতেছে ৯ ৬এর মতো আন্দোলন করতেছি। কিন্তু তারা মোটেও ৯৬ এর স্টাইল ফলো করে নাই।

করলে আজ থিকা দেড়বছর আগেই তাগো ৩০জন এম্পির পদত্যাগপত্র জমা দিয়া একদফা একদাবি, তত্ত্বাবধায়ক কবে দিবি- আন্দোলন করতো। তার সেইটা না কইরা ৯০ দিন পরে পরে সংসদে আইসা রিনিউ করাইয়া গেছে, মাসের বেতন তুলছে। ৯৬মডেল ফলো করলে তাদের রাস্তায় নামা লাগতো। সেইটা না কইরা টিভি ক্যামেরার সামনে দুইটা কক্টেল ফুটায়া বাসায় যাইতেছে। তারচেয়েও বড় কথা, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক দাবিতে জনসম্পৃক্ততার চাইতে তারা সুপার পাওয়ারদের কাছেই বেশি দৌড়াইতেছে।

সরকারও দৌড়াইতেছে। কারণ তাগো দরকার সুপার পাওয়ারদের ম্যান্ডেট। এরা যদি শুধু নির্বাচনপর্যবেক্ষক পাঠায় আর ভালো পার্সেন্টেজের ব্যালট দেখায়া বলানো যায় নির্বাচনে অবাধ এন্ড সুষ্ঠু হইছে তাইলেই সরকারের কার্যসিদ্ধি। কম কইরা হইলেও ১-২বছর। তাগো স্টেপস ফলো করলেতো বিরোধীদলের চলবে কেন? যে ব্যাপক সরকারবিরোধী সেন্টিমেন্ট আছে সেইখানে ঘা দিয়া কইতে হবে, 'ইয়েস ইউ ক্যান' ' হোপ হ্যায়'।

শুধু ক্ষমতা-রমনের ডিজায়ারের কথা কইলে কেন লোকে আপনার আন্দোলনে আইসা পুলিশের মাইর খাবে? আপনে ক্ষমতায় গেলে পাবলিকের কি সেইটাতো বুঝাইবেন আগে। আপনারা এরমধ্যে আবার নানান দিগদারিতে পড়ছেন জামাতি রাজাকার আর তারেকের প্রত্যাবর্তন নিয়া। তারেকের সেইফ এন্ট্রির বিনিময়ে সরকারের সেইফ এক্সিট দেয়াটা লোকে পছন্দ করে না। সরকারবিরোধী ইলেকশন ইয়ারের ওয়ান্ডে ভোট বিপ্লব এতে জোশ হারায়। শেখ মুজিবর রহমান বলছিলেন 'বাংলার মানুষ অধিকার চায়'।

৪২বছর পরে এইটা হইয়া গেছে 'বাংলার মানুষ দূর্নীতির বিচার চায়'। বাংলার মানুষ শুনতে চায় ক্ষমতায় গিয়া ক্ষমতা থিকা নামবেন কিনা? নাকি আবার দিগদারিতে ফেলবেন গদি পাইয়া?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।