আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে ভারত’

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণেই দলটির সঙ্গে এই সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সম্প্রতি মাছরাঙা টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে ‘একটি বিশেষ দল ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার হয় কি-না’- প্রশ্ন করা হয় তাকে।
জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, “এটা তখন একারণেই হয়েছে যে তখন (মুক্তিযুদ্ধের সময়) আওয়ামী লীগই নেতৃত্ব দিচ্ছিলো এবং দলটির প্রতি ভারতের সরকার ও জনগণের  ব্যাপক সমর্থন ছিলো। কাজেই এখানে একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে।


পঙ্কজ শরণ বলেন, “তবে আমরা সব সময়ই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি এবং এখনো করতে প্রস্তুত।
“দেশের জনগণ কোন সরকারকে যখন ক্ষমতা থেকে নামিয়ে তাদের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনে, আমরা তখন সে-ই নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ”  
৫ নভেম্বরের ভোট পেছানো নিয়ে সরকার ও বিরোধীজোটের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে দেশে যখন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তখনই ভারতের অবস্থান পরিষ্কার করলেন পঙ্কজ শরণ।

File Photo


File Photo
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নানা ধরনের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
দুই দেশের সুসম্পর্কের জের ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও ভারত সফর করেছেন।

অন্যদিক ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই বাংলাদেশ সফর করেন।
এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারত ৮০ কোটি ডলার ঋণ দেয় এবং আরো ২০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করে।  একই সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত সরকার ‘ভিসা’ সংক্রান্ত নীতিমালা শিথিল করে।     
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার বিষয়ে বদ্ধ পরিকর।   
বিভিন্ন মহলের ধারণা, প্রধান বিরোধীদল ছাড়াই আওয়ামী লীগের নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ভারতের সমর্থন রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সফরের মধ্য দিয়ে এই ধারণা আরো দৃঢ় হয়।
সুজাতা সিং তার সফরের সময়, নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল নয় বরং ‘সবোর্চ্চ সংখ্যক’ দলের অংশগ্রহণের ওপর ‘জোর’ দেন।
যদিও পঙ্কজ শরণ বলছেন, সুজাতা সিংয়ের ওই সফর প্রথমবারের মত দায়িত্বপ্রাপ্তির পর সরকার ও বিরোধীদলের দলগুলোর নেতৃত্বের সঙ্গে নিছক ‘পরিচিত’ হওয়ার উদ্দেশে ছিলো, নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতায় আলোচনার জন্য নয়।



“তিনি (সুজাতা সিং) কেবল সরকারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গেই আলোচনা বসেননি, বরং সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই আলোচনায় বসেছেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত কোন হস্তক্ষেপ করবে না বলেও স্পষ্ট করেছেন তিনি।

”      
“বাংলাদেশের গণতন্ত্রে স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দেখতে চায় ভারত। এছাড়া আমরা সে ধরনের প্রক্রিয়া চাই যাতে বাংলাদেশের জনগণের মুক্ত, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য হয়। ”
বাংলাদেশ-ভারতের অবিচ্ছেদ্যতা তুলে ধরতে গিয়ে পঙ্কজ শরণ বলেন, “যেহেতু প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিশাল সীমান্ত রয়েছে, কাজেই দুই দেশের কোনো একটিতে যাই ঘটুক না কেন, অপরটিতেও তার প্রভাব পড়বে।
“আমি নিশ্চিত ভারতে কি ঘটে তা নিয়ে বাংলাদেশেরও আগ্রহ রয়েছ। ”
তার এই মন্তব্য স্পষ্টতই বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে ভারতের আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত দেয়।


দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গন্তব্য, “এই অঞ্চলের অন্যকোন প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি এক সূত্রে গাঁথা” বলে যোগ করেন পঙ্কজ।
বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের ‘শান্তিপূর্ণ সংলাপে’র  মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের ব্যাপারে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারত আশা করে বলে জানান ভারতীয় হাইকমিশনার।



তিনি বলেন, “ভারত, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সবসময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল এবং থাকবে। আমরা বাংলাদেশের সাথে টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী, বৃহত্তর এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চাই, যাতে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারি। ”
বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে নানা বৈঠক করেছেন।

অনুষ্ঠানে পঙ্কজ শরণকে প্রশ্ন করা হয়, এই বিষয়টি কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কি-না।
জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত একটি দেশে নিযুক্ত অন্য কোনো দেশের কূটনীতিকই সেই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন না।
“তবে নিজ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে, একজন রাষ্ট্রদূতকে সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, অন্যান্য রাষ্ট্রের সহকর্মী কূটনীতিক ও বিভিন্ন কূটনৈতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়। ”   
এ ধরনের বৈঠক সম্পূর্ণ বিধিসম্মত এবং সারা বিশ্বের কূটনীতিকরাই এটি চর্চা করে থাকেন বলে অভিমত দেন পঙ্কজ শরণ।
ভারত তার উন্নয়নের জন্য পররাষ্ট্র নীতির কাঠামো বৈশ্বিক আদলে ঢেলে সাজিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্য এই সম্পর্ক আগের মতই রয়েছে।

কেননা ১৯৪৭ সালের আগে আমরা একই দেশ ছিলাম এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময়ও আমাদের অবস্থান ছিল খুবই কাছাকাছি। ”   
৪০ বছর ধরে দুই দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখার বিষয়ে ভারত চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
“এরমধ্যে বেশিরভাগ সময় ভালো সম্পর্ক থাকলেও, খারাপ সময়ও গিয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। এই দুইদেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সদ্ভাবের সম্ভাবনা প্রচুর।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.