আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিড়ম্বনা !!

প্রতিটি জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই , যদি কোনো মানুষের থেকে থাকে তবে সে মহামানব নয়ত মহাবেকুব ।

ছিলাম এক ছোট ভাইয়ের বাসায় । রাস্তায় বের হতে একটু ভয় ভয় ই লাগছিল , তবুও বের হলাম । কারন বাসায় তো ফেরা লাগবেই । যদিও এমন কোনো আহামরি দূরে না বাসা তারপরও নির্বাচনী হাওয়া বলে কথা ।

ককটেল আর আর্মির ভয়ে ১০ মিনিটের রাস্তা ও আধা ঘন্টার রাস্তা মনে হয় ।

বুকে প্রায় কেজি খানেক সাহস সঞ্চয় করে বের হলাম রাস্তায় । আমার সামনে পিছনে একটা মানুষ ও নাই । ফাঁকা রাস্তা , কয়েকটা শেয়াল উকিঝুকি মারছে আর টিমটিমে ল্যাম্পপোস্ট । উপরে অন্ধকার আকাশ আর আর নিচে শূন্য রাস্তার শীতের নীরবতা ভেঙ্গে খানখান করে পরপর দুইটা ককটেল ফুটল পাশের রাস্তাতেই ।

ঝেড়ে একটা দৌড় দিব নাকি ভাবতে ভাবতেই আরেকটা ফুটল । অনেক ভেবে দেখলাম দৌড় দিলে পুলিশের সন্দেহে পড়ার আশংকা বহুগুন ।

কথায় আছে না , 'যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় । ' কথাটার সার্থকতা বুঝতে পারলাম আজ । সন্ধ্যা তো নয় একদম রাত হয়ে গেল ।

বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখি মোড়ের উপর পুলিশের গাড়ি (ভাগ্য ভালো আর্মির ছিল না) । জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করল । তারপর কথোপকথন ছিল অনেকটা এরকম _

পুলিশঃ এতরাতে বাইরে কি ?
আমিঃ ইয়ে , রাত তো বেশি হয় নি , সাড়ে ৯ টা বাজে মাত্র তাই চা খাইতে বাইর হইছিলাম ।
পুলিশঃ ফাইজলামি কর ? রাস্তাঘাট ফাঁকা এর মাঝে চা খাইতে বের হওয়ার কি দরকার ? বাসায় থাকা যায় না ? আইডি কার্ড আছে ? কই দেখি ।

পকেট থেকে আইডি কার্ড বের করে দিলাম ।

পুলিশ অফিসারের চেহারার হাবভাব দেখে মনে হল আইডি কার্ড উনার পছন্দ হয় নাই । পাশের আরেক কমবয়সি পুলিশের দিকে তাকিয়ে আমাকে সার্চ করার ইঙ্গিত দিল । তিনবার করে সার্চ করেও সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে ব্যার্থ হয়ে হতাশ ভাবে বড় অফিসারের দিকে তাকাল বেচারা পুলিশটা । উনি আবার আমার দিকে মনোনিবেশ করলেন ।

পুলিশঃ বাড়ি কই ?
আমিঃ জ্বী এইতো এই রাস্তা দিয়ে যেয়ে একটু সামনেই ।

ডানদিকের গলি তে ।
পুলিশঃ বাপের নাম কি ? বাপ কি করে ?
আমিঃ দিলাম উত্তর ।
পুলিশঃ ককটেল মারছে কে দেখছ নাকি ?
আমিঃ জ্বী না দেখি নাই । আমি তো চা খাইতে ছিলাম ।
পুলিশঃ ভোটের আগে রাতের বেলা এইভাবে বাইরে ঘুরাঘুরি করতে হয় না জানো না ? ভোটার না তুমি ? নিয়ম কানুন জানো কিছু ? জানা তো উচিত ।


আমিঃ না মানে , আসলে ভোট তো দিব না তাই অত কিছু চিন্তা করি নাই আর কি ।
পুলিশঃ ভোট দিবা না ক্যান ? ভোট নাগরিক অধিকার এইটা জানো না ? তোমাদের মত মাথামোটা তরুনরা ভোট না দিলে সরকার নির্বাচন হবে কি ভাবে ? দেশ চালাবে কে ?
আমিঃ জ্বী আঙ্কেল তা তো জানি । তবে এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাই নি তো তাই ভোটকেন্দ্রে যাইতে ভয় লাগে , কখন কি হয় কেউ কি বলতে পারে । (আঙ্কেল বলাতে ক্যান জানি পুলিশটা নরম হইয়া গেল । )
পুলিশঃ অত কথার দরকার নাই ।

সোজা বাড়িতে যাও । একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করবা না । সোজা হাঁটা দাও । অন্য কোনোদিকে গেলে খবর আছে , আমি দেখতেছি কিন্তু ।
আমিঃ জ্বী আচ্ছা ।



কোনোমতে ছাড়া পেয়ে বাসার দিকে অনেকটা জগিং করার মত স্টাইলে দৌড় দিলাম । ভাগ্য ভালো বলতে হবে যে , ভোট প্রসঙ্গ উঠে আসাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের উছিলা দিয়ে কোনোমতে এড়িয়ে যেতে পারলাম । রাজনীতি নিয়ে আমার মহাজাগতিক মতামত প্রদান করা শুরু করলে যে কি হত তা মহান আল্লাহ তাআলা ই ভালো জানেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।