তোতা পাখির জগৎ খাঁচায় বন্দি.... তার ভাষা মনিবের বাক্যেই সীমাবদ্ধ। তোতাপাখি হতে কীবোর্ড ধরিনি, এখানে তোতাপাখি হতে আসিনি!!
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে ও প্রতিবাদে দিনাজপুরে মানববন্ধন হইছিল ১০ তারিখ। সেই মানববন্ধনে ছিল মহিলা পরিষদ, টিআইবি'র ইয়েস গ্রুপ, আর প্রথমআলোর বন্ধুসভা (ব্যানার অনুযায়ী)। মহিলা পরিষদের মূল আহ্বান ছিল। (অথবা প্রথমআলো আর ওদের মানববন্ধনের সময় কাকতালীয় ভাবে এক হয়ে গেছিল।
)
যখন আমি পৌছাই, দেখি লম্বা লাইন... প্রায় সবই মহিলা, মাইকে কেউ একজন উপস্থাপনা করতেছে। লাইনের অন্যমাথায় গিয়ে আমাদের ইয়েস গ্রুপের মেম্বারদের দেখলাম। বন্ধুসভা তখনও দাঁড়ায় নি। কিছুক্ষন পর প্রেসক্লাব থেকে বন্ধুসভার মেম্বাররা বেরিয়ে দাঁড়ালো আমাদের পাশে। আরও কিছুক্ষন পর আসলো তাদের ব্যানার।
এরও কিছুক্ষন পর সেখানে উপস্থিত হইলেন প্রথমআলোর 'দিনাজপুর প্রতিনিধি'। তিনি আসার কিছুক্ষনের মধ্যে বন্ধুসভার হাত থেকে চলে গেল ব্যানার। আবিষ্কার করলাম মাঝামাঝি কোন এক যায়গায় প্রথমআলোর ব্যানার আছে এবং সেটার কিছু সুন্দর ছবিও তোলা হচ্ছে। এতটুকু পর্যন্ত যা হয় হোক, মেনে নেওয়া কুন ব্যাপার না। আমরা সহনশীল জাতি!
কিন্তু, ১১ তারিখের প্রথমআলোর পৃষ্ঠা ৫ কিংবা ৭-এ প্রথমআলোর ব্যানার সহ একটি লম্বা লাইনের ছবি দেওয়া হইছে।
সমস্যা এটাতেও না! তাদের প্রোগ্রাম সফল হইছে এটা তারা দেখাতেই পারে। আমরা কারও সফলতায় ঈর্ষান্বিত না, তারা আরও সফল হোক এই কামনাই করি। সফল হওয়ার পর আপনার সহযোগীদের নামও উল্লেখ করবেন না, সেটাও না হয় সম্প্রিতির খাতিরে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে অন্য একজনের বানানো কেক আপনি নিজের বানানো বলে চালায় দিবেন আর আমরা চুপ করে থাকব, তা তো হয় না!
পেপারে আসা সেই ছবির বিবরণীতে লেখা "দিনাজপুরে প্রথমআলোর মানববন্ধন"। কিন্তু ছবিতে আসা প্রায় সব মানুষই ছিল মহিলা পরিষদের।
শরীক হিসাবে তাদের নামও উল্লেখ করা হয় নি সেই ছবিতে। টিআইবি'র ইয়েস গ্রুপের যেহেতু কেউ সেই ছবিতে নাই তাই তাদের নাম উল্লেখ না হয় নাই করলেন!!!
দুঃখিত, এমন একটি লেখা লেখার জন্য। কিন্তু এটা পড়ে যে যত দুঃখিত তার থেকেও অনেক বেশি দুঃখিত আমি। দীর্ঘ ৩ বছরের অধিক সময় ধরে আমি প্রথমআলোর বিভিন্ন কাজকর্মের সেচ্ছাসেবক হয়েছি। যদিও, আমি বন্ধুসভার রেজিস্টার্ড মেম্বার না।
তবুও.. যখনই কোন খবর খোঁজার প্রয়োজন সবার আগে প্রথমআলোর নাম আসে। গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মত যে ইভেন্ট গুলো আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে এই প্রথমআলো। 'স্বপ্ন নিয়ে' ফিচার পাতাটি আমার মত অনেক তরুণ-তরুণীর মাঝে স্বপ্ন-আত্মবিশ্বাস জাগায়। 'বদলে যাও, বদলে দাও' মিছিল সাহস দেয় বাংলাদেশ বদলে দেওয়ার। আর এই প্রথমআলোই শিখিয়েছে 'উটপাখি' হয়ে না থাকার, অন্যায় কিংবা অঠিকের প্রতিবাদ করার।
তাই আজ এইকথা গুলো লেখা।
এখানে আসলে প্রশ্ন উঠে ইথিক্সের। এমনিতেই প্রথমআলোর 'ইথিক্স' আজকাল বেশ আলোচিত একটি বিষয়! সমস্যা বন্ধুসভার না। সমস্যা সাংবাদিকদের। কিন্তু বন্ধুসভা এইসব নিয়ে চুপ থাকে এটা অবশ্য কাম্য না।
আমরা খুবই সহনশীল এইটাই সমস্যা!! আর জ্যেষ্ঠতার সম্মান দেখাইতে যায়ে বেঠিকটাকেও নীরব সমর্থন দিয়ে ফেলি। সাংবাদিক হওয়া উচিৎ সত্যান্বেষী, স্বার্থান্বেষী না। এমন একটি আংশিক সত্য প্রকাশের দায়ভার আসলে যার উপর বর্তায় তার চোখে আমার এই ছোটো কথাটা যাবে না। কিন্তু আমি এর জন্য অল্প হলেও জবাবদিহিতার স্বীকার হইছি। নিজের কাছে জবাবদিহিতা থাকলে নৈতিকতা, স্বচ্ছতা এমনিতেই সবার মধ্যে এসে যাবে।
আশাকরি 'বন্ধুসভা' সাংবাদিকদের সততা বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে আরও সোচ্চার হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।