ছোটবেলা থেকেই ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। একটু বড় হয়ে এর সাথে যুক্ত হ’লো পড়া ও লেখালেখি, তারপর ফোটগ্রাফি।
হিমহিরি এক্সপ্রেস। নামটি যেমন সুন্দর ট্রেনটিও তেমন সুন্দর। অপেক্ষাকৃত অন্যান্য সিটের চেয়ে এসি-টু টায়ারের শোয়ার এবং বসার সিটগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশি।
শুয়ে শুয়ে বই পড়ার জন্যে এডজাস্টটেবল রিডিং লাইট, ধোলাই করা টাওয়াল-বেডসিট সাথে খাওয়াদাওয়ার মানও বেশ উন্নতমানের। কলকাতা থেকে ২০২০ কিলোমিটার। প্রায় চল্লিশ ঘন্টা জার্নি শেষে আমরা যখন জম্মু রেল স্টেশনে পৌঁছলাম তখন বেলা প্রায় তিনটা। স্টেশন থেকে বেরিয়েই আক্কেল গুড়ুম আমাদের। শ'য়ে শ'য়ে মানুষ দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে আছে কিন্তু কোন গাড়ি যাচ্ছে না।
প্রি-পেইড টেক্সি কাউন্টারে খবর নিয়ে জানতে পারলাম আজ বনধ। কোন গাড়ি শ্রীনগরে যাবে না। আশেপাশে তাকালাম, দেখলাম বৃদ্ধ, কোলের শিশু নিয়ে মানুষজন বড্ড অসহায় হয়ে মালপত্তর নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে আছে। আমার দীর্ঘ ভ্রমণ অভিঙ্ঘতা থেকে আমি জানি পৃথিবীতে দু'নম্বর ব্যবস্থা সবখানেই থাকে। তাই বিকল্প সন্ধানে বেরুলাম।
স্টেশনের পাশেই সরু গলিতে একটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলতেই তারা মোটামুটি সহনীয় ভাড়াতেই আমাদের শ্রীনগর নিতে রাজি হয়ে গেল। আপেলের ভরা মরসুর, তাই গাড়িতে ওঠার আগে খুব সস্তায় প্রতিজনের জন্যে দু'টি করে বিশাল আকৃতির আপেল কিনে বেলা সাড়ে তিনটায় রওনা দিলাম কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১৪ ঘন্টা পাহাড়ী রাস্তায় জার্নি শেষে যখন শ্রীনগরে পৌঁছলাম তখন রাত দু'টো। মেইক মাই ট্রিপ ডট কমে হোটেল রির্জাভেশন আগেই করা ছিল। এই রাত দুপুরে হোটেল ওয়ালাকে ফোন করতেই সে জানালো যে লোক পাঠাচ্ছে আমাদেরকে চোদ্দ নম্বর ঘাটের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।
শুরুতেই খটকা লাগলো যা একটু পরেই সত্যি প্রমানিত হলো। ওয়েবসাইটে হোটেলের ছবিতে তা ডাঙার হোটেল দেখালেও সত্যিকারের হোটেলটি বিখ্যাত ডাল-লেইকের ওপাড়ে। প্রায় আধ-ঘন্টা অপেক্ষার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার ডাল-লেইক থেকে ভেসে এলো বৃদ্ধ-তরীওয়ালার ডাক। পরিস্থিতি অনেকটা ব্যাখাতীত, মাঝ-রাত, পুরো শ্রীনগর শহর সুনসান, এর মধ্যে অন্ধকার লেইক থেকে যেন নরকের দুত আমাদের নিতে এসেছে শয়তানের কেয়ারা নিয়ে। যাই হোক বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদ-সংকুল কাশ্মিরের পথে পড়ে থাকার চেয়ে সেই ডাকে সাড়া দেওয়াই উত্তম মনে করলাম।
লেইকের ওপাড়ে গিয়ে হোটেল রুম দেখে আরেকবার দমে গেলাম টয়লেটের অবস্থা দেখে। রুমের মধ্যেই টয়লেটের ভ্যান্টিলেশন । এই মাঝ রাতে কিছুকরার নাই দেখে কোনক্রমে রাতটি পার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।