আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বর্গ দর্শন: ভূ-স্বর্গ কাশ্মির ভ্রমন (তৃতীয় পর্ব)

ছোটবেলা থেকেই ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। একটু বড় হয়ে এর সাথে যুক্ত হ’লো পড়া ও লেখালেখি, তারপর ফোটগ্রাফি।

কাশ্মির মানেই তো বরফরাজ্য, এতো বছর শুধুমাত্র তুষার-আবৃত কাশ্মিরের বিভিন্ন ছবি দেখে দেখে এমন ধারণা জন্মে গিয়েছিল আমাদের সবার। কিন্তু বরফ কই, তুষারপাত কই, আমাদের তো মাথা খারাপ অবস্থা। আজ তাই আমরা সোনমার্গ যাবো।

যতটুকু জেনে নিয়েছি তাতে এই ভর-গ্রীষ্মে শুধুমাত্র সোনমার্গের গ্লেসিয়ারগুলোই বরফে আবৃত থাকে। আমাদের ড্রাইভার রিয়াজভাই ঠিক সময়মতোই আমাদের তুলে নিলো আমাদের হোটেল থেকে। ডাল লেইক, নাগিন লেইক হয়ে গাড়ী ঘুরে সোজা ঢুকে গেলো বিস্তৃর্ন ধানক্ষেত সমৃদ্ধ কাশ্মিরের গাঁ এলাকায়। সবুজ ও সোনালী পট-ভূমিকায় ধূসর পাথরের গা ও সবুজ এসবেসট্রসে ছাওয়া গ্রাম-ঘর গুলোকে দেখতে অনেকটা অয়েল পেইন্টিং এর মতো। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গের দূরত্ব মোটামুটি ৮০ কি: মি: , কিন্তু বিপদসঙ্কুল পাহাড়ী রাস্তা হওয়াতে এই দূরত্ব পেরুতেই প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেগেলো আমাদের।

গাড়ী সোনমার্গ জিরো পয়েন্টে পৌঁছতেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অর্থাৎ যথারীতি ঘোড়া ওয়ালাদের অত্যাচার, সাথে যুক্ত হলো আরেক সমস্যা। সোনমার্গ লোকাল ভিউ দেখতে হলে সোনমার্গের বাইরে থেকে আসা কোন গাড়ীকে যেতে দেওয়া হয় না। লক্কর-ঝক্কর মার্কা টাটাসুমোই হায়ার করতে হবে তার জন্যে। গ্লেসিয়ারের দূরত্ব কতটুকু জানতাম না তাই এবারও ধরা খেলাম ।

আসা যাওয়া মাত্র ৬ কি:মি: পথের জন্যে দু'হাজার রুপি গুনতে হলো। অচিন দেশ, কি আর করা। সোনমার্গ ভ্যালিতে পৌঁছলে আবারও ঘোড়াওয়ালা !!! এযেন ঘোড়ার রাজ্য। মেজাজটা এমনিতেও খিচঁরে ছিলো, তাই দু'একজনকে ধমক লাগাতেই পথ ছেড়ে দিলো বটে, কিন্তু পেছন থেকে ঠিকই টিটকারি দিতে থাকলো এই বলে যে হেঁটে গেলে জীবনেও বরফের দেখা পাবো না। কিছুক্ষণ পরের তাদের ভবিষ্যত বানীকে বিফল প্রমাণিত করে দেখা মিললো তুষার-ছাওয়া পর্বতের, তবে অনেক উঁচুতে এবং সীমিত আকারের।

গলিত বরফের হিমশীতল জল নেমে এসে সোনমার্গ ভ্যালিতে সৃষ্টি করেছে পাথুরে ছড়ার, কুলকুল শব্দে বইছে সে বিশুদ্ধ জলের ধারা। সবাই জুতো খুলে নেমে গেলাম তাতে, তবে কয়েক মুহুর্তের জন্যেই। কেননা জল এতোটাই ঠান্ডা যে দশ-পনের সেকেন্ডের বেশি থাকা যাচ্ছে না। খাওয়ার পানির বোতল ভরে নিলাম, সাথে থাকা বিস্কুট ও জেলি সহযোগে সবাই হাল্কা নাস্তা খেলাম, স্বস্তিও পেলাম, কারণ এখানেও অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। ঝরণাজলের উপর নির্মিত দৃষ্টি-নন্দন কাঠের সেতুর উপর বসে বসে স্বর্গীয় অনুভব পাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি ছবি তুলছি, এমন সময় এলো জিরো পয়েন্ট যাওয়ার প্রস্তাব, ড্রাইভাররা যা বললো তাতে এখন গেলে শেষ বিকেলে ফেরা যাবে।

কেমন যেন বিশ্বাস হতে চায়লো না, হাতের এন্ড্রইডে সার্চ দিলাম, ওরে সর্বনাশ !!! সোনমার্গ থেকে বরফাবৃত জিরো পয়েন্টের ট্রাভেল ডিসটেন্স ১৬৭৪ কি:মি: , ভয়ঙ্কর দুর্গম এই পথে যাওয়াতেই শুধুমাত্র ২১ ঘন্টা লাগবে। আর কারগিল গেলে জিরোপয়েন্টে নাইট হল্ট করে ১৮১৩ কি:মি: ! গুগলকে আবারো ধন্যবাদ জানালাম সুবিশাল এই তারনা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্যে। পরিত্রাণায় সাধুনাং......ঝর্নাজলবাহী পাথুরে নদী তার উপর নয়নাভিরাম রিসোর্ট। এখানেও গলফ-কোর্টের মতো সবুজাভ ঘাসের লন এককথায় অনন্য। রিসোর্ট সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সারলাম কাশ্মিরি মসলা সমৃদ্ধ ঝাল মুরগী ও ফ্রাইড রাইজ সহকারে।

খেয়ে অনিন্দ্য-সুন্দর সোনমার্গ-ভ্যালির লনের বিছানো বেঞ্চে বসে রোদ-পোহাচ্ছি আর ছবি তুলছি ইচ্ছে মতো। জায়গাটা আমাদের এতোই ভালো লাগলো যে একরাত ওখানে থাকার জন্যে হোটেলে গিয়ে রুমের জন্যে দরদামও করে ফেললাম। কিন্তু আমাদের সীমিত বাজেটে একই দিনে দু'দুটো হোটেল রেন্ট বেশ অতিশায্যই হয়ে যায়। তাই সোনমার্গে থাকার পরিকল্পনা বাদই দিলাম। রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে।

আমরা চলছি, আমাদের পাশাপাশি চলছে বরফগলা সিন্দ-নদী। কিছুদূর যেতেই দেখা মিললো নদীর ওপারে ম্যাপল-গাছে ছাওয়া আরেকটি চিলড্রেন পার্কে। মাথাপিছু দশটাকা দর্শনী দিয়ে ঢুকলাম সবাই। চা খাওয়া জরুরী তাই চড়া দাম সত্বেও পার্কের সুন্দর ছাউনীতে বসে চাও খেলাম। তারপর একেবারে সন্ধ্যা নামলে রওনা হলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে।




অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.