ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীই থাকছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগে আসছে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজ ভাবমূর্তির মুখ। বাদ পড়ছেন তদবিরবাজ, বিতর্কিত ও অদক্ষরা। প্রাধান্য দেওয়া হবে সাবেক ছাত্রলীগ ও জেলার ত্যাগী ও দক্ষ নেত্রীদের। এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মহাজোটের কারণে ছেড়ে দিতে হয়েছে এমন মুখও আসতে পারে। বিগত সংসদের ন্যায় এবারও থাকছে দু-তিনজন সেলিব্রিটি। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল থেকে উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার কাজ। আজ ও আগামীকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার কাজ চলবে। দশম জাতীয় সংসদের ন্যায় সংরক্ষিত আসনেও একটি ফরম বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। গতকাল প্রথম দিনে ২১০টি ফরম বিক্রি হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি রবিবার বিকাল ৩টায় গণভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার গণভবনে রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিনকে পুনরায় মনোনীত করার পক্ষে মত দেন একাধিক সদস্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদীয় বোর্ডের এক সদস্য বলেন, সংসদীয় বোর্ড সভায় একাধিক সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার হিসেবে মনোনীত করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। তিনি যেহেতু সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নন সেহেতু সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে এবারও তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা হবে। যে কারণে আজ থেকেই (গতকাল) সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পুরো বিষয় নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রীর ওপর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দলীয় সূত্রমতে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গেই এগোচ্ছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মন্ত্রিসভা গঠনের পর দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের ইমেজ যেভাবে 'ইউটার্ন' করেছে তার ধারাবাহিকতা সংসদেও রক্ষা করতে চান দলীয় নেতৃত্ব। ফলে তদবিরবাজ, বিতর্কিত ও অদক্ষরা বাদ পড়ছেন। নবম জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিএনপি সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হলে ওই এলাকার টিআর-কাবিখা বিতরণ, স্কুল-কলেজে নিয়োগ, উন্নয়ন কাজের টেন্ডারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এবার তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। তবে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধসহ সহিংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে সরব ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে জোর লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ জেলার নেত্রীরা। তারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। বিভিন্নভাবে দলের সভানেত্রীর কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতেও চলছে নানা প্রচেষ্টা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার মনোনয়ন দৌড়ে নতুনদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন্নাহার হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূরজাহান বেগম মুক্তা, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগের সহ-মহিলা সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার, ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের উত্তরের দফতর সম্পাদক রিটাকে আফজাল, যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেহেলী কুদ্দুস মুক্তি, যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাবিনা আক্তার তুহিন, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে ও অভিনেত্রী শমী কায়সার, ফাল্গুুনী ফামিদ, সারা জাকের। পুরনোদের মধ্যে এবারও যারা থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশারফ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, অভিনেত্রী তারানা হালিম, শেফালী মমতাজ, হামিদা পারভীন শোভা, শাহিদা তারেক দীপ্তিসহ বেশ কয়েকজন। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন জেলার নেত্রীদের নামও শোনা যাচ্ছে আলোচনায়। তাদের মধ্যে কুড়িগ্রামের মতি শিউলি রায়। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। পটুয়াখালীর কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, শরীয়তপুরের পারভিন হক সিকদার, জোবায়দা হক, দিনাজপুরের ভারতী নন্দী সরকারসহ অনেকের নাম।
উৎসবমুখর পরিবেশ ধানমন্ডি কার্যালয়ে : সংরক্ষিত মহিলা আসনে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিন গতকাল দলের সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলের নেত্রীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। কোনো প্রার্থী নিজ নিজ সংগঠনের নেত্রী ও এলাকা থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এসেছেন। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ কার্যক্রম চলে। গতকাল ২১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন এবং ৫টি ফরম জমা পড়েছে বলে দলের দফতরের দায়িত্বে থাকা আবদুস সোবহান গোলাপ জানান। গতকাল যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আশরাফুন্নেছা মোশারফ, পিনু খান, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, তাহমিনা আকতার, সৈয়দা রুবিনা আকতার মিরা, নাজমা হোসেন বেবী, কাজী রুহিয়া বেগম হাসি, কাজী কানিজ সুলতানা হোসেন, রোজী রহমান প্রমুখ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।