মানুষ মাত্রই জ্ঞানী। জ্ঞানই আত্মা । আমি মানুষ , আমার ঔরসে জন্মায় দেবতার কারিগর।
অবাধ্য শব্দটা বেশ পরিচিত । অভিভাবক মহলে সবচেয়ে বেশি কথিত শব্দ ।
আমার সন্তান অবাধ্য । কিন্তু সন্তান অবাধ্য কেন হয় ? বাবা মায়েরা এই রহস্যের সন্ধান কোন ভাবেই বের করতে পারেনা ।
আমি বলি সন্তান অবাধ্য হওয়ার মূল এবং অন্যতম কারন হচ্ছে অভিভাবকরা নিজেই । অবাক হলেন , আমাকে গালি দিলেন । দিন কিন্তু সত্য এটাই যে অভিভাবকরা নিজেরাই নিজের সন্তানকে অবাধ্য করে তোলে ।
মাঝে মাঝে যার চরম মুল্য দেয় সন্তান এবং অভিভাবক উভয়েই ।
"অবাধ্য" এই শব্দটি যেমন অভিভাবক মহলে অতি কথিত । তেমনি সন্তানরা তার অভিভাবকের কাছ থেকে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি শুনে এবং যে শব্দটির কারণে সে অবাধ্য হয় তা হল " না " , অদ্ভুত তাই না ছোট্ট এই " না " শব্দটি মা বাবার কাছ থেকে সন্তানকে হাজার মাইল দূরত্বে নিয়ে যায় করে তোলে অবাধ্য ।
জন্মের পর থেকে মা বাবা অতি যত্নে বড় করে । আর বড় বা বুঝ হওয়ার পর বাবা মা কোন ভাবেই মানতে চায়না যা তার সন্তান একজন ব্যাক্তি তার কিছু কথা থাকতে পারে , থাকতে পারে তার ভালো লাগা বা না লাগা ।
তাদের এক কথা ,ও কি বুঝে ? ও কি জানে ? আমি বলি এটাই ঠিক ।
সন্তান যাই বলে বুঝে অথবা না বুঝে বাবা মায়ের সাফ জবাব " না ", যা শুনতে শুনতে ক্লান্ত,বিরক্ত , ত্যাক্ত হয়ে সন্তান হয় অবাধ্য। কিন্তু অভিভাবক বুঝেই না যে এই অবাধ্যতা সেই তার সন্তানকে শেখাচ্ছে । সে যেহেতু প্রতি কথায় 'না' বলছে , তা থেকেই তার সন্তান এই 'না' বলা শিখছে । এবং শিখে প্রথম প্রয়োগ করছে বাবা মায়ের উপর তারপর স্কুল , বন্ধু , আত্মীয় স্বজন এভাবে সব জায়গায় এবং এক সময়ে নিজের সন্তানের প্রতি ।
ছোট্ট যে কোন বিষয় থেকে শুরু করে বিয়ের মত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অভিভাবক নিয়ন্ত্রণ করতে চায় । মা এই খেলনা কিনব, জবাব ,না । মা এই শার্ট পছন্দ , না এই কালারটা না এটা নাও । বাবা ব্যাবস্থাপনা নিব , না বুয়েট বা মেডিকেলে পড়বে । এই মেয়েকে পছন্দ , কি ওর কোন স্ট্যাটাস আছে অমুক কোটিপতি বা ডাক্তার সাহেবের মেয়ে কত লক্ষ্মী ওকেই বিয়ে করবে ।
আর মেয়েদের কথা বললামই না কারণ ওরা জন্ম থেকে মরা পর্যন্ত বোবাই থাকে । যাও ২/১ বার মুখ খুলে কিন্তু হয় চোখ রাঙ্গানি অথবা লজ্জায় তার আর এ জীবনে কিছুই বলা হয়না ।
জরীপ করলে দেখা যাবে যে সন্তানরা বেশি অবাধ্য তারা তার পরিবার বা অভিভাবকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ' না ' বিষয়টির সম্মুখীন হয়েছে । তারা তাদের পরিবার বা অভিভাবকের প্রতি সবচেয়ে বেশি বিরক্ত । তাদের অভিভাবকরা তাদের প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে ।
বাবা মায়ের দাবী আমি কষ্ট করে জন্ম দিয়েছি ,বড় করেছি , মানুষ করেছি আমাদের কি কোন দাবী নেই ? এখন আমি যদি বলি আপনার সন্তান কি জন্মের আগে আপনাদের এসে ধরেছিল , আমাকে জন্ম দাও বড় করো । যা করেছে বাবা মা তাদের সিদ্ধান্তে করেছে ।
দাবী সন্তানের প্রতি অবশ্যই আছে কিন্তু সেও একজন ব্যাক্তি তারও নিজস্ব মত আছে কিন্তু আপনি তার মুল্য বা গুরুত্ব কেন দেবেন না ? আপনি সন্তানের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে বরং তাকে অন্যের মতের গুরুত্ব না দেয়া শেখাচ্ছেন যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য খুব ক্ষতিকর ।
তাহলে সন্তানকে সব ক্ষেত্রে শুধু ' হ্যা ' বলবো । আমি তা বলছিনা কিন্তু যে কোন আবদার বা অনুরোধ বা বিষয়ে শুরুতেই তাকে ' না ' শব্দটি বলা যতদূর সম্ভব বন্ধ করা উচিৎ ।
সন্তানের সব কথা মানতে হবে অবশ্যই তা নয় । তাদের সাথে কথা বলুন । আলোচনা করুন বোঝান কি কারণে তার কাজটি করা উচিৎ নয় । যে কোন বিষয়ে তার যুক্তি মন দিয়ে শুনুন এবং আপনার যুক্তি গুলো বলুন । ঠিক একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন ।
একদম ছোট থেকেই এভাবে গড়ে তোলা দরকার ।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের মামা , চাচা বা বড় অন্য কারও সাথে সন্তানের বেশ ভালো সম্পর্ক । সে যে কোন কিছুতেই তার কাছে ছুটে যায় । তাহলে সেই অর্থাৎ যার কাছে সন্তান যাচ্ছে , সেই কি ঠিক ? না আসলে বিষয়টা তা না । বিষয় হচ্ছে আপনার সন্তান তার মন খুলে তার মনের কথা গুলো সেখানে বলতে পারে ।
সন্তানকে অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ এবং নির্দিষ্ট (২২-২৫) একটা বয়সের পর পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া দরকার ।
আপনার সন্তানের কথা গুলো শুনুন এবং তাকে বুঝুন এতে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে । সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে তা যথেষ্ট সহায়ক হবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।