রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস। বাড়ছে নগরবাসীর দুর্ভোগ। কেউ কেউ বলছেন, রাজধানীর কাউন্টার বাস সার্ভিস এখন নগরবাসীর গলার কাঁটা। এসব কারণে সাধারণ যাত্রীরা কষ্ট করে এসব বাস ও মিনিবাসে চলাচল করতে চান না। ফলে বন্ধ হওয়ার পথে রাজধানীর কাউন্টারভিত্তিক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। কয়েক বছর আগে ৭২ গণপরিবহনের কাউন্টার সার্ভিস থাকলেও এখন সচল রয়েছে মাত্র ১২টি। ৬০টির কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। ফুটপাত ছিল এসব বাসের কাউন্টারে ভরা। টিকিট বিক্রির জন্য কাউন্টার কর্মীদের হাঁকডাক সারাক্ষণ লেগে থাকত। কিন্তু হাল আমলে হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া আর দেখা যাচ্ছে না। এমন কিছু বাসের স্থান হয়েছে ডাম্পিং গ্যারেজে। কিছু বাস কাউন্টার পদ্ধতিতে চলাচল করলেও বেশির ভাগই লোকালে পরিণত হয়ে লক্কড়-ঝক্কড় বাসের কাতারে মিশে গেছে। ফলে আবারও লক্কড়-ঝক্কড় বাসই হয়ে উঠেছে নগরবাসীর যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন।
রাজধানীর গণপরিবহনে কাউন্টারভিত্তিক যাত্রী পরিবহন শুরু নব্বই দশকে। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সিএনজিচালিত যানবাহনকে প্রাধান্য দিলে ৫২ সিটের কাউন্টারভিত্তিক বড় বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৪ সালে কাউন্টারভিত্তিক বাস ব্যাপকতা লাভ করে। তখন প্রায় প্রতি মাসেই রাজপথে নতুন নতুন বড় বাস নামতে থাকে। এগুলোকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টিকিট কাউন্টার স্থাপন করেন বাস মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত এক দশকে রাজপথে নামা আধুনিক বাসগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির ডাম্পিং এলাকায়। এসব বাস ছিল চীনের তৈরি। বাসগুলোর মান নিম্ন হওয়ায় বেশি দিন চালানো যায়নি। পরিবহন ব্যবসায় এসে তারা এজেন্টের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এর ফলে সব বাস বন্ধ করে গাজীপুরের ভোগড়ায় ডাম্পিং এলাকায় ফেলে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। শত শত বাস এখন আমিনবাজার, গাজীপুর ও কাঁচপুরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে ধুঁকে ধুঁকে চলা ট্রান্সসিলভা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম খোকন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিএনজির দাম দ্বিগুণ করার পর গাড়ির যন্ত্রাংশের দামও এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মূলত তখনই বিকশিত পরিবহন ব্যবসায় ধাক্কা লাগে। ফলে ব্যাংক ঋণের কিস্তি জমতে জমতে বহু কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে যে টায়ারের দাম ছিল ৬ হাজার টাকা বর্তমানে তা ৩৫ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে কোনো রকমে ব্যাংক ঋণের কিস্তি দেওয়ার জন্য কিছু মালিক তাদের টিকিট কাউন্টার গুটিয়ে বাসগুলো ড্রাইভারদের কাছে দৈনিক চুক্তিতে দিয়েছেন। ড্রাইভাররা এগুলো লোকাল হিসেবে চালাচ্ছে। এসব বাসের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে না হওয়ায় লক্কড়-ঝক্কড় হয়ে পড়েছে। এসব বাসে যাত্রীরা উঠতে চান না। এ ছাড়া বর্তমানে ট্রান্সসিলভাসহ চার-পাঁচটি কোম্পানি কাউন্টারভিত্তিক চলছে। এসব বাসের অবস্থাও ভালো নয়। এ ছাড়া ঢাকা-ডেমরা সড়কে চলাচলকারী প্রিন্স পরিবহনের মালিক গোলাম কাদের বলেন, হঠাৎ বিভিন্ন সড়কে কাউন্টারভিত্তিক চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। এক মাস আগেও ট্রিপের জন্য ১০০ টাকা দিতে হতো। এখন দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।
জানতে চাইলে কাউন্টারভিত্তিক বাস মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, লাইন ধরে বাসে ওঠার একটা সুশৃঙ্খল ধারা চালু করেছিলাম। কিন্তু পরিবহন সেক্টরে যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের কাছেও কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাটি মনঃপুত ছিল না। অর্ধেক ভাড়ার নামে ছাত্ররা অসংখ্য নতুন বাস ভাঙচুর করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা না করে সিএনজির মূল্য দ্বিগুণ করে দিলে কোম্পানিগুলোর ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন যে যেভাবে পারছে গাড়ি চালাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারিভাবে নতুন বাস পরিচালনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও এক বছর ধরে সরকারি গণপরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বেশ কিছু নতুন বাস নামিয়েছে। এগুলো টিকিট কাউন্টারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সিএনজিচালিত বাসের পাশাপাশি ডিজেলচালিত লক্কড়-ঝক্কড় বাসও এখন রাজধানীতে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। বহু বাসের বয়স ২০ বছরেরও বেশি। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া লক্কড়-ঝক্কড় বাস সব বন্ধ করে দিলে নগরীতে মানুষের চলাচলে স্থবিরতা দেখা দেবে- এমন আশঙ্কায় বিআরটিএ বড় ধরনের তৎপরতা দেখাতে পারছে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।