আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপর্যস্ত সংগঠন নিয়ে বিপাকে জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কয়েক বছর ধরে বন্ধ। সারা দেশের কার্যালয়েরও একই অবস্থা। দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থাও করুণ। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরাও মামলার জালে বন্দী। নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন বাতিল। প্রশাসনের কঠোর চাপে কর্মসূচি পালন দূরের কথা নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যেই আসতে পারছেন না। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিএনপি জোটের সমাবেশে জামায়াতকে রাখা হয়েছে বাইরে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়েছে। এরই মধ্যে আবদুল কাদের মোল্লার রায় কার্যকরও হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করেছে। সংসদ অধিবেশনও চলছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ আর বিরোধী দল তৎকালীন মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল নির্বাচন বর্জন করায় জামায়াতও রয়ে যায় এ প্রক্রিয়ার বাইরে। এবারই প্রথম সংসদে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি নেই। সামনের দিনগুলোয় জামায়াতের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে এমনটাই আশঙ্কা নেতা-কর্মীদের। সব মিলিয়ে বিপাকে জামায়াত। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এ বছর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নাশকতা চালানোর সময় সারা দেশে নিহতের সংখ্যা নিরূপণ করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকার পাশাপাশি করা হয়েছে গত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে সারা দেশে নিহতের আরেকটি খতিয়ান। সে তালিকা থেকে জানা গেছে, গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে ৩১, রাজশাহী অঞ্চলে ৫৭, ঢাকা অঞ্চলে ৩, ফরিদপুর অঞ্চলে ২, বরিশাল অঞ্চলে ১, সিলেট অঞ্চলে ৩, কুমিল্লা অঞ্চলে ২১, ঢাকা মহানগরীতে ৬, খুলনা অঞ্চলে ৩৩, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৭ জন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। এতে নিহতকে 'শহীদ' আখ্যা দিয়ে নাম-ঠিকানা, নিহত হওয়ার স্থান ও সাংগঠনিক পদমর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে মামলা, গুমের খতিয়ান। এতে দাবি করা হয়েছে, পাঁচ বছরে মামলা হয়েছে লক্ষাধিক, আসামি করা হয়েছে ৮ লক্ষাধিক। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ৫ লাখ। পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে হেফাজতের ৫ মের অপারেশন শাপলায় আহতরাও আছেন। আটক হয়েছেন ১ লাখের বেশি। তবে আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ায় বর্তমানে সংখ্যাটি ৩০ হাজারের বেশি। গুম ও অপহরণ হিসাবে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১০২ জন। যৌথবাহিনীর মাধ্যমে তাদের নেতা-কর্মীদের প্রায় ১ হাজারের বেশি বসতভিটা ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তালিকায় দাবি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত সংগঠন নিয়ে বিপাকে জামায়াত। নেতা-কর্মীরা জানান, এ সময়ে সাংগঠনিক সমৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফের বাংলাদেশ 'সরকারবিরোধী' তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গত মহাজোট সরকারের শাসনামলে নিহত নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধকে 'নির্যাতন' হিসেবে দেখিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি ভিডিওচিত্র। বহির্বিশ্বে সরকারকে 'নিপীড়ক' হিসেবে তুলে ধরাই এ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ১৯-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হলে সেগুলোও জামায়াত সফল করবে। জানা যায়, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এ মুহূর্তে শক্ত কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে জামায়াত। দলের 'সাংগঠনিক পক্ষকাল' চলায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা তালিকা ও ভিডিওচিত্রসহ চলবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারবিরোধী প্রচার। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস, মিশনগুলোর সামনে চলবে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। একটি অসমর্থিত সূত্রমতে, এরই মধ্যে বিদেশ সফররত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের হাতে তালিকা পেঁৗছে গেছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলটির তিনটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক শাখা একযোগে কাজ শুরু করেছে। শাখাগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও মক্কা-মদিনা শাখা। জানা যায়, ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে 'সাংগঠনিক পক্ষকাল'। চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নির্বাহী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দায়িত্বশীলরা সারা দেশ সফর করছেন। জেলার দায়িত্বশীলরা উপজেলায় এবং উপজেলার নেতারা ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে গিয়ে এ কর্মসূচিতে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। চলমান এ কার্যক্রমে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ, তাদের প্রশ্নের উত্তরসহ স্থানীয় মামলাগুলো পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যে উপজেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হবে। এদিকে, দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠিত হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি আতিকুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। ২৭ জানুয়ারি গঠিত হয়েছে জামায়াতের ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটি। জান্নাতুল কারীম সুইটিকে সভাপতি ও রেহানা সুলতানাকে সেক্রেটারি জেনারেল করে এ কমিটি হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.