সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! গতকাল রাত থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। হিমুর মন খারাপ। শুধু খারাপ বললে কম ই বলা হয়। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ছেলে মানুষের মন খারাপের কথা কাওকে বলতে নেই।
এটাই নিয়ম। নিয়ম ভঙ্গ করে হিমুর সবাইকে ডেকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে আমার মন খারাপ। আমার খুব মন খারাপ।
ছোট রুমটার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বই।
হিমুর একসময় বই পড়তে ভাল লাগতো।
নেশা ছিল একটাই। নতুন বই এর ভেতর নাক গুঁজে বসে থাকা। শ্যামা দেখে খুব হাসতো। আর কদিন পর পরই নতুন বই কিনে এনে হাতে ধরিয়ে দিত হিমুর এই পাগলামীটা দেখার জন্য। শ্যামা একটা পাখির নাম।
হ্যা পাখিই তো। শ্যামার শুধু ডানাই ছিলনা। তবুওতো তাকে সমগ্র পাখির প্রতিক হিসেবেই হিমু দেখেছে আজীবন। অবশ্য আজীবন বললে খুব বড় বড় শোনায়। তার আর বয়স কত!
ঠিক আজকের মত তার মন খারাপ গত দু বছর আগে একবার হয়েছিল।
প্রচন্ড খেটে খুটে পরীক্ষা দেবার পর যখন হিমুর মেডিকেলে চান্স হলনা।
আর এখন যে সে মেডিকেলের প্রথম বর্ষের ছাত্র এতেও হিমু অবাক হয়না। সে সময় পুরো একটা বছর হিমুকে সাহস জুগিয়ে গেছে শ্যামা। সেই পাখিটা। সেই মিষ্টি পাখিটাই শ্যামা।
আব্বু তো সরাসরিই বলেছিলো তোমাকে দিয়ে হবেনা। ভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে যাও। পরের বার ট্রাই করবা না হলে দরকার নাই। কিন্তু হিমুর জেদ ছিল। হিমুর এখনো মনে হয় ডাক্তারের অবহেলাতেই মারা গেছে তার মা।
বৃষ্টির ছাঁট আসছিলো জানালা দিয়ে। হিমু উঠে গিয়ে কাঠের পাল্লাটা শক্ত করে লাগালো। এ ঘরে আর বৃষ্টি নাই আসুক। আজ হিমু কাঁদবে। খুব কাঁদবে।
এ কান্নার কথা কোনদিন কাওকে বলা যাবেনা্ কারন পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই। এটাও নিয়মের বাইরে!
আচ্ছা হিমু কি সত্যিই এই দিনটির কথা জানতোনা? এরকম একটা দিন আসবে। খুব অপেক্ষাও কি ছিলনা তার গোপন মনে?
গত রাতে শ্যামার বিয়ে হয়েছে। খুব খাটুনি গেছে হিমুর। মন খারাপ করার সময় ও পায়নি।
এই যে এখন তার শ্যামার জন্য মন খারাপ। খুব আদর করে একটা পাখি বলে শ্যামাকে ভাবছে এই ভাবনাটার কথা হিমু কোনদিন বলতেই পারেনি। তাহলে আর এর চে বেশি কি হত!
হিমুরা যেদিন প্রথম এই বাসায় আসে সে সময় গুলো ছিল অন্যরকম। হিমু ছটফটে এক কিশোর। চার বছরের বড় শ্যামাকে দেখেই সে আম্মু আব্বুর সামনে বলেছিলো, এই যে শোনো, আমি এত সুন্দরী কাউকে আপনি বলতে পারবোনা।
আপুও বলতে পারবোনা। আচ্ছা আম্মু বলতো, বিয়েতে শুধু ছেলেরা বড় হবে আর মেয়েরা ছোট এরকম কেন?
আব্বু হাসতে হাসতে উঠে গিয়েছিলো। আর আম্মু বলেছিলো, মার খাবি হিমু। এসব কি!
হিমু ছড়ানো বই গুলোকে গুছিয়ে গুছিয়ে কাছে টানতে গিয়ে টের পেল শ্যামা তাকে দূর্দান্ত ভারী একটা জীবন দিয়ে গেছে! বিকেলে রিভোট্রিলের একটা পাতা নিয়ে এসেছে। সে জানে মাত্র দশটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে কেও মরেনা।
তবু কেন যেন তার সাহস হচ্ছেনা। অথচ শ্যামাকে জানানো খুব জরুরী তার জন্য মরে যেতে ইচ্ছে করছে আজ হিমুর।
কোন একটা উপন্যাসে হিমু পড়েছিলো মৃত্যুর আগে মানুষের চোখ নাকি চকচক করে ওঠে যদি সে মাতাল হয়! যখন সে ঘুমে ঢলে পড়বে তখন তার চোখ চকচক করবেনা, যদিও সে মাতাল ঘুমে তখন। আব্বু কেমন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে যখন শুনবে। আর আম্মুকে যেদিন মাটি দিয়ে এলো হিমু ,সেদিনের পর থেকে সে অসংখ্য বার স্বপ্নে দেখেছে সে মরে গেছে।
আর আব্বু ব্যাকুল হয়ে তার খাটিয়া ধরে কাঁদছে। স্বপ্নটা সে যতবার দেখেছে ততবারগলার কাছে প্রচন্ড কান্না নিয়ে তার ঘুম ভাঙে। আব্বুর জন্য প্রচন্ড কষ্ট হয়।
আচ্ছা! মৃত্যুর পরে যদি সত্যিই জগত থাকে তবে আম্মুর তো খুশিই হবার কথা। ওহ কি যে সব ভাবছে হিমু।
এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব।
শ্যামা কি তার ছিমছিমে পাখির মত শরীরটা নিয়ে উড়ে আসবে তার কাছে? কোলের উপর মাথাটা তুলে নিয়ে নায়িকাদের মত বলবে তুই এত বোকা কেন হিমু?
নাহ নায়িকারা এভাবে বলেনা। নায়িকারা বলে আমাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারোনা। কিছুতেই যেতে পারোনা।
গতকাল রাতেই কি হিমুর উচিত ছিল না সমস্ত হলুদের ফুল ছিঁড়ে ফেলে দেয়া? কেন শ্যামা সাজবে্ কেন শ্যামা অন্যের জন্য হলুদের পিঁড়িতে বসে থাকবে লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে!
কেন শ্যামার মনে হলনা সেদিনের কথা? আঠারো তম জন্মদিনে যখন শ্যামা এসে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
আর জিজ্ঞেস করলো হিমু আমার কাছে কি চাস বল? হিমু বসে বসে তখন তার হাতটা ধরে বলেছিলো শুধু চাই তুমি আমাকে বলো, হিমু আমার জন্য একশো একটা নীলপদ্ম এনে দাও!
শ্যামা হাত ছাড়িয়ে খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে গেল আর বললো তোর পাগলামী কমবেনা হিমু?
ঠিক আছে তখন না হয় পাগলামীই ছিল। আর গত দুটো বছর যে হিমু উন্মাদের মত ভেতরে লালন করছে বয়সে বড় এই মেয়েটির জন্য অসম্ভব ভালবাসা, সে কিছু না? এর জন্য কি শ্যামার মমত্ব দায়ী না? এত কেয়ার কোন মানুষ করে?
হিমু যখন এক সপ্তাহ আগে শ্যামাকে গিয়ে বললো, তুমি আমাকে বোঝো? তোকে আমি বুঝি হিমু। বলেই চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো শ্যামা। হিমু খেপে গিয়ে বললো এটা কি হল? আমি কেবল চুল আঁচড়িয়ে ভদ্র হয়ে তোমার সামনে এলাম! শ্যামা খুব হাসলো।
তুমি আমাকে কচু বোঝো শ্যামা পাখি।
তুমি বুঝলে আমার একা হয়ে যাওয়ার কষ্ট টা টের পেতে। কেন বোঝো বলে বড়াই দেখালে।
কিছুই বোঝোনা আমাকে।
হাতে এক গাদা স্লিপিং পিল নিয়ে বসে থাকার মজাই আলাদা। এমনিতেই ঘোর ঘোর লাগে।
স্টিরিওতে খুব জোরে জোরে বাজছে, চলে যদি যাবি দূরে স্বার্থপর,আমাকে কেন জোছনা দেখালি...
হবি যদি নাও ভাসিয়ে দেশান্তর, পাথরের বুকে ফুল কেন ফোটালি!
বাইরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে! খুব বৃষ্টি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।