রহস্য
হ্যাঁ, এমনটাই সত্যি হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণার কল্যাণে। গত বৎসরের মার্চের দিকে আমরা বেশ কিছু ইলেকট্রকনিক্স যন্ত্রপাতির অগ্রগতি দেখেছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তারবিহীন সেন্সরের মাধ্যমে ফসলের উন্নতিসাধন। জমিতে ফসলের সাথে চাষযোগ্য এই সেন্সরটি মাটির সমস্ত গুনাগুণ, আদ্রতা-তাপমাত্রার তথ্য তারবিহীন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সার্ভারে পৌছে দেয়। ফলে সময়মত প্রতিকার নেওয়াও সম্ভব হয়।
আর এই প্রযুক্তিটি আমাদের কাছে এমন একটি আর্শীবাদ হয়ে এসেছে যখন পুরো বিশ্বের সমস্ত কৃষকরাই চাচ্ছিল কীভাবে পানি সেঁচের পরিমাণ কমিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের মাটিতে এই সেন্সরটির গুণাবলি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, নিম্ন-উৎপাদন ব্যয়, কম বিদ্যুৎ খরচ সহ সবই হাতের নাগালে এবং সেই সাথে বছরের পর বছর কোনো ধরনের জোড়াতালি ছাড়াই ব্যবহারযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক চুয়াং ওয়াং বলেন, এরা তথ্য আদান প্রদান করার জন্য রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। আর যখন জমির মাটি চাষের জন্য ট্র্যাক্টর চালানো হয় তখন এর মধ্যে বিশেষভাবে স্থাপিত এক ধরনের আরএফআইডি রিডার যা তথ্য গ্রহণ করে প্রতিটি নোডেই সামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এতে করে এর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও সুনিশ্চিত থাকে।
মিডওয়েস্ট কর্ন বেল্টে অবস্থিত নেবরাস্কা লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনএল) আরেকদল গবেষক ওয়াং এর এই ধারণাটির বাস্তব ভিত্তি দেওয়ার কাজে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। তারা তারবিহীন যে সেন্সরটি ব্যবহার করেছেন তার মাধ্যমে একটি বেজ স্ট্যাসনে মাটির সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করে রাখেন। তারপর তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখেন ঠিক কতটুকু পানি লাগবে বা পরবর্তী পদক্ষেপ কী ধরনের নিতে হবে। ইউএনএল এর প্রধান গবেষক মেহমেত কেন ভুরান বলেন- এতে করে জমির উৎপাদন খরচ যেরকমভাবে কমবে ঠিক একইভাবে ফসলের প্রজনন ক্ষমতাও বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন- “টিএল ইরিগেশন” নামক এক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুত কারকের সাথে তারা পুরো প্রজেক্টির বাণিজ্যিক উৎপাদনেও হাত দিয়েছেন।
কেন ভুরান আরও বলেন- “আমরা এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের উপর কোনো ধরনের পার্শপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করেই উৎপাদন ক্ষমতা ৩০% থেকে ৪০% বাড়াতে পারি। কারণ অতিরিক্ত পানি ফসলের জন্য ক্ষতিকর। আর তা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ দেওয়া যায়, তাহলে নিচ্চিতভাবেই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। ”
কেন ভুরান বলেন- এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের মূল চালিকা শক্তি হলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। প্রতি নিয়তই জনসংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না আবাদী জমির পরিমাণ। ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাবার চাহিদা বেড়েই চলছে। তাই প্রয়োজন খাবার চাহিদা মেটানোর নতুন সব প্রযুক্তির উদ্ভাবনের। আশা করা যায়, ২০৫০ সালের মাঝে পৃথিবীর ফসল উৎপাদন ক্ষমতা ৪০% পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তিনি আরও যোগ করেন – “আপনি দেখুন, যদি আমরা কৃষি খাতে পানি ব্যবহার সীমার দিকে তাকাই, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে, এই খাতেই আমরা আমাদের বিশুদ্ধ পানির ৭০% ভাগ খরচ করে ফেলি।
আর ভবিষ্যতের কথা বললে তো তা হবে আরও দ্বি-গুণ। তাই পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদেরও একই কথা, মূলত তারা কম পানিতে অধিক ফসল পেতে আগ্রহী। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।