আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করুন, নয় ছাত্র সংসদ নির্&#

১. স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন আয়োজিত মরহুম সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ পিনপতন নীরবতার মধ্যে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মরহুম আবদুর রাজ্জাক তাকে একবার মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে সংগঠনের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা আবদুর রাজ্জাকের কাছে তিন মাসের পাওনা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। সে সময় আবদুর রাজ্জাক লজ্জিতভাবে অতি বিনয়ের সঙ্গে বাড়িওয়ালাকে বলেছিলেন, আমি আজকেই আপনার ভাড়া দিয়ে দেব, আপনি কিছু মনে করবেন না। সেখান থেকে বাড়িওয়ালার চাপের মুখে আবদুর রাজ্জাক তার অনুজপ্রতিম তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে ছুটে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে। আবদুর রাজ্জাক বেগম মুজিবের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে ফিরে এসে বাড়িওয়ালার কাছে বাড়িভাড়ার সমুদয় টাকা বুঝিয়ে দেন এবং বাকিটা সংগঠন ও কর্মীদের পেছনে ব্যয় করেন। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগ বলে একটি শাখা রয়েছে এবং সেখানে টেন্ডার নিয়ে অর্থ ভাগাভাগি বা আধিপত্য বিস্তার হয় তা তাদের জানাই ছিল না। কোনো ছাত্র সেখানে মাথা ঘামাত না, ছাত্র নেতা-কর্মীরা দূরের কথা। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিলেন, আজকের জমানায় কোনো ছাত্রনেতার কাছে এভাবে বাড়িওয়ালা চাপ দিয়ে ভাড়া আদায় করতে চাইলে দলবল নিয়ে তাকে উত্তমমধ্যম দেওয়া তো হতোই, আরও কত কী লঙ্কাকাণ্ড ঘটানো হতো। সেদিনের সভার সবাই মাথা নেড়ে আফসোসের সঙ্গে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন।

সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী ষাটের দশকে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সেই সময় আবদুর রাজ্জাক দুবার ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদের পরে তোফায়েল আহমেদ ডাকসু ভিপি ও ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন। সত্তরের নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। সে সময় আ স ম আবদুর রব ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে ডাকসুর ভিপিও হয়েছিলেন। শাজাহান সিরাজ নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন আ স ম রবের সঙ্গে ডাকসুর জিএস। ষাটের ছাত্র রাজনীতির শুরুতেই ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তার কারাগারের দিনগুলো নিয়ে লেখা বই প্রকাশের অর্থ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আনন্দের সঙ্গে ভাগাভাগি করে কাপড়-চোপড় বানিয়েছিলেন এবং বিরানি খেয়েছিলেন। ষাটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান, কর্মীরা তাকে দাদাভাই বলতে পাগল ছিল। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও মেধায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তিনিসহ অন্য নেতাদের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক।

ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে জ্ঞানে গরিমায় ছিলেন সমৃদ্ধ। তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ডাকসুর জিএস হিসেবে ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানে নাজিম কামরান চৌধুরীর মতো প্রজ্ঞাবান, মেধাবী, সৃজনশীল নেতাকে দেখা গেছে। সেই ষাটের ছাত্র রাজনীতিতে ঊনসত্তর ইতিহাসের ক্যানভাসে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে। ঊনসত্তর বাঙালি জাতির নেতৃত্বের আসনে বঙ্গবন্ধুর অভিষেকই ঘটায়নি, তোফায়েলের হাত ধরে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসকেও সোনার হরফে লিখে গেছে। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় উঠে এসেছে। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলীদের নাম বর্ণময় হয়েছে। মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান ষাটের শুরুতে আইয়ুব খানের দমননীতির জমানায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মেধা ও সাহসিকতায় উচ্চারিত হয়েছে শেখ ফজলুল হক মণির নাম। সেই ষাটের ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অভিষিক্ত না হলেও আমির হোসেন আমু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাজী আরেফ আহমেদদের অবদান ও ভূমিকা খাটো করে দেখা হয় না। সেই ষাটের উত্তাল ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে কাজী জাফর আহমদ, কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ, হায়দার আকবর খান রনো, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, শামসুদ্দোহা, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোস্তফা জামাল হায়দারসহ অনেক নাম উচ্চারিত হয়। সেই ষাটের ছাত্র রাজনীতির নেতারা এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও বর্ণময় করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেকেই ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে আছেন। সেসব ছাত্রনেতার প্রতি সেদিনের ছাত্রসমাজই আনুগত্য প্রকাশ করেনি; সম্মান ও শ্রদ্ধায় দেশের মানুষও আবেগাপ্লুত হয়েছে। বাসে, ট্রেনে, খেয়ে না খেয়ে, কষ্ট করে জেল-জুলুম সয়ে আদর্শবোধ নিয়ে তারা সংগঠন ও মানুষের জন্য যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন। লেখাপড়ায়, শিক্ষা-দীক্ষায়, আদবকায়দায়, নেতৃত্বের গুণাবলিতে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

মত ও পথ যাই হোক, কী কাজী জাফর আহমদ, কী নূরে আলম সিদ্দিকীর বক্তৃতায় পল্টন থেকে গ্রামীণ জনপদ উত্তাল হয়ে যেত। মতিয়া চৌধুরীকে অগি্নকন্যা বলত। তোফায়েল আহমেদের মতো নায়কোচিত ঊনসত্তরের নেতাকে একনজর দেখতে নারী-পুরুষ ছুটে যেত। একজন আবদুর রাজ্জাক বা একজন সিরাজুল আলম খানের মতো নেতা এ দেশের ছাত্র রাজনীতিতে আর কোনো দিন আসবে না। তাদের উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে স্বাধীনতা-উত্তরকালে ছাত্র রাজনীতিতে নানা মত-পথে উঠে এসেছিলেন ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শেখ শহিদুল ইসলাম, আ ফ ম মাহবুবুল হক, শফিউল আলম প্রধান, মনিরুল হক চৌধুরী, মাহবুব উজ জামান থেকে ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, ওবায়দুল কাদের, বাহলুল মজনুন চুন্নু, ফজলুর রহমান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, আবদুল মান্নান, ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো নেতারা। শুধু ডাকসু বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেই নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও অভিষেক ঘটেছিল মেধাবী, দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতাদের। ছাত্রদলের রাজনীতিতেও সর্বশেষ ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমান এবং রাকসু থেকে ফজলে হোসেন বাদশা, বজলুর রহমান ছানা, জাহাঙ্গীর কবির রানাদের উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে উঠে এসেছিলেন রাগিব আহসান মুন্না, রুহুল কুদ্দুস বাবু, রিজভী আহমেদের মতো নেতারাও।

২. ছাত্র রাজনীতির সেকালে নেতা-কর্মীরা খেয়ে না খেয়ে নিজেদের পকেটের টাকা বাঁচিয়ে এমনকি সংগঠনের মুরুবি্ব নেতাদের অনুদান শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাসার দান নিয়ে নিজেরা পোস্টারিং, লিফলেটিং, চিকা মারা, মাইকিং, সমাবেশসহ সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করতেন। গণসংগঠনের নেতারাও দুর্নীতি বা অবৈধ টাকায় বিত্ত-বৈভব গড়তেন না। এখন গণসংগঠনের নেতাদের অনেকেই বিত্ত-বৈভব, বিলাসিতায় আকৃষ্ট হচ্ছেন, অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতিতে নেমে এসেছে মূল্যবোধহীন অবক্ষয়, ভোগ-বিলাস, মাস্তানি, খবরদারি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ অপরাজনীতির ঘোর অন্ধকার। এখন আর সেকালের ছাত্র রাজনীতির মতো ছাত্র সংগঠনগুলোয় আদর্শের কোনো প্রাণসঞ্চার নেই। এখন আর ছাত্র সংগঠনগুলোয় বই পড়ুয়া ছাত্র নেতা-কর্মী নেই। আসাদুজ্জামান নূরের মতো অভিনেতা বা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার মতো যোদ্ধা ও চিত্রনায়ক নেই। মাহবুবুল মোকাদ্দেস আকাশ, আলী রিয়াজ বা আবদুল মালেক রতনের মতো কোনো তার্কিক নেই। কোনো গানের শিল্পী নেই। আল মুজাহিদী থেকে জাফর ওয়াজেদ বা কামাল চৌধুরী অথবা মোহন রায়হানের মতো কবিরা নেই। এখন আর রংতুলিতে চিকা মারা, পোস্টার-আলপনা অাঁকার কর্মী নেই। এখন আর ভরাট কণ্ঠের মাইকিং করার কর্মী নেই। সব ভাড়ায় চলে। টেন্ডারবাজির টাকা, চাঁদাবাজির টাকায় সম্মেলন হয়। তোরণ হয়। ছাত্রসমাজের মুখ আলো করা কোনো ছাত্রনেতা পাওয়া যায় না।

সেকালের ছাত্র রাজনীতি যদি হয় খরসে াতা নদীর নাম, একালের ছাত্র রাজনীতি শুকিয়ে যাওয়া বন্ধ্যা আবর্জনাময় খাল মাত্র। সেকালের ছাত্র রাজনীতিতে আদব-কায়দা, আশরাফ-আখলাক, পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধার যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বলয় তৈরি হয়েছিল, তা এখন নির্বাসিত। বেয়াদবি, মাস্তানি এখন ছাত্র রাজনীতির বড় গুণ। সেকালের ছাত্র রাজনীতিতে সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনের মিছিলে উত্তাল থাকত শিক্ষাঙ্গন। একালের ছাত্র রাজনীতিতে যখন যে দল ক্ষমতায় তাদের লাঠিয়াল হয়ে অনুগত ছাত্র সংগঠনের অছাত্র কর্মীরা চর দখলের মতো আধিপত্য বিস্তার করে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। প্রতিপক্ষের কোনো ঠাঁই নেই, জায়গা নেই। সেকালের ছাত্র রাজনীতিতে মেধা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতার ক্যারিশমায় নেতৃত্ব নির্বাচন হতো সংগঠনে সংগঠনে। এখন সংগঠনও নেই, যা আছে তাতে যে যত বড় আধিপত্য বিস্তারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের বা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক সে-ই নেতা। সেকালের ছাত্র রাজনীতির জমানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও উপাচার্যরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞানে-গরিমায় অভিভাবকত্বের জায়গায় বাস করতেন। ক্যাম্পাসগুলোকে মেধা ও মননশীলতার মন্দির বানাতেন। শিক্ষক-উপাচার্যরা রাজনৈতিক দল থেকে নিজেদের অবস্থান নক্ষত্রের মতো দূরে রেখে আলো ছড়াতেন। এখনকার শিক্ষক-উপাচার্যরা রাজনৈতিক দলের অনুগত দাস। দলকানার মতো রাজভিখিরির বেশে দলীয় নেতাদের বাড়ি বাড়িই নয়, পদ-পদবি পেতে ও টিকিয়ে রাখতে অযোগ্য, অছাত্র ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পেছনে পেছনেও হাঁটেন। যখন যে দল ক্ষমতায় ক্যাম্পাস হয়ে যায় সেসব দলদাস শিক্ষক-ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রকদের পৈতৃক ভূমি। মেধা ও মননশীলতায় এগিয়ে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন আর ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখায় না। তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে চলমান ছাত্র রাজনীতির পদ্ধতিতে কোনো ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে পথ হাঁটলে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ হওয়া যায়, বই পড়ুয়া রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো হওয়া যাবে না, তোফায়েলের মতো মঞ্চশোভিত নেতাও হওয়া যাবে না। সেকালের ছাত্র রাজনীতি ছাত্রসমাজকে আলোর পথে টেনে নিয়ে যেত। একালের ছাত্র রাজনীতি অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যায়। সেকালের ছাত্র রাজনীতিতে কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত হতো নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে। একালের ছাত্র রাজনীতিতে নিয়মিত সম্মেলন দূরে থাক, কমিটি বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসায় অছাত্ররা হাতিয়ে নেয় সংগঠনের মালিকানা। এলাকায় এলাকায় প্রকৌশল দফতর থেকে হাট, মাঠ, ঘাট ইজারা নেওয়াসহ চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি এমনকি এমপিদের আনুগত্য পেলে টিআর, কাবিখার অংশ লুটে নিয়ে চলে যায়। সেকালের ছাত্র রাজনীতির নেতারা বাসে-ট্রেনে কষ্ট করে ট্যুর প্রোগ্রাম করতেন। ক্যাম্পাস, কলেজে, হলে হলে, পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় সংগঠকদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আদর্শ প্রচার করতেন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নিয়মিত মিছিল, সমাবেশ, নবীনবরণ লেগে থাকত। একালের ছাত্র রাজনীতিতে বিমানে চড়ে নেতা যান, পাজেরো নিয়ে কর্মীরা বরণ করে আলিশান হোটেলে তোলেন। খরচের বাহার, নমুনাই অন্যরকম। এই নষ্ট রাজনীতি মানুষের জন্য এখন অভিশাপ। সেকালের ছাত্র রাজনীতি ছিল দেশ ও মানুষের জন্য আশীর্বাদ। একালে ছাত্র রাজনীতিতে নাম লেখালে বিশেষ করে যখন যারা ক্ষমতায় তাদের সঙ্গে থাকলে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যাচ্ছে। একালের ছাত্র রাজনীতি হলে হলে সাবসিডি বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে; ছাত্রবেতন, বই-খাতার দাম কমাতে হবে, কমাতে হবে স্লোগান তোলে না। পোস্টার করে না। এসব যেন সেকেলে ব্যাপার-স্যাপার। সেকালের ছাত্র নেতা-কর্মীদের দেখলে মানুষ সম্মান করত, ভালোবাসায় কাছে টানত। একালের ছাত্র নেতা-কর্মী দেখলে মানুষ ভয় পায়, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে হাঁটে।

৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিহার ক্যাম্পাসে তারুণ্যের সাতটি বছর কাটিয়েছি। কী সুন্দর রোমান্টিক ক্যাম্পাস! প্যারিস রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাতের ক্যাম্পাসকে রহস্যময় মনে হতো। উপাচার্য অধ্যাপক রকিব উদ্দিন ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য গাছের ছায়ায় ছায়ায় বেঞ্চ বসিয়েছিলেন। উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ আহমদ কর্মচারী-ছাত্রছাত্রীদের কাছে হাত পেতে শাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্যটি দিয়ে ক্যাম্পাসকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করে এসেছেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে সন্তানের মতো ছাত্রদের বাঁচাতে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার গুলিতে নিহত শহীদ শামসুজ্জোহা প্রশাসনিক ভবনের সামনেই চিরনিদ্রায় শায়িত। সেই বীর শিক্ষকের আদর্শ এখনকার দলদাস শিক্ষকরাও লালন করেন না, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাও নন। সেই মতিহারে ছাত্র রাজনীতির মিছিলে অগ্রভাগেই ছিলাম। আদর্শবোধ বুকে নিয়ে মিছিলে মিছিলে ক্যাম্পাস থেকে হলে হলে ঘুরেছি অনেক। সেই মতিহারে বাবলাতলা, আবুর ক্যান্টিন, রেলস্টেশন জীবনের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠেছিল। সেই সময় যারা ছাত্র রাজনীতি করতেন মফস্বলে তাদের হাতে থাকত কবিতার পাণ্ডুলিপি, ক্রিকেটের ব্যাট। ফুটবলের মাঠও তারা মাতিয়ে রাখতেন। একালের অভিশপ্ত ছাত্র রাজনীতিতে তাদের হাতে শুধুই অর্থ, অস্ত্র আর মাদকের ছড়াছড়ি। ভাই হয়ে ভাইয়ের ওপর, বোনের ওপর হামলা করছে। খুন-খারাবিতে মত্ত হচ্ছে। এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র উঁচিয়ে কখনো নিজ সংগঠনের সতীর্থদের ওপর, কখনো বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করছে। গুলি করছে। ছাত্র রাজনীতির নামে কখনো সরকারের লাঠিয়াল, কখনো ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সরকারের প্রতি আজ্ঞাবহ প্রশাসনের ভাড়া করা মাস্তানের মতো অধিকার আদায়ের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর দানবের রূপ নিয়ে হামলা চালাচ্ছে।

সর্বশেষ সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উত্তাল আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীরা পুলিশের সঙ্গে হামলা চালিয়েছে। কথা ছিল ছাত্র রাজনীতির মৌলিক অবস্থান থেকে নীতিগতভাবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানানোর। রাজশ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.