যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কির খুনিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাদের হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন। মূল হোতারা বিদেশে অবস্থান করলেও নতুন মিশন বাস্তবায়নে দেশে উড়িয়ে এনেছেন পলাতক ছয় পেশাদার কিলারকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মিল্কির পর তাদের নিশানায় এবার ক্ষমতাসীন দলের একটি অঙ্গ-সংগঠনের প্রভাবশালী দুই নেতা।
এদিকে এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কিলিং মিশনের ছয় কিলারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের পাকড়াও করতে মাঠে নেমেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
জানা গেছে, দেশ ফেরত কিলাররা দিনে খিলগাঁও এবং রাতে বাড্ডা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ-সংগঠনেরই এক নেতা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে। সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। র্যাব কোনো সন্ত্রাসীকেই প্রশ্রয় দেবে না।
সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সবটুকু উজাড় করে দিতে র্যাব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গোয়েন্দা সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শপথ নেওয়ার রাতেই দেশত্যাগ করে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান মিল্কি হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান ওরফে রফিক। নির্বাচনের আগে সরকার দলীয় একজন এমপি এবং যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদে রফিকের সমর্থকদের শোডাউনে বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। কেবল ফার্মগেট, তেজগাঁও কিংবা মগবাজার এলাকা নয়, রীতিমতো স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসার সামনেই ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ঢেকে দেন রফিক। রফিকের দেশত্যাগের পরদিন থেকেই তার সাম্রাজ্য দখলে নেন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা কাজল।
অন্যদিকে মিল্কি হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জাহিদ সিদ্দিকী তারেক নিহত হওয়ার পর মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন সম্রাট ও যুবলীগ নেতা খালিদ। জানা গেছে, হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য থাইল্যান্ডে বসে যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফকে সঙ্গে নিয়ে আবার কিলিং মিশনের নীলনকশা আঁকছেন রফিক। এ বিষয়টি অাঁচ করতে পেরে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সম্রাট ও খালিদ। ইতোমধ্যেই বিষয়টি অবহিত করেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের।
এদিকে রফিক-আরিফের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে মাঝেমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে থাইল্যান্ড আসা-যাওয়া করছেন মিল্কি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল।
ভ্রমণের দোহাই দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে থাইল্যান্ড পাড়ি জমান যুবলীগ নেতা আনিস। সেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে দেশে ফিরে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়াচ্ছেন আনিস। ভারত-পলাতক আরিফ মাঝেমধ্যে দেশে ফিরলে তাকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন আনিস। সম্প্রতি তাকে গ্রেফতারের দাবিতে পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল্কি হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে রফিকের নাম বাদ দিতে জোর তদবির রয়েছে তদন্ত সংস্থার কাছে।
মূলত রফিকের কারণেই এই চার্জশিট দিতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সূত্রে জানা গেছে, ভারত-ফেরত ছয়জনের মধ্যে শাজাহানপুরের মাসুম ইকবাল ও খিলগাঁওয়ের রানা মোল্লার নাম জানা গেছে। হত্যা, অস্ত্রসহ অন্তত সাতটি মামলার পলাতক সন্ত্রাসী মাসুম ইকবাল সর্বশেষ ২০০৫ সালে ব্যবসায়ী একেএম শরীয়তউল্লাহ বিল্লাহ হত্যার অন্যতম প্রধান সন্দেভাজন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কিছুদিন দেশে থাকলেও গত ওয়ান-ইলেভেনের পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সম্প্রতি রফিক-আরিফ সিন্ডিকেট মিশন বাস্তবায়নের জন্য তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করতে সবসময়ই তৎপর থাকে ডিএমপি। এক্ষেত্রে কোনো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দেশে ফেরার সুযোগ নেই। এরপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।