২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের ধরিয়ে দিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। জজ মিয়া নাটক করেই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুরস্কারের সেই কোটি টাকা লোপাট করা হয়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুনের ঘটনায় দারোয়ান এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন বিগত মহাজোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এনামুলকে র্যাব গ্রেফতার করে। কিন্তু পুরস্কারের সেই ১০ লাখ টাকার হদিস নেই।
বিভিন্ন সময়ে আসামি ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুরস্কার ঘোষণার পরেও পুরস্কার না পাওয়ার নজির রয়েছে বহু। পুরস্কার ঘোষণা প্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সেই পুরস্কারের টাকা কোথায় যায়, কারা নেয়, তা কেউ বলতে পারে না। তবে অনেকেই পুরস্কার ঘোষণাকে স্ট্যান্টবাজি মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কাজে গতিশীলতা আনা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়ে থাকে। ঘোষণা দিয়েও পুরস্কার না দিলে সেই গতিশীলতা আসবে না। র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের লুটের টাকা উদ্ধার করল র্যাব। এ ছাড়া বহু বড় বড় ঘটনার তদন্তে সাফল্যও পেয়েছে। কোনো ঘটনারই পুরস্কৃত করা হয়নি।
তবে অপর একটি সূত্র বলেছে, এনামুলকে দিয়ে তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে পুরস্কারের টাকা দেওয়া হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো না কোনো তথ্য সূত্রের মাধ্যমে পুলিশ নাশকতার আসামিদের গ্রেফতার করে। কিন্তু নাশকতার আসামি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হয় না। পুরস্কার জনগণের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বলে বলা হলেও, প্রাপ্ত তথ্য পেতে পুলিশকে বিভিন্ন মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
অথচ দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কারের টাকা হাতিয়ে নেন তিন পুলিশ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর গ্রেনেড হামলাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন জজমিয়া নাটকের তিন কুশীলব বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান। এরা তিনজনই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। যোগাযোগ করা হলে, ঘটনার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির আবদুল কাহহার আকন্দ বলেন, টাকা লোপাটের ঘটনাটি জজমিয়া নাটকের পর ঘটে। তবে আমার তদন্তটি ছিল সর্বশেষ।
পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল আসামিকে গ্রেফতারকারীর জন্যই। সেই হিসাবে জজমিয়ার নাটক করে ওই সময়ের কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ করেছিলেন। যে কারণে সেই পুরস্কারের টাকা ওঠানোর সুযোগ হয়েছিল তাদের। সূত্র জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এক কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণার পরই তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা জজমিয়া নাটক তৈরি করতে থাকেন। জজমিয়াকে নাটের গুরু সাজিয়ে প্রতি মাসে তাদের পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দিতে থাকে সিআইডি।
এদিকে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং জজমিয়াকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করিয়ে নেওয়া হয়। সূত্র জানায়, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান এ তিন কর্মকর্তা সরকারের ঘোষিত কোটি টাকার পুরস্কারের দাবিদার হয়ে ওঠেন। তারা সরকারের সেই পুরস্কারের কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
এনামুল গ্রেফতারে ১০ লাখ টাকা
২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘোষণা দেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনির হত্যারহস্য উদঘাটিত হবে। তিনি ৯ অক্টোবর সাগর-রুনির ভাড়া বাসার দারোয়ান এনামুলকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
এরপর ২৩ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেছিলেন, দারোয়ান এনামুলকে ধরতে পারলেই এ খুনের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি র্যাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে এনামুলকে গ্রেফতার করার কথা জানায়। কিন্তু র্যাব পুরস্কারের সেই ১০ লাখ টাকা পায়নি। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা দায়িত্ব বলেই মনে করি আমরা। তাই পুরস্কারের টাকার বিষয়টি নিয়ে কখনো চিন্তা ভাবনায় আসে না।
এনামুল গ্রেফতারের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষিত ১০ লাখ টাকা পুরস্কার র্যাব পায়নি বলে জানান তিনি।
নাশকতাকারীদের ধরতে লাখ টাকা
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নাশকতাকারীদের ধরতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে গত বছর ডিসেম্বরে। পুরস্কার ঘোষণার পর বেশ কয়েকজন নাশকতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুরস্কার দেওয়া হয়নি কাউকেই। ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে গত ডিসেম্বরে লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ওই ঘোষণাটি ছিল শুধু জনগণের জন্য। পুলিশ বাহিনীর জন্য নয়। পুরস্কার ঘোষণার পর নাশকতাকারী বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হলেও পুরস্কারের দাবি নিয়ে কেউ কখনো আসেননি। তিনি বলেন, কেউ সহযোগিতা করলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুলিশ সেই পুরস্কার অবশ্যই দেবে। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরতে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সাল এবং পরে ২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সরকার।
প্রথম দফায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আকরাম হোসাইন এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেন। পুরস্কারের টাকাও সেই সময়ে পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।